সংগঠন এবং বুদ্ধির জোরে তিনিই ‘চাণক্য’

নরেন্দ্র মোদীর চাণক্য এই অমিত শাহই। সন্ধ্যায় বৃষ্টিভেজা দিল্লিতে তাঁকেই সঙ্গে নিয়ে ‘বিজয়-উৎসব’-এ মাতলেন মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৩:৩৭
Share:

পুষ্পস্নান: দলের সদর দফতরে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স।

পাঁচ বছর আগে উত্তরপ্রদেশে বাজিমাত করে খোদ নরেন্দ্র মোদীর থেকে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর শিরোপা পেয়েছিলেন। আজ প্রধানমন্ত্রীর থেকে প্রশস্তি জুটল, ‘‘অমিতভাই যশস্বী, পরিশ্রমী সভাপতি।’’

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর চাণক্য এই অমিত শাহই। সন্ধ্যায় বৃষ্টিভেজা দিল্লিতে তাঁকেই সঙ্গে নিয়ে ‘বিজয়-উৎসব’-এ মাতলেন মোদী।

দলের গোটা সংগঠনের রাশ অমিত শাহের হাতে। কিন্তু ‘ব্র্যান্ড-মোদী’তে শান দিতে কখনও ভোলেন না। আজও তার অন্যথা হল না। মোদীর আগেই বিজেপি দফতরে
সেই ব্র্যান্ডের ধার বাড়িয়ে বললেন, ‘‘এটিই বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় নেতা নরেন্দ্র মোদীর ঐতিহাসিক জয়। বুথ ফেরত সমীক্ষা অনেকের হজম হয়নি। ১৭ রাজ্যে কংগ্রেস খাতা খুলতে পারেনি। দেশের জনতা জাতিবাদ, পরিবারবাদ, তোষণের রাজনীতি খারিজ করেছে।’’

Advertisement

লালকৃষ্ণ আডবাণীকে সরিয়ে গুজরাতের গাঁধীনগর থেকে প্রথম বার লোকসভা নির্বাচন করে সাড়ে পাঁচ লক্ষের বেশি ব্যবধানে জিতেছেন। আডবাণীর গত বারের রেকর্ড ছাপিয়ে। আজ সে কেন্দ্রের ভোটারদেরও ধন্যবাদ জানান। খোদ আডবাণীও তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এমন নয়, এই অমিত শাহের সাংগঠনিক কৌশলে গত পাঁচ বছরে বিজেপি হারেনি। উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচন থেকে হাল আমলে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে হেরেছে বিজেপি। তবু আজ বিপুল জনমতের পরে ফের দিল্লির অলিন্দে পুরনো একটি তকমাই ফিরে এল, ‘চাণক্য’।

অমিতের সাফল্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজেপি নেতারা জানান, তিন বছর আগে থেকেই লোকসভার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। অনেকে বলছেন, এ বারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁর হাতে যাচ্ছে। তবে তাঁর হাতে দলের রাশ রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মত অনেকের।

সাফল্য ব্যাখ্যা করে খোদ অমিত বলেন, ‘‘যে ১২০টি আসনে বিজেপি গত ভোটে জেতেনি, সেখানে বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৮০টিতে লড়েছে বিজেপি, ফলও মিলেছে। গরিবদের জন্য মোদী সরকারের যে কর্মসূচি হয়েছে, তাতে দেশের প্রায় ২৪ কোটি পরিবার সুফল পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এমন সাত হাজার ব্যক্তির সঙ্গে নিজে কথা বলেছেন। গোটা দেশে ১৬১টি কল সেন্টার তৈরি হয়েছে। তাতে সাড়ে ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা এই ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছেছেন। ১০ কোটি এসএমএস পাঠানো হয়েছে। ৩ হাজার মানুষ কোনও বেতন না নিয়ে ২ বছর ধরে ২,৫৬৬টি বিধানসভায় মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন।’’

বিরোধীরা যখন থেকে জোট বাঁধার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এই বুথ জয়কেই পাখির চোখ করেছেন অমিত। আজ তাতে সফলও হয়েছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রীও বুথ কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করা শুরু করেছিলেন। ‘মেরা বুথ, সবসে মজবুত’ কর্মসূচি নেওয়া হয়। আজ বিজেপি দফতরে মোদীও এই বিষয়টি নিয়ে বলেন।

বুথ ও সংগঠনের এই শক্তির সঙ্গেই ব্র্যান্ড মোদীকে সুকৌশলে ব্যবহার করেছেন অমিত। ১৬ জানুয়ারি থেকে মোদী প্রচার শুরু করেছেন। প্রথমে এমন ১০০টি লোকসভা কেন্দ্রে প্রচার করেছেন, যেখানে বিজেপি দুর্বল। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর ১৪২টি সভা করেছেন। অমিত নিজেও বেছে বেছে সভা করেছেন। তাঁর সভার সংখ্যা ৩১২টি। ১৮টি রোড-শো করেছেন। রাজধানীর অলিন্দে অমিত শাহ ভোটের ‘মাইক্রোম্যানেজমেন্ট’-এর জন্য পরিচিত। আজ আরও একবার তিনি প্রমাণ করলেন, চাণক্য তিনিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন