J&K

J&K delimitation: হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে বাড়ল ছ’টি আসন, বিজেপির উপত্যকা শাসনের কৌশল, বলছেন বিরোধীরা

অবশেষে শেষ হল জম্মু-কাশ্মীরের আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ। এই কাজের দায়িত্বে থাকা ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’ তাদের রিপোর্ট আজ কেন্দ্রের কাছে জমা দেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২২ ০৬:১৫
Share:

অবশেষে শেষ হল জম্মু-কাশ্মীরের আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ।

অবশেষে শেষ হল জম্মু-কাশ্মীরের আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ। এই কাজের দায়িত্বে থাকা ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’ তাদের রিপোর্ট আজ কেন্দ্রের কাছে জমা দেয়। রিপোর্টে জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভার মোট আসন ৮৩ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করা হয়েছে। ছ’টি বেড়েছে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে, একটি সংখ্যালঘু কাশ্মীরে। বিরোধীদের অভিযোগ, কমিশনকে কাজে লাগিয়ে জম্মুতে জয়ের মাধ্যমে গোটা জম্মু-কাশ্মীরে শাসন চালানোর কৌশল নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। ওই কমিশন আসলে বিজেপির শাখা
সংগঠন হিসেবে কাজ করেছে, অভিযোগ বিরোধীদের। আর বিজেপির যুক্তি, এত দিনে ন্যায়বিচার পেল জম্মু।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রায় দু’দশক ধরে আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ থমকে ছিল জম্মু-কাশ্মীরে। ২০১৮ সালে বিজেপি ও পিডিপি দলের জোট ভেঙে গেলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় ভূস্বর্গে। ২০১৯ সালে বিজেপি দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় জিতে আসার পরেই জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহার করে, রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে সেটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। আলাদা করা হয় লাদাখকে। কেন্দ্র জানায়, আসন পুনর্বিন্যাসের ভিত্তিতে বিধানসভা ভোট হবে জম্মু-কাশ্মীরে। ২০২০-র মার্চে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিশন গঠন করে কেন্দ্র। বাকি দুই সদস্য দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র ও জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন কমিশনার কে কে শর্মা।

Advertisement

রিপোর্টে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার মোট আসন ৮৩ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করা হয়েছে। সাতটি আসনের মধ্যে ছ’টি বেড়েছে জম্মুতে (৩৭ থেকে ৪৩) এবং একটি কাশ্মীরে (৪৬ থেকে ৪৭)। কমিশন জানিয়েছে, ২০১১ সালের জনসংখ্যার ভিত্তিতেই আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন ব্যবস্থায় জম্মু-কাশ্মীরে যে পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে তার প্রত্যেকটিতে এখন থেকে ১৮টি করে বিধানসভা কেন্দ্র থাকবে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের দাবি মাথায় রেখে বেশ কিছু আসনের নাম পাল্টানো হয়েছে। যেমন তানমার্গের নাম হয়েছে গুলমার্গ, জুনিমার হয়েছে জাদিবাল, শোনওয়ারের নাম হয়েছে লাল চক, কাঠুয়া (উত্তর)-এর নতুন নাম হয়েছে জাসরোটা।

কয়েক মাস আগেই কমিশন খসড়া রিপোর্ট প্রকাশ করার পর থেকেই ওই আসন পুনর্বিন্যাসের মাধমে বিজেপির সুবিধে করে দেওয়ার অভিযোগে সরব হন বিরোধীরা। আজ ওই চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরোধিতা করে উপত্যকার দলগুলি নিয়ে গড়া গুপকর জোট জানিয়েছে, ‘‘এর ফলে কাশ্মীরে যাঁরা সংখ্যাগুরু, তাঁরা রাজনৈতিক সংখ্যালঘুতে পরিণত হলেন। পুরোটাই করা হয়েছে বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য।’’ বিরোধীদের মতে, এর ফলে জম্মু-কাশ্মীরের ৯০টি আসনের মধ্যে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা জোগাড় করে নিতে সক্ষম হবে বিজেপি। তার ফলে উপত্যকায় একটি আসন না জিতলেও জম্মু-কাশ্মীর শাসন করতে সমস্যা হবে না নরেন্দ্র মোদীর দলের। বিরোধীদের অভিযোগ, কাশ্মীরে রাজনৈতিক ভাবে দাঁত ফোটাতে না পেরে জম্মুর মাধ্যমে উপত্যকা শাসন করার কৌশল নিয়েছেন মোদীরা।

Advertisement

নতুন পুনর্বিন্যাসে অতীতে জম্মু লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা পুঞ্চ ও রাজৌরিকে উপত্যকার অনন্তনাগ কেন্দ্রের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে তারও প্রবল সমালোচনা করা হয়েছে। গুপকর জোটের মতে, ওই দুই প্রান্তের মধ্যে দূরত্ব ৫০০ কিলোমিটার। ভৌগোলিক ভাবে কোনও যোগাযোগ নেই। বিকল্প পথ হিসেবে মোগল রোড দিয়ে শোপিয়ান হয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু তা-ও সেই রাস্তা শুধু গ্রীষ্মে খোলা থাকে। অভিযোগ, আসনের পুনর্বিন্যাসের সময়ে শুধু জনসংখ্যা মাথায় রাখা হয়েছে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিচার করা হয়নি। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মতে, ‘‘এতে রাজৌরি তথা কাশ্মীরের মানুষেরা রাজনৈতিক ভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়বেন। কমিশন আসলে বিজেপির শাখা সংগঠন হিসাবে কাজ করে তাদের সুবিধা করে দিয়েছে। আমরা ওই রিপোর্ট মানি না।’’ আর এক প্রধান দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের দাবি, ‘‘যত চেষ্টা হোক, জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে বিজেপি

গত চার বছরে যা করেছে তাতে তাদের হার নিশ্চিত।’’ এ দিকে কমিশনের রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়ে আজ বিজেপির জম্মু-কাশ্মীরের সভাপতি রবীন্দ্র রায়না বলেন, ‘‘অবশেষে জম্মুর মানুষের বঞ্চনার দিন শেষ হল।’’

আসন পুনর্বিন্যাস হলেই জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট করিয়ে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এখন দেখার, কবে নতুন আসনের অঙ্ক মেনে জম্মু-কাশ্মীরে ভোট করানোর ঝুঁকি নেয় মোদী সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন