হারের রেশ কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করলেন গৌতম রায়। সতীর্থদের নিয়ে ফের জনসংযোগে নেমে পড়েছেন। কোন অবস্থাতেই তিনি যে আর মাটি ছাড়তে রাজি নন তা তাঁর হাবভাবেই পরিষ্কার। ছ’বারের বিধায়ক এবং চার বারের মন্ত্রী গৌতম বরাকের কংগ্রেস নেতা হলেও অসমের রাজনীতিতে সবাই তাঁকে এক ডাকেই চেনেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে কংগ্রেসের ভরাডুবির ফলে তাঁকেও হারতে হয়েছে। এখন আবার ভেসে উঠেছেন।
হারের পর কিছু দিন গৌতমবাবু চুপচাপই ছিলেন। কিছু দিন তাঁকে ক্যারাম খেলে, আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে দেখা গিয়েছিল। তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন বলেও রটেছিল। এখন আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন। তাঁকে আবার ময়দান চষে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। গৌতম রায়কে হাইলাকান্দির মাটিতে নেমে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেও দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি হাইলাকান্দির লালা থানায় পুলিশ-জনতা সমন্বয় সমিতি গঠন নিয়ে কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। প্রথমে একটি কমিটি গঠনের পর কংগ্রেসিদের আপত্তিতে ফের সভা ডেকে নতুন কমিটি গঠন করতে হয়েছে। কমিটি গঠনের এই সভায় ঝাঁকে ঝাঁকে কংগ্রেস কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গৌতম রায়কে কাছে পেয়ে কংগ্রেসিদের মনোবল যেন কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রকাশচাঁদ সুরানা, কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের নেতা জয়নালুদ্দিন লস্কররা রীতিমতো লড়াই করে তাঁদের দলের লোকেদের সমন্বয় কমিটিতে ঢুকিয়েছেন। গত সপ্তাহে লালা-কাটলিছড়া প্রভৃতি জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছেন গৌতমবাবুকে। দিচ্ছেন, উন্নয়নের বার্তা। হাজির থাকছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলিতেও। তাঁর তিরিশ বছরের খাসতালুক, কাটলিছড়া বিধানসভা এলাকার লালা শহরে ‘গৌতম রায় ফ্যান্স ক্লাব’-এ ইতিপূর্বে যে ভাবে তাঁকে রাজনৈতিক রণকৌশল চূড়ান্ত করতে দেখা যেত, অনেকদিন পর ক্লাবে বসেই কর্মীদের নিয়ে পরামর্শ করতে দেখা যাচ্ছে।
মন্ত্রী থাকার সময় গৌতমবাবুকে যেভাবে হঠাৎ হঠাৎ যে কারো বাড়িতে হাজির হতে দেখা যেত, ইদানিং তেমনই হাজির হয়ে যাচ্ছেন মানুষের দরজায়। গৌতমবাবু তাঁর ঘনিষ্ঠদের নির্দেশ দিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। গত কাল হাইলাকান্দি মহিলা কলেজের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রাক্তন এই মন্ত্রী কলেজটির উন্নয়নে শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে কথা বলবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মন্ত্রী থাকার সময় গৌতমবাবু যেভাবে চলতেন, সেই ভাবেই কাজ করতে শুরু করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বরাবরই মানুষের সঙ্গে রয়েছি।’’ ভোটে হেরেছেন বলে ‘কর্তব্য থেকে মুখ ফেরাবেন না’ বলেই জানিয়েছেন।
আর গৌতমবাবু গা ঝাড়া দিয়ে উঠতেই উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন কংগ্রেস কর্মীরা। জেলা কংগ্রেস ভবনে দলীয় কর্মীদের আনাগোনাও গত কয়েকদিনে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।