বন্দি: আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তেলুগু কবি ভারাভারা রাওকে। বুধবার পুণেতে। ছবি: পিটিআই।
রাজনৈতিক বিরোধিতাকে পুরোপুরি ধ্বংস করতেই তাঁদের নিশানা করা হয়েছে বলে হেফাজত থেকে বিবৃতিতে জানালেন সুধা ভরদ্বাজ ও গৌতম নওলাখা। গোয়ার বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক আনন্দ তেলতুম্বের দাবি, তাঁর সঙ্গে জঙ্গিদের মতো আচরণ করেছে পুলিশ।
গত কাল মাওবাদী যোগ ও প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে কবি ও সমাজকর্মী মিলিয়ে মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র পুলিশ। সেই সঙ্গে তল্লাশি চালানো হয় বেশ কয়েক জনের বাড়ি-অফিসে। আজ পুলিশ হেফাজত থেকেই বিবৃতি দিয়েছেন সমাজকর্মী ও সাংবাদিক গৌতম নওলাখা। তাঁর দাবি, ‘‘রাজনৈতিক বিরোধিতাকে পুরোপুরি ধ্বংস করতেই এই পদক্ষেপ করেছে কাপুরুষ সরকার। ভীমা-কোরেগাঁও কাণ্ডে আসল দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ গৌতমের বক্তব্য, ‘‘আমি ৪০ বছর ধরে গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই করছি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শুরু করা অনেক মামলায় হাজির থেকেছি। এ বার আমি মাঠের পাশে বসে খেলা দেখব।’’ প্রায় একই সুরে বিবৃতি দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী ও আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ বলেছেন, ‘‘দলিত অধিকার, জনজাতির অধিকার-সহ যে কোনও বিষয়ে যে-ই বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করবেন তাঁকেই পাকড়াও করা হবে।’’ সুধার বক্তব্য, ‘‘আমার মোবাইল, ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ, সবই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। জি-মেল ও টুইটার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে
পাওয়া তথ্যকেও নিশ্চয়ই হাতিয়ার করা হবে।’’
গোয়ার বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক আনন্দ তেলতুম্বে জানিয়েছেন, পুলিশি তল্লাশির সময়ে তিনি ও তাঁর স্ত্রী গোয়ায় ছিলেন না। বিজনেস স্কুলের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তারক্ষীদের রীতিমতো ধমকধামক দেয় পুলিশ। রক্ষীদের মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয়। ল্যান্ডলাইনের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয় পুলিশ। তার পরে তাঁর বাড়ির ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলতে বাধ্য করা হয় এক নিরাপত্তারক্ষীকে।
তেলতুম্বের বক্তব্য, ‘‘আমি কর্পোরেট ও শিক্ষাজগতে দীর্ঘ দিন ধরেই একাধিক শীর্ষ পদের দায়িত্ব সামলেছি। আমাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেত। তা না করে পুলিশ এমন আচরণ করল যাতে মনে হয় আমি জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত।’’ তেলতুম্বের দাবি, তিনি ছাত্রজীবন থেকেই নানা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কখনওই হিংসার পক্ষে প্রচার করেননি। বস্তুত মাওবাদী হিংসার বিরুদ্ধে প্রচার করেছেন।
তবে ধৃতদের সঙ্গে সরাসরি মাওবাদীদের যোগ আছে বলে এ দিন দাবি করেছে বিজেপি। দলীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের বক্তব্য, ‘‘রাহুল গাঁধী বলছেন দেশে আরএসএস ছাড়া কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তা হলে রাহুল নিশ্চয়ই মাওবাদীদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বলে মনে করেন।’’ সম্বিতের বক্তব্য, ‘‘ওঁর উচিত নিজের জ্ঞান বাড়ানো। কারণ, ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহই বলেছিলেন মাওবাদীরা দেশের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক। শহুরে মাওবাদীরা যে জঙ্গলে সক্রিয় জঙ্গিদের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর সে কথাও বলেছিলেন তিনি। তা হলে কংগ্রেস রাতারাতি ভোল বদলে ফেলেছে?’’
বিজেপির দাবি, যে পাঁচ জনকে এখন গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের অনেককে আগেও গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তখন দিল্লির মসনদে ছিল কংগ্রেস সরকার। তা হলে এঁদের গ্রেফতারিকে জরুরি অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে কেন?