জামিন পেয়ে এখন স্বস্তি। মেয়ের সঙ্গে কাফিল খান। —নিজস্ব চিত্র।
স্বপ্ন দেখছেন আবার। গলায় প্রত্যয় ফিরে এসেছে।
‘‘এমন একটা হাসপাতাল করব, যেখানে কোনও দিন অক্সিজেনের অভাব হবে না। ওষুধেরও না। একটা বিছানায় একটাই শিশু থাকবে। আর এনসেফ্যালাইটিসে ওদের মরতে হবে না। নিখরচায় চিকিৎসা হবে।’’
গোরক্ষপুর থেকে টেলিফোনে যখন কাফিল খান কথাগুলো বলছেন, কোলে তাঁর নিজের ১৯ মাসের কন্যা জাবরিনা। বাবাকে আট মাস পরে সামনে পেয়ে একটুও কাছছাড়া করতে চাইছে না।
গত শনিবার জেল থেকে বেরিয়েছেন চিকিৎসক কাফিল খান। গত অগস্টে গোরক্ষপুরে বিআরডি হাসপাতালে চার দিনে অক্সিজেনের অভাবে ৬৩টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় যাঁকে হঠাৎই ‘নায়ক’ থেকে ‘খলনায়ক’ বানিয়ে ফেলেছিল যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
জেল থেকে বেরিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছের উপর। যোগী সাসপেনশন তুলে নিলে ফের কাজে যোগ দেবেন। যদি সাসপেনশন না ওঠে? আনন্দবাজারকে কাফিল বলেন, ‘‘একটা এনসেফ্যালাইটিস ট্রিটমেন্ট সেন্টার তৈরি করব। গোরক্ষপুরেই। পূর্ব ভারতে এনসেফ্যালাইটিসের এটাই আঁতুড়ঘর। অনেকে সাহায্য করতে চান। আপনাদের কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গা থেকে ফোন এসেছে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাধারণ মানুষ পাশে দাঁড়াতে চান। দিল্লি, দক্ষিণ ভারত থেকেও প্রস্তাব পেয়েছি।’’
হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে, কাফিল নিজের টাকায় সিলিন্ডার জোগাড় করে অনেক শিশুকে বাঁচিয়েছিলেন। তাতেই নাকি টাকা না মেটানোয় অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ‘কেচ্ছা’ প্রকাশ্যে এসেছিল। অভিযোগ, নিজের খাস দুর্গে এ হেন ‘চুনকালি’ যোগী বরদাস্ত করেননি। কাফিলের দাবি, হাসপাতালে গিয়ে যোগী তাঁকে শাসিয়েছিলেন, ‘আপনিই কাফিল খান! হিরো হবে ভেবেছেন! দেখছি!’ এর পরেই অভিযোগ দায়ের হয়, কাফিল তাঁর বেসরকারি ক্লিনিকের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার চুরি করেছেন। গ্রেফতার হয়ে যান তিনি।
আপনি তা হলে ‘নায়ক’ না ‘খলনায়ক’? হেসে ওঠেন কাফিল। বলেন, ‘‘এক-একটা সিলিন্ডারের দাম ৩০০ টাকারও কম। ওগুলো কেউ চুরি করে? ২০১৬-র অগস্টে বিআরডি-তে আমার চাকরি পাকা হয়। তার আগে বেসরকারি ক্লিনিকে বসতাম। ওই সময়ের একটা বোর্ড দেখিয়ে বলা হল, আমি প্রাইভেট ক্লিনিক চালাই।’’ কাফিল আরও বলেন, ‘‘ইলাহাবাদ হাইকোর্ট তো জামিনের রায়ে বলেছে, কোনও তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থা যে টাকা মেটানোর তাড়া দিচ্ছিল, টাকা না পেয়ে অক্সিজেন বন্ধ করে দেয়, সেই তথ্যও অজানা নয়।’’
যোগীর সঙ্গে দেখা করে বোঝানোর চেষ্টা করবেন না? কাফিল বলেন, ‘‘আর কী বোঝাব!’’ তাঁর ধারণা, অক্সিজেন-কাণ্ডের আগেই হাসপাতালে পরিকাঠামোর দুরবস্থা নিয়ে সরব হয়ে কর্তৃপক্ষের বিষনজরে পড়েছিলেন তিনি। কাফিলের স্ত্রী শাবিস্তা-ও চিকিৎসক। কাফিল বলেন, ‘‘আট মাস জেলে থাকাটা শরীরের থেকেও মানসিক ধাক্কা। কিন্তু দুঃখের হল, শাবিস্তা ছাড়া আমার কোনও বন্ধু, সহকর্মী জেলে গিয়ে সহানুভূতিও জানাননি।’’
বেরিয়ে আসার পর অবশ্য ‘মানুষের ভরসা’ই কাফিলকে সাহস জোগাচ্ছে। ‘‘জেল থেকে যখন বার হলাম, হাজারখানেক মানুষ বাইরে দাঁড়িয়ে। শুনলাম, আমার মুক্তির দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চলছিল।’’ গত আট মাসে রাজনৈতিক তরজার হাতিয়ারও হয়ে উঠেছেন কাফিল। তাঁর গ্রেফতারি যোগীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অন্যতম অস্ত্র ছিল। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা? কাফিলের জবাব, ‘‘আমি রাজনীতি পারি না। শিশুদের চিকিৎসা করতে পারি। সেটাই করব। তবে তার আগে মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পরিবারের সঙ্গে বাইরে কোথাও যেতে চাই।’’