Farmers Protest

আইনের কপি পুড়িয়ে ‘লোহরি’ অনড় চাষিদের

তিন কৃষি আইনের রূপায়ণে স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার ও ক্ষুব্ধ কৃষক সংগঠনগুলির কথা শোনার জন্য গতকাল একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৪
Share:

ক্ষোভের আগুন: নয়াদিল্লির গাজিপুর সীমানায় বুধবার। ছবি: পিটিআই।

রবি ফসল তোলার সময়ে, পঞ্জাবের কৃষকরা মকর সংক্রান্তির আগের দিন ‘লোহরি’ পালন করেন। কাঠের আগুন জ্বেলে তাতে ঘি ঢেলে, বাদাম, ভুট্টা ছুড়ে দেওয়া হয়। চলে গান-বাজনা। বুধবার দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় আন্দোলনকারী কৃষকরা তিন কৃষি আইনের কপি পুড়িয়ে ‘লোহরি’ পালন করেন। একই সঙ্গে শপথ নিলেন, কৃষি আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না। কলকাতার ধর্মতলাতেও দেখা গেল আইনের কপি পোড়ানোর ছবি।

Advertisement

তিন কৃষি আইনের রূপায়ণে স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার ও ক্ষুব্ধ কৃষক সংগঠনগুলির কথা শোনার জন্য গতকাল একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির সকলেই সরকারের কৃষি আইনের পক্ষে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা পরেও কৃষকরা আন্দোলন থেকে সরেননি। তাঁরা আদালতের কমিটির সামনে যাবেন না বলেও অনড় রয়েছেন।

আন্দোলনে ইতি না পড়লেও, বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সরকারের সামনে একটা রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। কারণ, কৃষক সংগঠনগুলি তিন আইন প্রত্যাহার ছাড়া আর কিছুই মানবে না বলে অবস্থান নেওয়ায়, সরকার কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনে স্থগিতাদেশ জারির করার পরে এখনই আর কৃষি সংস্কারের পক্ষে প্রচারে না যাওয়ার নীতি নিচ্ছে বিজেপি।

Advertisement

আরও পড়ুন: দেশজ রাজনীতির সৌরমণ্ডলে কেডি হলেন আধুনিক মগনলাল মেঘরাজ

আরও পড়ুন: ‘নৈতিক হার হয়েছে’, কৃষি আইন নিয়ে বিজেপি-কে খোঁচা অকালি দল প্রধানের

গত রবিবার হরিয়ানার করনালে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের কিসান মহাপঞ্চায়েতে হাঙ্গামা হয়। বিজেপির শীর্ষনেতারা আপাতত এই রকম সভা করতে নিষেধ করেছেন। গত সন্ধ্যায় খট্টর ও উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌটালা দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী চৌধুরী কঁওয়র পাল জানান, করনালের হিংসার পরে অমিত শাহ পরামর্শ দিয়েছেন, কৃষি আইনের প্রচারে এখন আর সভা করার দরকার নেই।

কৃষকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকায় চৌটালার জননায়ক জনতা পার্টির উপর বিজেপির সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের প্রবল চাপ তৈরি হয়েছে। বুধবার চৌটালা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেছেন। তবে খট্টরের দাবি, তাঁর সরকারের কোনও বিপদ নেই।

সুপ্রিম কোর্ট কৃষি আইনে স্থগিতাদেশ জারি করার পরে ১৫ জানুয়ারি কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে সরকার কী কৌশল নেবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী কৈলাস চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকার আলোচনার জন্য তৈরি। এ বার কৃষক সংগঠনগুলি ঠিক করুক, তাঁরা কী চান।’’ কৃষকদের সঙ্গে আলোচনারত মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্য বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সোমপ্রকাশের বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যখন কমিটির সামনে সকলকে হাজির হতে বলেছেন, তখন সেই রায়কে সকলের সম্মান করা উচিত।’’ কিন্তু কৃষক নেতাদের যুক্তি, এখানে সুপ্রিম কোর্টকে অসম্মান করার কোনও প্রশ্নই নেই। কারণ, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে কোনও আর্জিই জানাননি। আর সুপ্রিম কোর্ট আইন খারিজ করেনি। আপাতত স্থগিত রেখেছে।

বিজেপির বক্তব্য, অন্য সময় হলে বলা যেত, সুপ্রিম কোর্ট অতিসক্রিয় হয়ে উঠে আইনে স্থগিতাদেশ জারি করেছে। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট কোনও আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করে তা খারিজ করে দিতে পারে। কিন্তু বৈধতা বিচার না করেই, শুধুমাত্র আন্দোলনে ইতি টানতে সুপ্রিম কোর্ট আইনে স্থগিতাদেশ জারি করতে পারে কি না, সে প্রশ্ন তোলাই যায়। কিন্তু এখন আদালতের স্থগিতাদেশই আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ, পঞ্জাব-হরিয়ানায় দলের নেতাদের পক্ষেও পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন