National News

মুম্বইয়ে গুলিবৃষ্টির মধ্যে জন্ম নেওয়া সেই ‘গোলি’ই হতে চায় কালেক্টর

কামা হাসপাতালে জঙ্গি হানা, গুলি বিনিময়, সেই রাতের বীভৎসতার বিষয়ে তখন অবশ্য তেজস্বী কিছুই জানত না।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:৫৯
Share:

২৬/১১ জঙ্গি হানার রাতে জন্ম নেওয়া সেই ‘গোলি’ এখন দশ বছরের কিশোরী। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালের বেডে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন এক মহিলা। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে কার্যত গিলে নিতে হচ্ছে সেই ব্যথা-যন্ত্রণা। চিৎকার করার উপায় নেই। কারণ, দরজার বাইরে তখন স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসছে বুলেট। হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। চিৎকার করলেই শব্দ শুনে চলে আসতে পারে জঙ্গিরা। তার মধ্যেই মহিলা জন্ম দিলেন এক মেয়ের। সেই মেয়েই আজ দশ বছর পূর্ণ করে পা দিল এগারোয়। সেই রাত ছিল মুম্বইয়ের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের রাত। ২৬/১১-র জঙ্গি হানার রাত!

Advertisement

ওই রাতে মুহুর্মুহু গুলির মধ্যে জন্ম হয়েছিল বলে নার্স, চিকিৎসকেরা তার নাম দেন ‘গোলি’। বাংলায় যার অর্থ গুলি। বলিউডের একটি সিনেমার চরিত্রের নামে মা-বাবার দেওয়া তেজস্বিনী শামু চহ্বাণ নামটা শুধু স্কুলে, রেশন কার্ডেই রয়েছে। মুম্বইয়ের ক্যাফে প্যারেড এলাকার সব্বাই এক ডাকে তাকে চেনে ‘গোলি’ নামেই। বস্তির যে কোনও গলি-ঘুঁজিতে গোলির নাম জিজ্ঞাসা করলেই যে কেউ দেখিয়ে দেবেন সাঁই সদন গলির একটি বাই লেনের ছ’ফুট বাই ছ’ফুট ঘরটা। ‘‘সব জানতে হ্যায় উসসে, ও বহোত ফেমাস হ্যায়’’—উপযাচক হয়ে এরকম দু’-চার কথা শুনিয়েও দেবেন আট থেকে আশি। কেউ কেউ অবশ্য ‘বুলেট বেবি’, অথবা ‘মিরাকল বেবি’ বলেও জানেন। আর এঁদো গলির সেই খুপরি ঘর থেকেই ‘গোলি’ স্বপ্ন দেখে কালেক্টর হওয়ার, দেশের জন্য কাজ করার।

নিতান্তই কাকতালীয়। তবু তেজস্বিনীর নাম জুড়ে গিয়েছে ২৬/১১-র সেই অভিশপ্ত রাতের সঙ্গে। কামা হাসপাতালে জঙ্গি হানা, গুলি বিনিময়, সেই রাতের বীভৎসতার বিষয়ে তখন অবশ্য তেজস্বী কিছুই জানত না। কিন্তু তার জন্মবৃত্তান্ত এবং সেই রাতের ঘটনা যেন জীবনের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছে। বাবা শামু চহ্বাণের কাছে বহুবার শুনেছে। নিজের মতো করে ভয়ানক সেই রাতের একটা কাল্পনিক ছবিও এঁকে নিয়েছে সে। যা বলে দিতে পারে কোনও কিছু না ভেবেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: ২৬/১১-র হামলাকারীদের সম্পর্কে তথ্য দিলেই ৩৫ কোটি পুরস্কার, ঘোষণা আমেরিকার

‘‘মাকে ভর্তি করেই বাবা ছুটেছিল ফার্মাসিতে। ওষুধ আনতে। কিন্তু লিফট দিয়ে নামতে গিয়ে যে দৃশ্য দেখেছিল, তাতে হাড় হিম হয়ে গিয়েছিল। গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে লিফটম্যান। রক্তে ভেসে যাচ্ছে লিফটের মেঝে। ওয়াচম্যান লুটিয়ে পড়েছে একটু দূরেই। ওই অবস্থায় পড়িমড়ি করে উপরে উঠেই একটি ঘরে ঢুকে পড়ে বাবা। সেখানে সবাইকে গোলাগুলির কথা বলে। সতর্ক হয়ে যায় সবাই। মুহূর্তে জোরে শব্দ করে বন্ধ হয়ে যায় সব ওয়ার্ডের দরজা। আর তেজস্বিনীদের ঘরের দরজা বন্ধ করে তার পিছনে জড়ো করা হয়েছিল কয়েকটি বেড। যাতে দরজা ভেঙে কেউ ঢুকতে না পারে। আর ভিতরের নার্স, ডাক্তার থেকে রোগীর পরিজনরা সব এক কোণেচুপ করে বসেছিল।’’ প্রায় এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে যাচ্ছিল তেজস্বিনী।

আজ, সোমবার তার জন্মদিন। প্রতি বছর এই দিনে সারা দেশ যখন জঙ্গি হানা নিয়ে শোক প্রকাশ করে, মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করে, বাণিজ্যনগরীর ক্যাফে প্যারেডের এঁদো গলির ছোট্ট ঘরে তেজস্বিনী তখন শপথ নেয়, ‘‘মুঝে কালেক্টর বননা হ্যায়, কিঁউকি ম্যায় দেশ কে লিয়ে কাম করনা চাহতি হুঁ।’’ কখনও গড়গড়িয়ে পড়ে যায় ক্লাসের বই, কিংবা ছবি আঁকে, যা মন চায়। কিশোরী তেজস্বিনীর মনে অবশ্য ওই রাতে জন্ম নিয়ে আক্ষেপ নেই। কারণ জঙ্গি হানার রাতে জন্ম বলেই তাকে সবাই চেনে। সে বিখ্যাত হয়েছে তো সেই রাতের জন্যই।

আরও পড়ুন: চারপাশে আর্তনাদ, কাসভের গুলিতে চোখের সামনে লুটিয়ে পড়ল ওয়ালু…

দাদা শশীকান্ত ক্লাস নাইনে পড়ে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। তাদের বাবা শামু মুম্বইয়ের সাসুন ডকে দিনমজুরের কাজ করেন। মা বস্তির আশপাশেই কয়েকটি বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। সংসার চলে কোনওমতে। তবু ছেলেমেয়েকে ভাল স্কুলে পড়ানোর চেষ্টা করছেন। শশীকান্ত জানাল, কামা হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক বোনের নাম রেখে দেয় ‘গোলি’। তারপর থেকে সেই নামেই সবাই ওকে জানে।

জঙ্গি হানার পর ‘গোলি’কে নিয়ে হইচই কম হয়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে কমে যায় মিডিয়ার লোকজনের যাতায়াত। এমনকি, গত বছর বন্যায় বাড়িঘর সব জলের তলায় চলে যায়। তখন ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয় ‘গোলি’ ও তার পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু কেউ খবর নেয়নি তাদের। আক্ষেপ গোলির বাবা-মায়ের। এখন শুধু এই দিনে দু’-একটি সংবাদমাধ্যম খোঁজ নেয়। বাকি ৩৬৪ দিন ক্যাফে প্যারেড বস্তির গলিঘুঁজিতেই আর পাঁচটা শিশু-কিশোরের মতো দিন কাটে ‘গোলি’র। খোঁজ রাখে না কেউ।

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন