এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণ, সায় বিদেশি বিনিয়োগেও

বুধবার সেই পথ খুলে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩১
Share:

বিদেশি মালিকও পেতে পারে দেশি মহারাজা।

Advertisement

বুধবার সেই পথ খুলে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সংস্থায় ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেওয়া হবে। যার অর্থ কোনও ভারতীয় বিমান সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোনও বিদেশি বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া কিনতে পারে। তবে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তৃত্ব থাকবে ভারতীয় সংস্থার হাতেই।

এ দেশে বিমান ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র অবশ্য দেওয়া হয়েছিল ইউপিএ আমলেই। সেই সুবাদেই টাটা সন্সের সঙ্গে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ভিস্তারা। কিন্তু বাদ রাখা হয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া-কে। ‘ন্যাশনাল ক্যারিয়ার’-এর গরিমাপ্রাপ্ত বিমান সংস্থায় বিদেশি লগ্নি ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ বার সেই বাধা কাটল। এয়ার ইন্ডিয়ার ব্যাপারে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স যে আগ্রহী, সেই ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই মিলেছে। ভিস্তারার সিইও লেসসি থঙ্গ সম্প্রতি জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এ বিষয়ে খোলা মন নিয়েই চলছে। তবে ব্যবসায়িক দিকটি খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে এয়ার ইন্ডিয়ার ব্যবসার একটা অংশ হাতে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল ইন্ডিগো-ও।

Advertisement

পরিবহণ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কিন্তু এখনই এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি করার পক্ষপাতী নয়। কমিটির যুক্তি, এয়ার ইন্ডিয়ার আয়ের ৬০ শতাংশই আসে বিদেশ থেকে। বিদেশি সংস্থা এলে তাদের কোষাগারে এই আয় চলে যাবে। তাই কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সরকারি মালিকানা কিছুটা কমিয়ে এয়ার ইন্ডিয়াকে আরও পাঁচ বছর সরকারের নিয়ন্ত্রণেই রেখে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

যদিও বিমান ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ সংস্থা সেন্টার ফর এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাভিয়েশনের মত, পাঁচ বছর অপেক্ষা করলে এয়ার ইন্ডিয়ার দর আরও পড়বে। এই অবস্থায় বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দিয়ে কেন্দ্র বুঝিয়ে দিল, তারা আর অপেক্ষায় নারাজ।

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে খুশি নয় কংগ্রেসও। প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার আক্ষেপ, ‘‘এতে এয়ার ইন্ডিয়া গরিমা হারাবে। অন্য কোনও দেশ তাদের জাতীয় বিমান সংস্থায় বিদেশি লগ্নির অনুমতি দেয় না।’’ সরকারের যুক্তি, এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারতীয় সংস্থার হাতেই। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণ না-থাকলে বিদেশি সংস্থা কেন প্রযুক্তি, দক্ষতা এবং টাকা ঢালবে, প্রশ্ন থাকছেই। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এয়ার ইন্ডিয়ার মতো বিরাট, অথচ দেনাগ্রস্ত সংস্থা চালানোর ঝুঁকি একা কোনও ভারতীয় সংস্থা নিত না। বিদেশি সংস্থার জন্য দরজা খুলতেই হতো।

এয়ার ইন্ডিয়ার দেনার পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা। সংস্থার হাল ফেরাতে ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে সরকারের। তাই নীতি আয়োগও সংস্থা পুরোপুরি বেচে দেওয়ারই সুপারিশ করেছিল। মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে তারা আর এয়ার ইন্ডিয়া চালাবে না। কিন্তু বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া তার মধ্যে শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এয়ার ইন্ডিয়ার দেনার কী হবে, তা-ও এখনও ঠিক হয়নি। তবে কেন্দ্রকে যে কিছুটা বোঝা নিতে হবে, তা স্পষ্ট। অরুণ জেটলির নেতৃত্বাধীন কমিটি বিষয়টি দেখছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন