GST

জিএসটি: নির্মলা ও চন্দ্রিমার তরজা

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জিএসটি পরিষদের বৈঠকে জানিয়েছেন, ২০২২-এর জুন মাস পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাবের ভিত্তিতে সব রাজ্যকে বকেয়া ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৫
Share:

রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।

জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মতান্তর রয়েই গেল।

Advertisement

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে দাঁড়িয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন, জিএসটি-র পুরো ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চিঠি লিখেছে। কিন্তু পুরো ক্ষতিপূরণ পেতে হলে রাজ্যকে যে অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল বা এজি-র শংসাপত্র জমা দিতে হয়, পাঁচ বছরের মধ্যে এক বছরের জন্যও রাজ্য সরকার তা জমা দেয়নি। শনিবার দিল্লিতে জিএসটি পরিষদের বৈঠকের পরে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দাবি করলেন, সীতারামনের কথা ঠিক নয়। রাজ্য প্রথম দু’বছরের এজি শংসাপত্র দিয়েছে। কিন্তু চন্দ্রিমার দাবির পরেই সীতারামন সাংবাদিক সম্মেলনে যে নথি তুলে ধরলেন, তাতে দেখা গেল, পশ্চিমবঙ্গ এক বছরেরও এজি-র শংসাপত্র দেয়নি।

আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জিএসটি পরিষদের বৈঠকে জানিয়েছেন, ২০২২-এর জুন মাস পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাবের ভিত্তিতে সব রাজ্যকে বকেয়া ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত হিসাবের ভিত্তিতে পুরো ক্ষতিপূরণ পেতে হলে রাজ্যকে এজি-র শংসাপত্র জমা দিতে

Advertisement

হবে। ছ’টি রাজ্য পুরো পাঁচ বছরের এজি-র শংসাপত্র দিয়েছে বলে আজ তাদেরও পুরো ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ নেই। কারণ অর্থ মন্ত্রকের নথি বলছে, পশ্চিমবঙ্গ এক বছরেরও এজি শংসাপত্র দেয়নি।

উল্টো দিকে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আজ ফের বলেছেন, ‘‘২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯-এর এজি শংসাপত্র রাজ্য জমা দিয়েছে। পরের তিন বছরের বাকি রয়েছে। খুব শীঘ্রই তা দিয়ে দেওয়া হবে। ওই তিন বছরের জন্য রাজ্যের প্রায় ২,৪০৯ কোটি টাকা পাওনা।’’ চূড়ান্ত হিসেবনিকেশ করে এজি-র শংসাপত্র না পাঠানো পর্যন্ত এর মধ্যে কিছুটা মিটিয়ে দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেন চন্দ্রিমা। কিন্তু সীতারামন জানিয়ে দিয়েছেন, এজি-র শংসাপত্র পেলেই পুরো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। চন্দ্রিমার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এজি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন, রাজ্য সরকারের নন। তিনি যদি শংসাপত্র দিতে দেরি করেন, তার জন্য রাজ্য কেন বঞ্চিত হবে?’’

২০১৭-র জুলাই মাস থেকে জিএসটি চালুর সময় ঠিক হয়েছিল, ২০১৫-১৬-র ভিত্তিতে প্রতি বছর রাজ্যগুলির ১৪% রাজস্ব আয় বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে কেন্দ্রীয় সরকার। পাঁচ বছর পর্যন্ত এর থেকে রাজ্যের কম আয় হলে কেন্দ্র সেই ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেবে। সেই হিসেবে ২০২২-এর জুন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। প্রথমে প্রাথমিক হিসেবের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ মেটানো হয়। পরে রাজ্য এজি-র শংসাপত্রের সঙ্গে চূড়ান্ত হিসেবনিকেশ করলে পুরো ক্ষতিপূরণ মেটানো হয়।

সীতারামন আজ বৈঠকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক হিসেবে মে মাস পর্যন্ত আগেই সব রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। এ বার জুন মাসের জন্যও রাজ্যগুলিকে ১৬,৯৮২ কোটি টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। জিএসটি সেস তহবিলে এত টাকা না থাকলেও আপাতত কেন্দ্র নিজের ঘর থেকে তা মিটিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ পাচ্ছে ৮২৩ কোটি টাকা। যে ছ’টি রাজ্য পুরো পাঁচ বছরের এজি-র শংসাপত্র দিয়েছে, তাদের জন্য আরও ১৬,৫২৪ কোটি টাকা মেটানো হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সেই তালিকায় নেই।

জিএসটি আপিল ট্রাইব্যুনাল নিয়েও আজ কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ-সহ কিছু রাজ্যের মধ্যে মতভেদ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের দাবি ছিল, জাতীয় আপিল ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি রাজ্যের ট্রাইব্যুনাল তৈরি হোক। কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাতীয় স্তরে ট্রাইব্যুনালের একটি প্রধান বেঞ্চ হবে। রাজ্যে রাজ্যে তারই বেঞ্চ তৈরি হবে। তবে রাজ্য স্তরে বেঞ্চে দু’জন বিচারবিভাগীয় সদস্যের সঙ্গে একজন কেন্দ্রের ও একজন রাজ্যের সদস্য থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পানমশলা, গুটখা, তামাকে কর ফাঁকি রুখতে মোট মূল্যের উপরে সেসের বদলে নির্দিষ্ট পরিমাণ লেভি বসানো হবে বলেও ঠিক হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন