মোদীকে কেন তোপ, বলেই তোপের মুখে

যে কোনও কথায় ঘুরে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনায় আপত্তি জানিয়ে আজ লোকসভায় কংগ্রেস-তৃণমূলের বিরোধিতার মুখে পড়লেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে গতকাল রাজস্থানের এক কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে আজ লোকসভায় বিতর্ক হয়। সেই বিতর্কে অংশ নিয়ে আম আদমি পার্টির (আপ) সাংসদ ভগবৎ মান তাঁর বক্তৃতা শেষ করার আগে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৮
Share:

যে কোনও কথায় ঘুরে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনায় আপত্তি জানিয়ে আজ লোকসভায় কংগ্রেস-তৃণমূলের বিরোধিতার মুখে পড়লেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।

Advertisement

নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে গতকাল রাজস্থানের এক কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে আজ লোকসভায় বিতর্ক হয়। সেই বিতর্কে অংশ নিয়ে আম আদমি পার্টির (আপ) সাংসদ ভগবৎ মান তাঁর বক্তৃতা শেষ করার আগে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন। সঙ্গে সঙ্গে স্পিকার তাঁর সেই কটাক্ষ লোকসভার রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। সুমিত্রা মহাজন বলেন, ‘‘এ ভাবে প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা যাবে না।’’ স্পিকারের এই নির্দেশ শুনে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ হন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। নিজে উঠে দাঁড়িয়ে আপত্তি না জানালেও লোকসভায় দলের নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে ও অন্য সাংসদদের বিষয়টি তোলার নির্দেশ দেন তিনি। স্পিকারের নির্দেশ নিয়ে আপত্তি তোলেন সৌগত রায়-সহ তৃণমূলের সাংসদেরাও।

সংসদের বাইরে আপ সাংসদ ভগবৎ মান বলেন, ‘‘কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য কোনও সুনির্দিষ্ট উপায়ের কথা বলছেন না প্রধানমন্ত্রী। শুধু ‘মন কি বাত’ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। আমি এ কথা বলাতেই আপত্তি করেন স্পিকার।’’

Advertisement

সনিয়ার ইঙ্গিত পেয়েই স্পিকারকে পাল্টা প্রশ্ন করেন লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়গে। তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে অসংসদীয় শব্দের কোনও স্থান নেই। কিন্তু ‘মন কি বাত’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করলে তা নিয়ে আপত্তি উঠবে কেন? এ কথা বলে সংসদীয় নিয়মকানুনের ধারা উদ্ধৃত করার চেষ্টা করেন মল্লিকার্জুন। একই ভাবে সংসদীয় নিয়ম নিয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও। যদিও তাঁদের বলার সুযোগ স্পিকার দেননি। কিন্তু বিরোধীদের আপত্তির মুখে পড়ে স্পিকার জানান, ওই সব শব্দ প্রসঙ্গক্রমে বলা হয়েছিল কিনা তিনি তা বিচার করে দেখবেন।

সংসদের বাইরে মল্লিকার্জুন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান। সরকারের কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হলে তাঁর সমালোচনা হবে না তো কার সমালোচনা হবে!’’ অন্য দিকে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে সৌগতবাবু বলেন, ‘‘সংসদীয় আইনের ৩৫২ ও ৩৮০ ধারা বলছে, স্পিকার চাইলে কারও বক্তব্যের অংশ ছাঁটার নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু সেই বক্তব্য যদি অসংসদীয়, মানহানিকর, অমর্যাদাকর হয় তবেই তা রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া যাবে।’’ সৌগতবাবুর মতে, ‘মন কি বাত’ শব্দটিতে এ সব কিছুই নেই। তাই এই নির্দেশ স্পিকার দিতে পারেন না। সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েক দিনে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন দফায় দফায় জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথায় কথায় সমালোচনা করা যাবে না। কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কংগ্রেস সাংসদেরা যখন আজ ওয়েলে নেমে স্লোগান তোলেন, তখন সভা মুলতবি করার আগে স্পিকার বলেন, ‘‘আমার এটা দেখেই দুঃখ হচ্ছে যে কৃষকের দুঃখ নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই, প্রত্যেকে নিজের নিজের রাজনীতি করছেন।’’

তবে স্পিকারের নির্দেশ সত্ত্বেও আজ কৃষক আত্মহত্যার প্রসঙ্গে তাঁর মত জানাতে নরেন্দ্র মোদী যখন লোকসভায় আসেন, তখন মল্লিকার্জুন তাঁকে ফের কটাক্ষ করেন। বলেন, ‘‘আমাদের কপাল ভাল যে প্রধানমন্ত্রী আজ লোকসভায় এসেছেন।’’ অন্য দিকে বিতর্কে অংশ নিয়ে সৌগতবাবু বলেন, ‘‘যন্তরে মন্তরে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে গত কাল সন্ধ্যাতেই টুইট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেটা ভাল কথা। কিন্তু টুইটার থেকে এ বার বাস্তবের মাটিতে নেমে প্রধানমন্ত্রী দেখুন কৃষকের সমস্যা আসলে কোথায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন