Narendra Modi

জি২০: মোদীর আহ্বান, তবে ঐকমত্য হবে কি

কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, অতিমারি-পরবর্তী বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলিকে অতিক্রম করতে যে দিশার কথা আজ প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিবন্ধে লিখেছেন, সেগুলিকে সম্মেলন শেষের দিল্লি ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করাই লক্ষ্য সাউথ ব্লকের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৩০
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের দু’দিন আগে একটি নিবন্ধে গোটা বিশ্বকে নয়াদিল্লির ভারতমণ্ডপমের মঞ্চে বাঁধতে সক্রিয় হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একটি নিবন্ধে তাঁর বক্তব্য, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ — এই দুটি শব্দের নেপথ্যে রয়েছে এক গভীর দর্শন। এর অর্থ ‘গোটা বিশ্ব এক পরিবার’।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর মতে, জি২০-তে ভারতের সভাপতিত্বে এই শব্দবন্ধ মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নের আহ্বান হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে তাঁর বার্তা, ভারতের নেতৃত্বে জি২০-র মঞ্চ শুধুমাত্র ধনী রাষ্ট্রগুলির কথাই ভাববে না, দিশা দেখাবে গরিব ও অনুন্নত দেশগুলিকেও। মোদী লিখেছেন, “আমাদের সভাপতিত্বের অন্যতম প্রয়াস দক্ষিণ গোলার্ধের কণ্ঠস্বরকে জি২০-তে তুলে আনা। আমাদের সভাপতিত্বে আফ্রিকার দেশগুলির অংশগ্রহণ শুধু বৃহত্তম সংখ্যাতেই পৌঁছায়নি, আমরা আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-র স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার উপরও বিশেষ জোর দিয়েছি।”

কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, অতিমারি-পরবর্তী বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলিকে অতিক্রম করতে যে দিশার কথা আজ প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিবন্ধে লিখেছেন, সেগুলিকে সম্মেলন শেষের দিল্লি ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করাই লক্ষ্য সাউথ ব্লকের। তিনি উল্লেখ করেছেন তিনটি বিষয়। এক, উৎপাদনকেই চূড়ান্ত না ভেবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে জোর দেওয়া। দুই, বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলে নির্ভরযোগ্যতা বাড়ানো। তিন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সংস্কার করে বহুপাক্ষিকতার প্রসার। মোদীর দাবি, “জি ২০-তে আমাদের সভাপতিত্ব এই তিনটি ক্ষেত্রে পরিবর্তনেই অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে।”

Advertisement

এ কথাও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিতে চাইছেন যে ভারতের প্রয়াস সত্ত্বেও জি২০ শুরু হওয়ার আগে থেকেই যা ডামাডোল দেখা যাচ্ছে, তাতে যৌথ বিবৃতি হবে কি না সন্দেহ। রাশিয়া এবং চিনের শীর্ষ নেতারা আসেননি বলেই শুধু নয়। এখনও পর্যন্ত সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণাপত্রে কুড়িটি দেশের ঐকমত্য হওয়ার কোনও সুনিশ্চিত ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না, বরং অনৈক্যের ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

প্রসঙ্গত, জি২০-র বিদেশমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা যায়নি। এ বারে যাতে তা করা যায়, সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি জি ২০ শেরপাদের বৈঠক বসেছিল গুরুগ্রামে। কিন্তু চূড়ান্ত নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। আমেরিকা-সহ পশ্চিমের ব্লক বদ্ধপরিকর যে, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার একতরফা সামরিক আক্রমণের বিষয়টিকে নথিবদ্ধ করতে হবে জি২০-র ঘোষণায়। রাশিয়া স্বাভাবিকভাবেই তার ঘোর বিরুদ্ধে। মস্কোর পাশে রয়েছে বেজিং।

জি২০-কে ঘিরে যে রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে তা ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে। নয়াদিল্লির উজ্জ্বল আলো আর মোদীর মানুষপ্রমাণ কাট আউট আর পোস্টারে তাকে চাপা দেওয়া যাচ্ছে না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নয়াদিল্লিতে পা দেওয়ার আগেই তাঁর সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান বলেছেন “চিন হয়তো এসে সব ভেস্তে দিতে চাইবে। কিন্তু ভারত, আমেরিকা এবং অন্য সদস্য রাষ্ট্র চিনকে অনুরোধ করছে, তারা যেন গঠনমূলক ভূমিকা নেয়। নিজেদের ভূকৌশলগত স্বার্থকে সরিয়ে রেখে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে মন দেয়।”

বেজিংয়ের দিক থেকে জি২০ শুরুর মুখে মিশ্র বার্তাই পাওয়া যাচ্ছে, যা কিছুটা বিভ্রান্তিকরও বটে। এক দিকে তারা বলছে, জি২০-র আয়োজনে তারা ভারতকে সমর্থনই করেছে। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং-এর কথায়, “চিন বরাবরই জি২০-কে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা সহযোগিতায় বিশ্বাসী।”

কিন্তু সম্মেলনের কয়েক দিন আগে চিন একটি মানচিত্র প্রকাশ করে (যেখানে অরুণাচল প্রদেশ চিনের অন্তর্ভুক্ত) সম্পর্ককে যেচে আরও তিক্ত করেছে। পাশাপাশি চিনকে দেখা গিয়েছে, ভারতের নেপাল নীতির সমালোচনা করতে। নেপালে নিযুক্ত চিনের দূত চেন সং বলেন, “নেপাল এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির প্রতি ভারতের নীতি সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, এবং পারস্পরিক লাভও তাতে নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন