Farmers Protest

ফোন-লাইন কেটে, ব্যারিকেড গুঁড়িয়ে এগোচ্ছেন কৃষকরা

অমরেন্দ্র এ দিন কষকদের অনুরোধ করেছেন, এ সব না করতে। কারণ এতে সাধারণ মানুষেরই হেনস্থা বাড়বে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৫৯
Share:

উত্তরাখণ্ডের উধমসিংহ নগর জেলার বাজপুরে ট্র্যাক্টর দিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড সরাচ্ছেন প্রতিবাদী কৃষকেরা। শুক্রবার। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

মোবাইল পরিষেবার লাইন কেটে, লোহার ব্যারিকেডের উপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে দিয়ে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন পালন ভেস্তে দিয়ে কৃষকরা এখন মোদী সরকারের তিন কৃষি আইন রুখতে মরিয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য আজও আলোচনায় বসে সব মিটিয়ে ফেলার কথা বলে গিয়েছেন।

Advertisement

অম্বানী-আদানিদের স্বার্থে মোদী সরকার তিন কৃষি আইন এনেছে, এই অভিযোগ তুলে কৃষক নেতারা সেই কর্পোরেট সংস্থাগুলিকেও বয়কটের ডাক দিয়েছে। রিলায়্যান্সের মল, পেট্রল পাম্প, আদানি গোষ্ঠীর পণ্য বয়কটের সঙ্গে রিল্যায়্যান্সের জিয়োর মোবাইল সংযোগ ছেড়ে দেওয়ারও ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। তারই জেরে জিয়ো-র মোবাইল টাওয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া শুরু হয়। পঞ্জাব জুড়ে বিক্ষোভের এই বহিঃপ্রকাশ বাড়তে থাকায় পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহকে আজ মাঠে নামতে হয়।

অমরেন্দ্র এ দিন কষকদের অনুরোধ করেছেন, এ সব না করতে। কারণ এতে সাধারণ মানুষেরই হেনস্থা বাড়বে। কোভিডের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে নানা রকম অসুবিধা দেখা দেবে। ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে পড়াশোনা থেকে শুরু করে পঞ্জাবের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও এর প্রভাব পড়বে।

Advertisement

কৃষক সংগঠনগুলির সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে কৃষকরা পঞ্জাবের গ্রামে গ্রামে গুরুদ্বারের লাউডস্পিকার ব্যবহার কওরে সাধারণ মানুষের কাছে জিয়ো পরিষেবা ছেড়ে অন্য মোবাইল সংস্থার পরিষেবা নিতে আনুরোধ জানিয়েছেন। পঞ্জাবে প্রায় ১.৭ কোটি জিয়ো সংযোগ রয়েছে। প্রায় ৯ হাজার মোবাইল টাওয়ার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ টাওয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার ভগৎ সিংহের ভাইপো অভয় সিংহ সাঁধু হরিয়ানা-দিল্লির সীমানার সিংঘুতে কৃষক বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। সত্তরের দশকের চিপকো আন্দোলনের নেতা সুন্দরলাল বহুগুণা সমর্থন জানিয়েছেন কৃষকদের আন্দোলনকে। পঞ্জাবের ফাগওয়ারায় বিজেপির নেতারা আজ একটি হোটেলে প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মবার্ষিকী পালন করছিলেন। ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (দোয়াবা) হোটেলটি ঘেরাও করে ফেলে। বিজেপি নেতাদের পিছনের দরজা গিয়ে পালিয়ে যেতে হয়। বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশকে লাঠিও চালাতে হয়।

উত্তরপ্রদেশের বাজপুর ও অন্যান্য এলাকা থেকে ৫০০ ট্রাক্টর-ট্রলিতে কৃষকরা দিল্লির কাছে হাপুরে পৌঁছে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। উত্তরাখণ্ডের কৃষকরা ট্রাক্টর মিছিল করে দিল্লির দিকে রওনা হলে উধম সিংহ নগরের কাছে আজ এক অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারণা হয়। ট্রাক্টর মিছিল ঠেকাতে লোহার ব্যারিকেড তৈরি করেছিল পুলিশ। সেই ব্যারিকেড ঠেলে এগোনোর চেষ্টা করে ট্রাক্টর। উল্টো দিকে কয়েক ডজন পুলিশকর্মী প্রাণপণে সেই ব্যারিকেড ঠেলে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। চার পাশে কয়েকশো বিক্ষোভকারীর তুমুল চিৎকারে তখন কান পাতা দায়। দু’পক্ষে খানিক ক্ষণ ঠেলাঠেলির পরে পুলিশের পেশিশক্তি হার মানে ট্রাক্টরের হর্স-পাওয়ারের কাছে। পুলিশ হাল ছেড়ে সরে দাঁড়াতেই লোহার ব্যারিকেড দুমড়ে, তার উপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে এগিয়ে যান কৃষকরা।

এই দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে মিডিয়ায়। যা নিয়ে নেট-দুনিয়ায় চলছে তুমুল চাপান-উতোর। কেউ কেউ ট্রাক্টর চালকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। যা কি না আগেই করেছে অন্য রাজ্যের পুলিশ। আদালতে যা সমালোচিতও হয়েছে। অনেকে আবার একে কর্পোরেটাইজ়েশনের বিরুদ্ধে এবং মাত্র তিন-চার জনের হাতে গোটা ভারতকে তুলে দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে আরপার লড়াইয়ের এক প্রতীকী ছবি বলে মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন