বিশ্বের দরবারে আর্থিক মর্যাদা চায় কেন্দ্র, পিছপা সংস্কারে

রেটিং ফেরাতে সওয়াল দিল্লির

বিশ্বের দরবারে ভারতের হারানো আর্থিক মর্যাদা ফিরে পেতে এ বার লড়াই শুরু করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। লক্ষ্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন। আর, এ জন্যই আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা বা রেটিং এজেন্সিগুলির কাছে অর্থ মন্ত্রক সওয়াল শুরু করেছে। অরুণ জেটলির মন্ত্রকের দাবি, মোদী সরকার রাজকোষ ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রাখবে। লাগাম পরানো হবে মূল্যবৃদ্ধির হারে। কাজেই রেটিং এজেন্সিগুলির এ বার ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব নেওয়া উচিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৫
Share:

বিশ্বের দরবারে ভারতের হারানো আর্থিক মর্যাদা ফিরে পেতে এ বার লড়াই শুরু করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। লক্ষ্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন। আর, এ জন্যই আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা বা রেটিং এজেন্সিগুলির কাছে অর্থ মন্ত্রক সওয়াল শুরু করেছে। অরুণ জেটলির মন্ত্রকের দাবি, মোদী সরকার রাজকোষ ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রাখবে। লাগাম পরানো হবে মূল্যবৃদ্ধির হারে। কাজেই রেটিং এজেন্সিগুলির এ বার ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব নেওয়া উচিত।

Advertisement

মনমোহন সিংহের জমানায় আর্থিক মন্দার ধাক্কায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারিয়েছিল ভারতীয় অর্থনীতি। মুডিজ-এর মতো আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা বা রেটিং এজেন্সিগুলি ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব নেয়। আর্থিক মাপকাঠিতে উঠতি দেশগুলির মধ্যে পাঁচটি বিপন্ন রাষ্ট্র বা ‘ফ্র্যাজাইল ফাইভ’-এর তালিকায় ঢুকে পড়ে ভারত। মুডিজ-এর তরফে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে ভারতকে একেবারে নিচু সারিতে রাখা হয়েছিল। এ দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে মুডিজ-এর শেষ মূল্যায়ন ‘বিএএ৩’। তাতে বলা হয়েছিল, দেশে সঞ্চয়ের পরিমাণ খুব ভাল। বিদেশি মুদ্রা যথেষ্ট আছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ রাজকোষ ঘাটতি, চড়া হারে মূল্যবৃদ্ধি এবং দুর্বল পরিকাঠামো ভারতের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

এই নেতিবাচক মনোভাব এ বার পাল্টাতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কারণ ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে রেটিং এজেন্সিগুলির মূল্যায়ন ইতিবাচক না-হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এ দেশে লগ্নি করতে ভরসা পাবেন না। সোমবার অর্থ মন্ত্রকের তরফে মুডিজ-কর্তাদের সামনে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি জাতীয় আয়ের ৪.১ শতাংশে বেঁধে রাখার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রক আত্মবিশ্বাসী। তাদের দাবি, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অর্থনীতিতে অনেকটাই আশার সঞ্চার হয়েছে। বিশেষত এপ্রিল থেকে জুন মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫.৭ শতাংশ ছুঁয়েছে। অর্থ সচিব অরবিন্দ মায়ারাম বলেন, “আর্থিক বৃদ্ধির এই উন্নতি মুডিজ-কর্তাদেরও নজরে পড়েছে।” মায়ারামের যুক্তি, চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫.৭ থেকে ৫.৯ শতাংশের মধ্যে থাকবে। আর্থিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লে অক্টোবরের পর থেকে মোদী সরকারের ঘরে বেশি পরিমাণে রাজস্ব আসতে শুরু করবে। কাজেই রাজকোষ ঘাটতি বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করাটা কঠিন বলে মনে হলেও তা সম্ভব হবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বিলগ্নিকরণের কর্মসূচি শুরু হবে। শেয়ার বাজারে এখন স্বপ্নের দৌড় চলছে। রোজ নতুন উচ্চতায় উঠছে শেয়ার সূচক। কাজেই বিলগ্নিকরণ থেকে সরকার যে-পরিমাণ অর্থ আসবে বলে আশা করছে, তার থেকেও বেশি আয় হতে পারে।

Advertisement

মুডিজ-এর আগে আর একটি রেটিং এজেন্সি স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স (এস অ্যান্ড পি)-এর কর্তারা অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে অগস্টেই বৈঠক করে গিয়েছেন। অরুণ জেটলি এ বার রাজস্ব আয় ২০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছেন। এই লক্ষ্যমাত্রা কতখানি বাস্তব, তা নিয়ে এস অ্যান্ড পি প্রশ্ন তুলেছিল। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়লে রাজস্ব আয়ও বাড়বে। মুডিজ-এর পরে অন্য দুই রেটিং এজেন্সি ফিচ্ এবং জাপানের জেসিআরএ-ও অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠক করবে। এরা সকলেই এত দিন বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে ভারতকে নিচু সারিতে রেখেছে। সকলেই ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব নিয়েছে।

আজ মুডিজ-এর তরফে রাজকোষ ঘাটতির পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। অর্থ সচিব বলেন, “আমরা ওঁদের জানিয়েছি যে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। খাদ্যশস্য যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রয়েছে। কাজেই বৃষ্টি কম হলে যদি কৃষি উৎপাদন কম হয়, তা হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে।” অগস্টে পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হার ৫.১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। জুলাই মাসে তা ছিল ৫.৪৬ শতাংশ। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৪৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৯৬ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হারও ৮ শতাংশের নীচে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাজকোষ ঘাটতি কমাতে কেন্দ্রীয় সরকার বাজার থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণও কমাতে চাইছে। বাজেটে যে-পরিমাণ ঋণ নিতে হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল, তার থেকে কম নিয়েই কাজ চালাতে চাইছে কেন্দ্র। রেটিং এজেন্সিগুলি আগামী বছরগুলিতেও ধাপে ধাপে ঘাটতি কমানোর বিষয়ে দিল্লির কৌশল জানতে চায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন