সোনাপুরের দুর্ঘটনায় টনক নড়ল জেলা প্রশাসনের। ডিস্ট্রিক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিশনারের পর অভিযানে নামলেন কাটিগড়ার মহকুমাশাসক। আগামী কাল থেকে পুরো জেলা চষে বেড়াবেন পরিবহণ অফিসাররা।
১৪ জুন রাতে মেঘালয়ের সোনাপুরে খাদে পড়ে শিলচর-গুয়াহাটি নৈশবাস। ২৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর পরই কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন ট্রাভেল এজেন্সিগুলিকে ডেকে জানিয়ে দেন, বাসের ছাদে বা কেবিনে পণ্য পরিবহণ করা চলবে না। ছাদের ক্যারিয়ার কেটে ফেলতে হবে। অতিরিক্ত কেবিনগুলিও সিল করে দিতে নির্দেশ দেন। আজ বিশ্বনাথন জানান, আগামী কাল থেকে কোনও রেহাই মিলবে না। কোনও গাড়িতে ক্যারিয়ার বা অতিরিক্ত কেবিন দেখা গেলেই আটকে দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি দেন।
এ দিকে, অসম-মেঘালয় সীমা সংলগ্ন দিগরখালের হোটেলগুলিতে তল্লাশিতে নেমেছেন কাটিগড়ার মহকুমাশাসক খালেদা সুলতানা আহমদ। এক হোটেল থেকে প্রচুর বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পরে হোটেলটি সিল করে দিয়েছে প্রশাসন। বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির জন্য সেখান থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ রকম অভিযান নিয়মিত চলবে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক খালেদা সুলতানা।
তিনি বলেন, ‘‘ওই অঞ্চলে জাতীয় সড়কের পাশে বহু লাইন হোটেল রয়েছে। নাম-ধাম কিছু নেই। মূল লক্ষ্য, চালকদের কাছে মদ বিক্রি। এর পরই পাহাড়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারান তাঁরা।’’
গত কাল সোনাপুরের দুর্ঘটনায় জখমদের দেখতে নেইগ্রিমস-এ গিয়েছিলেন অসম বিধানসভার উপাধ্যক্ষ দিলীপকুমার পাল। চিকিৎসকরা তাঁকে জানিয়েছেন, মোট ৫ জনকে সেখানে চিকিতসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ধুবড়ির সবুর আলি ছাড়া বাকি সবাই সিআরপিএফ ৩৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান। এর মধ্যে হরি সিং রাঠোর ও সুনু সিংহকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সবুর আলির কিডনিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ডায়ালিসিসের প্রয়োজন। কিন্তু বাড়ির লোকজন এখনও পৌঁছননি। সিআরপি জওয়ান রাজীব কুমার দেউড়ি এবং সুনীল কুমারের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন দিলীপবাবু। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা সুনীল কুমারের পা বহু জায়গায় ভেঙেছে। দুটো অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আরও লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। রাজীবকুমার দেউড়ির মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছিল। অস্ত্রোপচারে বেশ সাড়া মিলেছে।
দিলীপবাবু শিলচরে পৌঁছে জানান, তিনি দুর্ঘটনাস্থলটিও পরিদর্শন করেন। সে দিনের প্রত্যক্ষদর্শী সোনাপুর দুর্গামন্দিরের পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলেছেন।
দিলীপবাবুর আক্ষেপ, আহত-মৃত যাত্রীদের কারও টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারের হদিশ মেলেনি। তিনি এ দিন রামনগরে দুর্ঘটনায় মৃত আব্দুল শুক্কুর লস্করের বাড়ি যান। সেখানে জানতে পারেন, তাঁর বাবা গুয়াহাটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জমি বন্ধক রেখে বাবার চিকিতসার জন্য টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন শুক্কুর। একই দিনে বাড়িতে বাবা-ছেলের মৃত্যুর খবর আসে। মৃতদেহ এলেও টাকার খোঁজ পাননি তাঁরা। দেওয়ান চা বাগান সূত্রেও জানা গিয়েছে, দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মারা গিয়েছেন সেই দুর্ঘটনায়।