ইভিএমে ‘হ্যাকিং’ ঠেকাতে এই ‘বুস্টার’ যন্ত্র ব্যবহার করছে কংগ্রেস। নিজস্ব চিত্র
গণনার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলের কর্মীদের চোখকান খোলা রাখার সতর্ক-বার্তা তো আছেই। শুধু কর্মীদের সতর্কতায় থেমে না থেকে গণনার দিনে প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে কংগ্রেস।
এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র (ইভিএম) নিয়ে বিতর্ক প্রবল। ইভিএমে কারচুপি করে বিজেপিকে জিতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে বলে প্রায় সব বিরোধী দল একসুরে সরব। ইভিএম নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে এ বারই প্রথম সব বুথে ভিভিপ্যাট ব্যবহার করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু কমিশনের আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে ইভিএম ‘হ্যাক’-এর চেষ্টা প্রতিহত করতে কংগ্রেস ব্যবহার করছে বিশেষ ‘ডিভাইস’। এআইসিসি-র তরফে ওই বিশেষ ‘বুস্টার’ যন্ত্র রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে মঙ্গল ও বুধবার এসে পৌঁছেছে। কোন লোকসভা কেন্দ্রের কোন গণনা-কেন্দ্রের বাইরে ওই যন্ত্র নিয়ে দলের কর্মীদের মোতায়েন করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। স্ট্রংরুম পাহারা বা গণনা-কেন্দ্রের বাইরে জমায়েতের পরিচিত রাজনৈতিক পন্থার বাইরে এমন ‘প্রযুক্তিগত চৌকিদারি’ এ বার ভোটেই প্রথম!
রাহুল গাঁধীর উৎসাহেই একটি সংস্থার কাছ থেকে বিশেষ ওই যন্ত্র সংগ্রহ করেছে কংগ্রেস। অনেকটা পোর্টেবল রেডিয়ো সেটের মতো দেখতে ওই যন্ত্র চালানো খুবই সহজ। সংস্থা্র তরফে কংগ্রেসকে পাঠানো নির্দেশিকায় বলা আছে, গণনা-কেন্দ্রের ১২৫ মিটার বা ৩৭৫ ফুট দূরত্বের মধ্যে এই ‘ডিভাইস’ রাখতে হবে। মাটি থেকে তার অবস্থান হতে হবে চার ফুটের বেশি উপরে। গণনা-কেন্দ্রের কাছে কোনও চায়ের দোকান হোক বা গাড়ির মধ্যে এই যন্ত্র নিয়ে বসতে পারলেই হল। বাইরের ঢাকনা খুলে ‘পাওয়ার বাটন’ অন করতে হবে এবং অ্যান্টেনা তুলে দিতে হবে রেডিয়োর মতোই। সংস্থার দাবি, গণনা-কেন্দ্রের মধ্যে কেউ যদি ল্যাপটপ বা যে কোনও যন্ত্রের মাধ্যমে ইভিএম ‘হ্যাক’ করার চেষ্টা করে, তা হলে এই যন্ত্র জ্যামারের মতো হ্যাকারের প্রযুক্তিকে অকেজো করে দিতে পারবে।
তবে যন্ত্র ব্যবহারের কিছু শর্তও আছে। মোবাইল টাওয়ার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা ট্রান্সফরমার, মাইক্রোওয়েভ আভেন ব্যবহার হয়, এমন কোনও রেস্তোরাঁ— এ সবের আশেপাশে এই যন্ত্র না চালানোর নির্দেশিকা আছে। বিমানবন্দরের কাছে যে জায়গা রাডারের আওতায় আসতে পারে বা পুলিশ ও সেনার ব্যবহৃত ওয়াকি-টকি থেকেও দূরে থাকতে হবে। সংস্থার মতে, এই ‘বুস্টার’ যন্ত্র যে পদ্ধতিতে কাজ করে, তা আটকে যেতে পারে এই রকম নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে।
কমিশন অবশ্য বারেবারেই জানিয়েছে, তারা যে ইভিএম ব্যবহার করে, তা ‘হ্যাক’ করা যায় না। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অশোক বর্ধন শেট্টিরও বক্তব্য, ‘‘ভারতে ব্যবহৃত ইভিএমের সিপিইউ-এ যে সফ্টঅয়্যার ভরা থাকে, তা অন্য যন্ত্রে ‘ডুপ্লিকেট’ করা যায় না। সিপিইউ বার করে নিয়ে অন্য সিপিইউ ঢুকিয়ে দিতে পারলে অন্য কথা, তবে সেটাও ভিতরের কারও সাহায্য ছাড়া প্রায় অসম্ভব। ডুপ্লিকেট সিপিইউ লাগাতে পারলে তখন ব্লু টুথ বা রিমোট দিয়ে কিছু করা সম্ভব।’’ কিন্তু কংগ্রেস ‘ঝুঁকি’ নিতে নারাজ।
প্রদেশ কংগ্রেসে কমিউনিকেশনস্ শাখার চেয়ারম্যান অমিতাভ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে ১০টি ‘বুস্টার’ যন্ত্র পাঠিয়েছে এআইসিসি, আমরা তা ব্যবহার করব।’’