জয়ের উচ্ছ্বাস। ছবি: এপি।
তেইশ বছর পর উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপি জোট গড়েছে— এটাই ছিল এ বারের লোকসভা ভোটে মোদী-বিরোধী রাজনীতির সব চেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। এই সুবৃহৎ রাজ্যে যাদব, দলিত, মুসলিমদের এক মঞ্চে নিয়ে এসে নরেন্দ্র মোদীকে কোণঠাসা করা যাবে, এ কথাই চাউর করা হয়েছিল গোবলয়ে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে সাফ করতে পারলে দিল্লির তখত নাগালের মধ্যে আসবে ধরে নিয়ে নিজের প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়েও সরব হয়েছিলেন মায়াবতী।
আজ ফল ঘোষণার দিনে সময় যত এগিয়েছে, খান খান হয়ে গিয়েছে মায়া-অখিলেশের সেই যৌথ-স্বপ্ন। সেই সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে সামনে এনে উত্তরপ্রদেশে ঝড় তোলার কংগ্রেসি চেষ্টাও পড়েছে মুখ থুবড়ে।
জোট শোচনীয় ফল করার পর ময়নাতদন্তে উঠে আসছে অখিলেশ, মায়াবতীর ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ। সূত্র বলছে, একাধিক কারণে জোট গড়েও রোখা গেল না মোদী ঝড়। প্রথমত মনে করা হচ্ছে, যার উপর ভিত্তি করে এই লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিল বিএসপি-এসপি তার মূলেই ছিল গলদ। যে জাতপাতের বিভাজনকে একত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল সেই মুসলিম, দলিত এবং পিছড়ে বর্গের জনজাতিকে এক মঞ্চে নিয়ে আসা যায়নি। উল্টে বিজেপির হিন্দুত্বের ডাকে জাতের ঊর্ধ্বে উঠে দলিতদের অবহেলিত ছোট ছোট গোষ্ঠীও মোদীর নামে ভোট দিয়েছেন। ফলে উচ্চবর্ণের পাশাপাশি যাদব ছাড়া অন্য ওবিসি এবং জাঠভ ছাড়া বল্মীক-সহ বিভিন্ন গোষ্ঠী বিজেপির সঙ্গে গিয়েছে।
ফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, যে সব কেন্দ্রে বিএসপি-র প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন সেখানে এসপি-র মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের অধিকাংশের সমর্থন তিনি পাননি। সূত্রের খবর, মায়াবতীর প্রতি বিশ্বাস কোনও দিনই সেভাবে ছিল না রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। জোট গড়ার পর চটজলদি সংখ্যালঘু তোষণের যে প্রয়াস করেছিলেন বিএসপি নেত্রী, তাকে সন্দেহের চোখেই দেখেছেন তরুণ সংখ্যালঘুরা। অখিলেশ যাদবও পারেননি তাঁদের সাবেকি ভোটকে মায়াবতীর বাক্সে সফল ভাবে জমা করতে।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না হওয়াটাও বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করা হচ্ছে। অখিলেশ ও রাহুলের মধ্যে যোগাযোগ এবং প্রাথমিক সমন্বয় থাকলেও কংগ্রেসকে জোটে নেওয়ার প্রশ্নে বেঁকে বসেন মায়াবতী। অখিলেশও বিএসপিকে সঙ্গে রাখতে কংগ্রেসের জন্য দরজা বন্ধ করে দেন। রাহুল গাঁধীও বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় না-রেখে রাজ্যের ৭০টি আসনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। চমক দিয়ে প্রিয়ঙ্কাকেও উত্তরপ্রদেশের লড়াইয়ে নিয়ে আসে কংগ্রেস। এই তত্ত্ব দেওয়া হয়, কংগ্রেস শুধু উচ্চবর্ণের ভোট কাটবে, এসপি-বিএসপি-র নয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর ফলে বিজেপি-বিরোধী ভোটই ভাগ হয়ে লাভ হয়েছে মোদী-অমিত শাহের। বিজেপি নেতৃত্ব ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশে সাত দফার ভোট হওয়ার ফলে কার্যত সুবিধা হয়েছে মোদীর। রাজ্যের প্রতিটি এলাকায় তিনি সময় নিয়ে যেতে পেরেছেন, জনসভা করেছেন। তামিলনাড়ু, কেরল, পঞ্জাব, তেলঙ্গানায় এক দিনে ভোট হওয়ায় সে সুবিধা তিনি পাননি।
পুলওয়ামা এবং বালাকোট বৃত্তান্ত বিজেপি তথা মোদীর প্রচারে বার বার উঠে এসেছে উত্তরপ্রদেশে। পাকিস্তানে সার্জিকাল স্ট্রাইকের গৌরব বর্ণনা করে জাতীয়তাবাদের ডাক দিয়েছেন তিনি। সাড়া মিলেছে অপ্রত্যাশিত। এর সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথের ধর্মীয় মেরুকরণের লাগাতার মিশ্রণ, বিজেপির ভোটের বাক্সে ঢেউ তুলেছে।