কলেজ থেকে বেরিয়ে পুজোর শপিং-এ গিয়েছিলেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাড়ি ফিরতে একটু দেরিই হয়ে গেল। শহরতলির স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি ফেরার পথ যখন ধরেছেন, রাস্তা তখন খানিকটা শুনসানই। ভয় ভয় করছিল। তাই পার্স থেকে মোবাইলটা বার করে হাতে নিয়ে নিলেন। খানিক দূর এগতেই আশঙ্কা সত্যি হল। বন্ধ ক্লাব ঘরটার সামনে বসে থাকা ছোকরাগুলোর হাবভাব সুবিধার ঠেকছিল না। তাই আগেভাগেই মোবাইলের ‘বিপদ বোতাম’টায় চাপ দিয়েছিলেন। তার পরের ঘটনা ভয়ঙ্কর। কিন্তু, বিপদ বোতামের পাঠানো বার্তা ওই ছাত্রীর অবস্থান এমন অভ্রান্ত ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল পরিজনদের যে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় দুষ্কৃতীদের কবল থেকে। কোনও বিপদ ঘটার আগেই। অপহরণ ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে বন্ধ ক্লাবঘরটার সামনে বসে থাকা সেই ছোকরাগুলো এখন শ্রীঘরে।
সত্যিই যদি মোবাইলে থাকত এমন কোনও বোতাম! কত অঘটনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। মেয়েরা আরও কত নিরাপদে চলাফেরা করতে পারতেন রাতবিরেতেও।
রূপকথা কিন্তু নয়। বাস্তবে এমন বন্দোবস্ত করার কথাই ভাবছে ভারত সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক। সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রী মানেকা গাঁধী নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। দিল্লিতে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ আয়োজিত এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শুক্রবার এ কথা বলেন। কর্মসূচির প্রথম দিনটি নির্ধারিত ছিল নারী সুরক্ষা সংক্রান্ত আলোচনার জন্যই। মানেকা বলেন, আপৎকালীন বার্তা পাঠানোর জন্য যে সব মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, সেগুলিকে কাজে লাগানোর কথাও ভাবা হয়েছিল। কিন্তু, তাড়াহুড়োর মধ্যে বা বিপদের মুখে ওই সব অ্যাপ কাজে লাগানো মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ সেগুলি কিছুটা সময় সাপেক্ষ। মন্ত্রীর মতে, মোবাইলের কিপ্যাডে যে বোতামগুলি রয়েছে, তার মধ্যে যে কোনও একটিকে যদি ‘বিপদ বোতাম’ হিসেবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে ওই একটি বোতামে চাপ দিয়েই বিপদে পড়ার খবর কতগুলি নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে পৌঁছে দিতে কোনও সমস্যা হবে না। মানেকা গাঁধী বলেন, ‘‘আমরা মোবাইল নির্মাতা সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলেছি। জিপিএস ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত বিপদ বোতাম সব মোবাইলে রাখা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছি।’’ জিপিএস-এর সুবিধা থাকার কারণেই আক্রান্তের অবস্থান বার বার জানতে পারবেন পরিজনরা। এই বোতাম মোবাইলে এলে মেয়েদের নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে বিষয়টির রূপায়ণ কত দ্রুত সম্ভব হয়, তা-ই দেখার বিষয়।