সরকারি কর্তাদের পাশাপাশি বারাণসীর বাসিন্দাদেরও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বিধায়ক। —ফাইল চিত্র।
‘‘সরকারি কর্মীদের চোখ বন্ধ রাখার পয়সা চাই, মুখ বন্ধ রাখার পয়সা চাই, কলম না চালানোর পয়সা চাই। গঙ্গার যা হচ্ছে হতে দাও।’’
ভোটের বারাণসীতে এমনই তিতকুটে মন্তব্য ছিটকে এল। যে সে লোকের মুখ থেকে কিন্তু নয়। খোদ বারাণসী দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক শ্যামদেউ রায়চৌধুরী মন্তব্য এটি। প্রবীণ এই রাজনীতিকের দল এখন দেশের শাসন ক্ষমতায়। তিনি যে এলাকার বিধায়ক, সেই বিধানসভা কেন্দ্র খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতায় এসেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার গঙ্গার পরিচ্ছন্নতা পুনরুদ্ধারে কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে দিয়েছে। কিন্তু ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্প নিয়ে আদৌ উচ্ছ্বসিত নন বারাণসীর বিজেপি বিধায়ক। তাঁর দাবি, সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, প্রচুর টাকা ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সরকারি কর্মীদের তথা আমলাদের মানসিকতাই এর প্রধান কারণ বলে বারাণসী দক্ষিণের বিদায়ী বিধায়কের অভিযোগ।
দেখুন ভিডিও:
২০১৪-র নভেম্বরে নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রে গিয়ে গঙ্গার পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় বিশেষ কর্মসূচির সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বারাণসীর অসি ঘাটে গিয়ে তিনি গঙ্গা পুজো করেন। স্বহস্তে গঙ্গার ঘাট সাফাইও করেন। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি উপলক্ষে বারাণসীর ঘিঞ্জি অলিগলি, তস্য গলিতে জোরকদমে সাফাই অভিযান হয়েছিল। ঝকঝকে তকতকে হয়ে উঠেছিল ভগবান বিশ্বনাথের শহর। কিন্তু গঙ্গা বেয়ে জল আবার কিছুটা গড়াতেই ফের যে কে সেই বারাণসী। দশাশ্বমেধ ঘাট থেকে মণিকর্ণিকা ঘাট— সর্বত্র একই ছবি। বিপুল পরিমাণ বর্জ্য রোজ মিশছে গঙ্গায়, আবর্জনা আর পুজোর ফুল-বেলপাতার স্তূপ ঘাটে ঘাটে। গঙ্গা লাগোয়া শ্মশানে পুড়ছে একের পর এক দেহ, পোড়া কাঠ, ছাই, দেহাবশেষ মিশছে জলে।
নিয়মিত গঙ্গার পূজা হয় বারাণসীতে, কিন্তু নিয়মিত গঙ্গা দূষিতও হয় বারাণসীতেই। —নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রীর নিজের কেন্দ্রেই যদি তাঁর স্বপ্নের নমামি গঙ্গে প্রকল্প তথা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের এই হাল হয়, তা হলে দেশের অন্যত্র কী অবস্থা, তা বুঝতে খুব সমস্যা হয় না।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, শিবের জটার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা। কিন্তু শিব ঠাকুরের আপন দেশ বারাণসীতে পৌঁছেই এখন গঙ্গার নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। বিধায়ক আঙুল তুলছেন সরকারি কর্তাদের দিকে। কিন্তু জনবহুল বারাণসীর বাসিন্দাদের দায় কি একেবারেই নেই। দায় রয়েছে। সে কথাও মেনে নিলেন বারাণসীর প্রবীণ বাঙালি তথা বিদায়ী বিধায়ক শ্যামদেউ। সংক্ষিপ্ত হাসি সহযোগে বললেন, ‘‘কাশী (বারাণসী) হল এমন একটা নগর, যেখানে নিয়ম-কানুন বলে কোনও বিষয়কে মানুষ নিজের ভিতরে আনতে পারেননি। শুরু থেকেই অভ্যাস নেই।’’
আরও পড়ুন: শিবরাত্রিতে পাকিস্তানের কটাস রাজ মন্দিরে পুজো সনিয়া-প্রিয়ঙ্কার তরফে
অভ্যাস কি বদলাবে বারাণসী? দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীটির স্বাস্থ্য রক্ষার্থে অভ্যাস কি বদলাবেন সরকারি কর্তারা? বদলালে নমামি গঙ্গে প্রকল্পের সাফল্যের আশা রয়েছে। না হলে শিব ঠাকুরের আপন দেশে, গঙ্গার দশা সর্বনেশে হয়েই থেকে যাবে।