ডিসেম্বরেই ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর, আশ্বাস গডকড়ীর

ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশ্বাস দিলেন কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। চার দিনের উত্তর-পূর্ব সফরে এসে অরুণাচল, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের সড়ক পরিকাঠামোর উন্নয়নে প্রাথমিক ভাবে ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেন নিতিন। তিনি জানান, উত্তর-পূর্বে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে কেন্দ্র ধাপে ধাপে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। তার মধ্যে অসম পাবে ৮ হাজার কোটি টাকা, অরুণাচল ৬ হাজার কোটি, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয় ২ হাজার কোটি টাকা করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৪:২৭
Share:

ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশ্বাস দিলেন কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।

Advertisement

চার দিনের উত্তর-পূর্ব সফরে এসে অরুণাচল, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের সড়ক পরিকাঠামোর উন্নয়নে প্রাথমিক ভাবে ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেন নিতিন। তিনি জানান, উত্তর-পূর্বে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে কেন্দ্র ধাপে ধাপে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। তার মধ্যে অসম পাবে ৮ হাজার কোটি টাকা, অরুণাচল ৬ হাজার কোটি, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয় ২ হাজার কোটি টাকা করে।

গত কাল উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গুয়াহাটিতে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেখানে অসমের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৫ হাজার ৩২০ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্পের কথা জানান নিতিন। মন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের সড়ক উন্নয়নে আরও ২৩৭০ কোটি অতিরিক্ত টাকা এই অর্থবর্ষের মধ্যেই খরচ করতে চলেছে কেন্দ্র। রাজ্যে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ৩৭, ৩৭এ, ৫২ ও ৫২এ নম্বর জাতীয় সড়কের ২৩২ কিলোমিটার রাস্তা ৪ লেনের করা হবে। ডিব্রুগড় ও ডিগবয়ে তৈরি হবে বাইপাস। শিলচর-বদরপুর হাইওয়ে দুই লেনের করা হবে।

Advertisement

নিতিন জানান, রাস্তা সম্প্রসারণ ও তৈরির ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বে বড় বাধা জমি অধিগ্রহণ ও বন-পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র। বন মন্ত্রকের ছাড়পত্রের অভাবে বরাইল রেঞ্জে ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ থমকে গিয়েছে। নিতিন জানান, এই বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই ওই কাজ শেষ হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘এই রাস্তার ৫৭০ কিলোমিটার কাজ শেষ। বাকি ৬৯ কিলোমিটার নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। পার্বত্য কাছাড়ের অনেকটা অংশে ছাড়পত্র মিলছিল না। ধসের জন্যও কাজ থেমে ছিল।’’

ওই বৈঠকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ নিতিনের হাতে ২৪ দফা স্মারকলিপি তুলে দেন। বরাক উপত্যকায় সড়ক যোগাযোগের বেহাল দশা ও জাতীয় সড়কের দুরবস্থার কথা জানিয়ে ওই স্মারকলিপিতে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, বরাক উপত্যকায় জাতীয় সড়কের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ দাবি করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বরাকে সড়কগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বার্ষিক ও নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। সে জন্য কেন্দ্রর কাছে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করার আবেদন জানানো হচ্ছে। নেলি থেকে বৈঠালাংশু, দয়াংমুখ থেকে উমরাংশু-সাংবর-হারাংগাজাও পর্যন্ত ৬২৭ নম্বর জাতীয় সড়ক, ফুলবাড়ি-ধুবুরি-শ্রীরামপুর সড়ক ও ব্রহ্মপুত্রের উপরে নতুন সেতু তৈরি ও ইস্ট-ওয়েস্ট করি়ডরের সঙ্গে ৫২ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগের করারও দাবি জানিয়েছেন গগৈ।

কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রীকে দেওয়া স্মারকলিপিতে গগৈ জানিয়েছেন, কাজিরাঙার মধ্যে দিয়ে যাওয়া ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক উজানি ও নামনি অসমের জীবনরেখা। কিন্তু, বন্যপ্রাণী বাঁচাতে সেই পথে যান চলাচল নিষিদ্ধ করার কথা চলছে। কাজিরাঙার ওই অংশে বন্যপ্রাণ বাঁচিয়ে কী ভাবে যান চলাচল বজায় রাখা যায়, তা নিয়ে সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করা হোক। গুয়াহাটির লাগোয়া ১৯ কিলোমিটার বাইপাসে নিকাশি না থাকায় শঙরে কৃত্রিম বন্যা হচ্ছে। এ নিয়ে দ্রুত কেন্দ্রকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী। বদরপুর, করিমগঞ্জ নদীবন্দর-সহ রাজ্যের ৭টি নদীবন্দরের উন্নয়নের জন্যও কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য চান তিনি।

রাজ্যের জাতীয় সড়কগুলিকে টোলমুক্ত করা, নবঘোষিত ৪২৭, ১১৭এ, ৭১৫এ, ১২৭ই, ৬২৭, ৭০২, ৭০২ডি ও ৩২৯ নম্বর জাতীয় সড়কের নির্মাণকাজের দায়িত্ব উপযুক্ত সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া, ডিব্রুগড় থেকে অরুণাচল প্রদেশের পাংসু পাস পর্যন্ত ৪ লেন রাস্তা সম্প্রসারণ, ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ দ্রুততর করা ও ধসে থমকে থাকা জাটিঙ্গা-হারাঙাজাও অংশে কাজ ফের শুরু করা, পুরোনো হয়ে পড়া সরাইঘাট সেতুর পাশে বিকল্প সেতু নির্মাণ, গ্রামে সড়ক নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, স্থানীয় ঠিকাদারদের সুবিধার্থে যন্ত্রাংশ ব্যাঙ্ক তৈরি করা, কালিয়াভোমরার কাছে ব্রহ্মপুত্রের উপরে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ, বরাক, সুবনসিরি, লোহিত, গঙ্গাধর, আই, বেকি, পুথিমারি, কপিলি ও দিহিং নদীর নাব্যতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান গগৈ।

জলপথে যোগাযোগ বাড়াতে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় আরও ১৭টি জেটি তৈরির কথা ঘোষণা করেন নিতিন গডকড়ী। মন্ত্রী জানান, নদী বন্দর তৈরির জন্য অরুণাচলের নদীগুলিতেও সমীক্ষা চালানো হবে। ব্রহ্মপুত্র ছাড়া অসমের দিখৌ, বরাক, সুবনসিরি, দিহিং, পাগলাদিয়া, কপিলি, আই ও বেকি নদীকে জাতীয় জলপথ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

নিতিন ও রিজিজু অরুণাচলে ৫৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৫টি সড়ক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। যার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। জয়রামুর থেকে পাংসু পাস পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ স্টিলওয়েল রোড ফের খুলে দিয়ে এবং পোটিন ও পাসিঘাট থেকে পাংগিং, চাংলাং, মহাদেবপুর থেকে বুড়ি দিহিং ও লংডিং থেকে কানুবাড়ি পর্যন্ত প্রস্তাবিত দুই লেনের প্রকল্পের উদ্বোধন করে নিতিন বলেন, ‘‘অরুণাচলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে এ রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্র বদ্ধপরিকর।’’ মেঘালয়ে পূর্ব খাসি হিল থেকে উমিয়াম পর্যন্ত শিলং বাইপাস ও জোরাবাট থেকে বরাপানি পর্যন্ত ৪ লেনের রাস্তার উদ্বোধনও করা হয়। জোয়াই থেকে রটাচেরা পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য ৬৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ তিন মাসের মধ্যে শুরু হবে বলে ঘোষণা করেন নিতিন।
তিনি বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বে রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে কেন্দ্র স্থানীয় ঠিকাদারদের অগ্রাধিকার দেবে। এতে কর্মসংস্থানও বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন