State News

‘...আপনারা সবাই হারবেন,’ সংসদে বকুনি দিয়েছিলেন ‘হেডমাস্টার’ সোমনাথ

১০ বার লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। দশম বারেই স্পিকার হন। সেটা ছিল চতুর্দশ লোকসভা। সবচেয়ে পুরনো সাংসদ হিসেবে প্রথমে হন প্রোটেম স্পিকার। তার পরে তিনিই সর্বসম্মত ভাবে নির্বাচিত হন স্পিকার পদে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ১৮:০৬
Share:

শুধু সাংসদরা নন, দেশের সুপ্রিম কোর্টও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সমালোচনার মুখে পড়েছিল। —ফাইল চিত্র।

সময়টা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তখন দলহীন। কারণ সিপিএম তার আগের বছরই বহিষ্কার করে দিয়েছে তাঁকে। তবে স্পিকার পদ অক্ষুণ্ণ তখনও।

Advertisement

এমনই এক সময়ে লোকসভার অধিবেশন উত্তাল। একটানা হট্টগোল করছেন বিরোধী পক্ষের সাংসদরা। বার বার মুলতুবি করতে হচ্ছে সভার কাজ। অত্যন্ত বিরক্ত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় সাংসদদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘আমার আশা, আপনারা সবাই নির্বাচনে হারবেন।’’ যে ভাবে দিনের পর দিন সংসদের কাজে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যে ভাবে জনসাধারণের অর্থের বিপুল অপচয় হচ্ছে, তার জবাব জনসাধারণই দেবেন, হট্টগোলকারীরা সবাই হারবেন— এমনই বার্তা ছিল স্পিকারের।

স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সংসদ। কোনও স্পিকার কোনও দিন এমন কথা বলেননি সাংসদদের উদ্দেশে। বলার সাহসই করেননি। স্পিকার পদে থাকা সাংসদ লোকসভার রীতি-নীতি সম্পর্কে সাধারণত অভিজ্ঞই হন। কিন্তু স্পিকারের মতো বা স্পিকারের চেয়েও বেশি অভিজ্ঞ আরও অনেকেই হাজির থাকেন স্পিকারের চেয়ারের সামনেও। তা সত্ত্বেও অক্লেশে ওই রকম সাংঘাতিক কথা বলে দেওয়ার মতো কর্তৃত্ব সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় রাখতেন। সেখানেই তিনি অন্য অনেক স্পিকারের চেয়ে আলাদা ছিলেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় (১৯২৯-২০১৮)

১০ বার লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন সোমনাথ। দশম বারেই স্পিকার হন। সেটা ছিল চতুর্দশ লোকসভা। সবচেয়ে পুরনো সাংসদ হিসেবে প্রথমে হন প্রোটেম স্পিকার। তার পরে তিনিই সর্বসম্মত ভাবে নির্বাচিত হন স্পিকার পদে। সাংসদীয় রীতি-নীতি, দেশের প্রশাসনিক কাঠামো এবং সংবিধান সম্পর্কে অগাধ পাণ্ডিত্য তো ছিলই। ছিল স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং অসামান্য ব্যক্তিত্ব। সাংসদরা বলতেন— ‘হেডমাস্টার’। সংসদের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং অভিভাবকসুলভ আচরণের জন্যই সোমনাথের ওই রকম নামকরণ করেছিলেন সাংসদরা। যে দিন বলেছিলেন, ‘‘আমি আশা করি আপনারা সবাই হারবেন,’’ তার পরের দিনই কিন্তু প্রধানশিক্ষকের মতো ভঙ্গিতে ‘মান ভাঙিয়েছিলেন’ অভিমানী ‘ছাত্রদের’। ‘‘গতকাল হতাশা থেকে কথাগুলো বলেছিলাম, যাঁরা ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তাঁরা নিজের নিজের আসনে ফিরে আসুন’’— নীরব প্রতিবাদে সামিল হওয়া সাংসদদের উদ্দেশে কোমল স্বরে বলেছিলেন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: দলের নির্দেশ অমান্য করেছিলেন সংসদীয় দায়িত্ববোধ থেকেই

শুধু সাংসদরা নন, তার আগে দেশের সুপ্রিম কোর্টও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সমালোচনার মুখে পড়েছিল। সেটা ২০০৫ সাল। ঝাড়খণ্ড বিধানসভার আস্থা ভোট প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় সে হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে জানিয়েছিলেন, দেশের বিচার বিভাগ অতিসক্রিয়তা দেখাচ্ছে। আইনসভার কাজে বিচার বিভাগ এ ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সু্প্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে এত স্পষ্ট করে যে ‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগ তোলা যায়, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সমালোচনা যে এ ভাবে করা যায়, তা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের আগে কেউ দেখাতে পেরেছেন কি না সংশয় রয়েছে। সংবিধানিক রীতি-নীতি সম্পর্কে অগাধ পাণ্ডিত্যের কারণেই সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ওই পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করতে পেরেছিলেন বলে আইনজ্ঞরা মনে করেন।

আরও পড়ুন: আমরাই বাবার দেহে সিপিএমের পতাকা রাখতে দিইনি, বললেন সোমনাথ-কন্যা

১৯৯৬ সালে সেরা সাংসদ হয়েছিলেন সোমনাথ। রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। বাংলা থেকে আরও অনেকগুলি নাম বিভিন্ন সময়ে অত্যন্ত উজ্জ্বল ভূমিকা নিয়েছে সংসদে। ভূপেশ গুপ্ত, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, প্রণব মুখোপাধ্যায়, গীতা মুখোপাধ্যায়, প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি, গুরুদাস দাশগুপ্ত, বাসুদেব আচারিয়া— প্রত্যেকেই প্রখ্যাত সংসদীয় প্রথা-পদ্ধতির উপরে দুর্দান্ত দখলের জন্য। এই তালিকায় রয়েছে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামটাও। রয়েছে এই তালিকার সবচেয়ে উজ্জ্বল কয়েকটা নামের একটা হিসেবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন