Crime

সিম আপডেটের নামে প্রতারণার ফাঁদ, লকডাউনের মরসুমে ‘সোয়াপিং’ করে শুরু অ্যাকাউন্ট ফাঁক!

বৃন্দাবনের একটি মঠের প্রধান পুরোহিতের অভিযোগের মাধ্যমেই এই নতুন প্রতারণার ছক প্রকাশ্যে এসেছে।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২০ ১৭:৪২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মোবাইলে সিম আপডেট করার অনুরোধ করে মেসেজ (এসএমএস) এলে সাবধান। প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে আপনি খোয়াতে পারেন ব্যাঙ্কে রাখা সমস্ত সঞ্চয়। লকডাউনের মরসুমে বাড়ছে অনলাইন কেনাকাটার প্রবণতা। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই প্রতারকরা সক্রিয় ‘ব্র্যান্ড নিউ’ প্রতারণার ছক নিয়ে। ইতিমধ্যেই এই প্রতারণার শিকার হয়ে ৩৯ লাখ টাকা খুইয়েছেন দুই ব্যক্তি। তদন্তকারীদের পরিভাযায় এই প্রতারণার নাম ‘সিম সোয়াপিং’। অর্থাৎ বদলে যাচ্ছে আপনার সিম। আপনার মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে প্রতারকদের হাতে!

Advertisement

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃন্দাবনের একটি মঠের প্রধান পুরোহিতের অভিযোগের মাধ্যমেই এই নতুন প্রতারণার ছক প্রকাশ্যে এসেছে। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট ছিল। প্রায় ২৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন তিনি। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা খোওয়া যাওয়ার দিনই হঠাৎ করে তাঁর মোবাইল অকেজো হয়ে গিয়েছিল।

ওই ব্যক্তি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তাঁর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। আপাত ভাবে মনে হয় তাঁর টেলিকম অপারেটরের পাঠানো মেসেজ। তাতে লেখা ছিল গ্রাহকের সিম আপডেট করা প্রয়োজন। বিনা খরচে আপডেট করে দেওয়া হবে যাতে আরও ভাল পরিষেবা পান গ্রাহক। ওই পুরোহিতও মেসেজে উল্লেখ করা নম্বরে সিম আপডেট করার জন্য মেসেজ পাঠান।

Advertisement

আরও পড়ুন: লাঠি-কাঁদানে গ্যাস, পুলিশ-শ্রমিক খণ্ডযুদ্ধে ফের উত্তাল সুরত​

তার পরেই ফের টেলিকম অপারেটরের কাছ থেকে একটি মেসেজ আসে। সেখানে সিম পরিবর্তনের চূড়ান্ত সম্মতি চাওয়া হয়। পুরোহিত ‘হ্যাঁ’ লিখে জানানোর কিছু পরেই তাঁর সিম অকেজো হয়ে যায়। পরে তিনি এটিএমে টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা নেই।

ঠিক একই ভাবে ১১ লাখ টাকা খুইয়েছেন গুজরাতের এক ব্যবসায়ীও। কী ভাবে হচ্ছে এই প্রতারণা?

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, এরা একসঙ্গে প্রচুর নম্বরে বাল্ক মেসেজ পাঠাচ্ছে টেলিকম অপারেটরের ভেক ধরে। মেসেজে লেখা থাকছে, সিম আপডেট করার প্রস্তাব, সঙ্গে টেলিকম অপারেটরের একটি নম্বর। প্রতিটি টেলিকম সংস্থারই নতুন সিম বা পুরনো সিম আপডেট করার আবেদন জানাতে নির্দিষ্ট নম্বর রয়েছে। সেই নম্বরে গ্রাহক মেসেজ পাঠালে, টেলিকম অপারেটর আবার মেসেজ করে গ্রাহকের সিম বদলের চূড়ান্ত সম্মতি জানতে চায়। গ্রাহক সেই সম্মতি মেসেজ করলেই গ্রাহকের আগের সিম বন্ধ হয়ে যায়, গ্রাহকের পুরনো নম্বরেই চালু হয় নতুন সিম।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এই নতুন সিম চলে যাচ্ছে প্রতারকদের হাতে। সিম হাতে পেয়েই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নেট ব্যাঙ্কিংয়ে লগ-ইন করার চেষ্টা শুরু করে দেয় প্রতারকরা। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘প্রতারক নির্দিষ্ট ভাবে জানে না কোন ব্যঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ওই ব্যক্তির। তাই প্রায় সব ব্যাঙ্কেই চেষ্টা চালিয়ে যায়। গ্রাহকদের মোবাইল নম্বর যুক্ত করা থাকে নেট ব্যাঙ্কিংয়ের সঙ্গে। সেখানে মোবাইল নম্বর দিয়ে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে নেয় প্রতারকরা। কারণ সব ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডই মেসেজের মাধ্যমে গ্রাহকের মোবাইলে আসে। আর প্রতারকরা সেই সিমটিই হস্তগত করে রেখেছে।’’

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, প্রায় দু’বছর আগে কয়েকটি সিম সোয়াপিংয়ের ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় বেশ কয়েক জন গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তার পর দীর্ঘ দিন সিম সোয়াপিং বন্ধ ছিল। সম্প্রতি ফের সামনে এসেছে সিম সোয়াপিং প্রতারণা। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, লকডাউনের সময় অনলাইন লেনদেন বাড়ছে। যাঁরা সাধারনত অনলাইন লেনদেন করেন না, তাঁরাও করতে চাইছেন। এঁদের অনেকেরই সিম আপডেটেড নয়। এই ধরনের গ্রাহকই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে।

আরও পড়ুন: রাম মন্দির নির্মাণে দান করলে ছাড় মিলবে আয়করে, নয়া বিজ্ঞপ্তি কেন্দ্রের​

গোটা প্রতারণায়, টেলিকম সংস্থার কর্মীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘টেলিকম সংস্থার কর্মীরা গ্রাহকের পরিচয় যাচাই না করেই ভুয়ো লোকের হাতে দিয়ে দিচ্ছে নতুন সিম। তাই তাদের দায়িত্ব থেকেই যায়।” এ ছাড়াও টেলিকম সংস্থার কর্মীরা তথ্য দিয়ে কোনও সহায়তা করছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

কলাকাতায় এখনও কেউ এই ভাবে প্রতারিত না হলেও, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। কারণ, সাধারণত এই ধরনের প্রতারণা কোনও নির্দিষ্ট রাজ্যভিত্তিক হয় না। গোটা দেশ জুড়েই হয়। টেলিকম সংস্থাগুলিকেও সিম দেওয়ার সময় গ্রাহকের পরিচয় যাচাইয়ের উপর জোর দিতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন