কী ভাবে কারচুপি, বোঝালেন সইদ শুজা

কমিশনের বিরুদ্ধে এমন কাদা ছোড়ার চেষ্টার তীব্র নিন্দা করে কমিশন জানাচ্ছে, শুজার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে তারা।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

লন্ডনে সইদ শুজার সাংবাদিক বৈঠকের কিছু আগেই নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা আজ বলেন, ‘‘কমিশন যে ইভিএম ব্যবহার করে তাতে কারচুপি করা যায় না।’’ সাংবাদিক বৈঠকটির পরে কমিশনের তরফে যে কড়া বিবৃতি দেওয়া হল, তারও বক্তব্য, নির্বাচনে যে ইভিএম ব্যবহার করা হয়, তাতে কোনও ভাবেই কারচুপি করা সম্ভব নয়। এগুলি কড়া নজরদারি ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তৈরি হয়। প্রতি ক্ষেত্রে মানা হয় ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম (এসওপি)’। কমিশন তাই আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে। কমিশনের বিরুদ্ধে এমন কাদা ছোড়ার চেষ্টার তীব্র নিন্দা করে কমিশন জানাচ্ছে, শুজার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে তারা।

Advertisement

শুজা অবশ্য জানিয়েছেন, আগের নির্বাচন কমিশনারেরাও এমন দাবি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন তারের সংযোগ ছাড়া, ব্লু-চিপ বা অন্য কোনও ভাবে ইভিএমের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায় না। কিন্তু শুজার দাবি, এটা করা যায়। কী ভাবে? শুজার ব্যাখ্যা, ‘মডিউলেটর’-এর মাধ্যমে কম কম্পাঙ্কের (৭ হার্ৎজ়) তরঙ্গ পাঠালে ইভিএম সাড়া দেয়। শত্রুপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে বার্তা বিনিময়ের জন্য সামরিক বাহিনীগুলি এমন কম কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করে থাকে।

শুজার দাবি, তাঁরা এক বিজেপি নেতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি বিষয়টি জানতেন। ওই নেতার সঙ্গে দেখা যোগাযোগ করার পরে শুজার সঙ্গীদের খুন করা হয়। তাঁদের নামধাম জানাননি শুজা। তবে নাম করেন গোপীনাথ মুন্ডের। মহারাষ্ট্রের এই প্রভাবশালী রাজনীতিক মোদী সরকারের পঞ্চায়েত মন্ত্রী হন ২০১৪-র ২৬ মে। আর ৩ জুন দিল্লি বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। শুজার দাবি, ওটা দুর্ঘটনা নয়। দল বুঝেছিল, ইভিএমে কারচুপির কথা ফাঁস করতে চলেছেন তিনি। মুন্ডেকে তাই ‘সরিয়ে দেয়’ দল।

Advertisement

শুধু নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি নয়, শুজার সাংবাদিক বৈঠকের অস্বস্তি ছুঁয়েছে অরবিন্দ কেজরীবাল তথা আপ শিবিরকেও। মায়াবতী ও অন্য বিরোধী নেতাদের মতো কেজরীবালও ইভিএমে কারচুপি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব। আজ শুজা দাবি করেন, ভোটের সময় দিল্লিতে বিশেষ ওই কম্পাঙ্কের তরঙ্গ তাঁরা রুখে দিয়েছিলেন। ওখানে আপের জয় হয়। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি-ওস্তাদেরা ওই তরঙ্গ ছড়িয়েছিল। শুজার দাবি, ‘‘আমাদের টিম তা ধরে ফেলে। আমরা তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বদলে দিই আপের অনুকূলে। ভোটের আসল ফল ছিল ২০০৯ সালেরই মতোই। এই তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘আমরা ওই কম কম্পাঙ্কের তরঙ্গ কোথা থেকে আসছে সেটাও বার করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি টিমের কাছে অনুরূপ (প্রোটটাইপ) যন্ত্র রয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করলে ওরা সেটি ব্যবহার করে। যেটি হ্যাক করা আমাদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। তবে মোদ্দা বিষয় এটাই যে, ২০১৪-র গোটা নির্বাচনেই কারচুপি হয়েছিল।’’

ব্রিগেড সভায় ফারুক আবদুল্লার মতো নেতারা ইভিএম বাতিলের ডাক দিয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদী যা নিয়ে পরে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘হারবেন বুঝেই ওঁরা পরাজিতের যুক্তি তুলে ধরছেন এখন থেকেই।’’ আজ শুজার সাংবাদিক সম্মেলনের পরে বিজেপির মুখতার আব্বাস নকভিও বলেন, ‘‘ওঁরা আগামী হারের জন্য অজুহাতের জমি তৈরি করছেন।’’

সাংবাদিক বৈঠকে কপিল সিব্বলের থাকা নিয়ে নকভি বলেন, ‘‘সনিরা-রাহুল গাঁধী ওঁকে পাঠিয়েছেন। দেশের বদনাম করতে ওঁরা পাকিস্তানে চলে যান। ভারতবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কংগ্রেস।’’ কংগ্রেসের তরফে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভীর দাবি, এক সাংবাদিকের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে সিব্বল ওখানে গিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন