বিজেপির জয়, রাহুলের উদয়

দু’দশকে গুজরাতে সব থেকে কম আসন পেল বিজেপি। সৌজন্যে রাহুল গাঁধী। যাঁর দল মোদীর জন্মস্থানেও হারিয়ে দিয়েছে বিজেপিকে! বিড়ম্বনা ঢাকতে সন্ধ্যায় বিজেপি দফতরে এসে তাই মোদী ফিরলেন উন্নয়নের স্লোগানে।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৬
Share:

জয়-মালা: নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সোমবার নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে। ছবি: পিটিআই

হিমাচল প্রদেশে অনায়াস জয়। গুজরাতে বাইশ বছরের ক্ষমতার ক্লান্তি আর অসন্তোষকেও হারিয়ে দিলেন। কিন্তু নিজের মাঠের বাইশ গজেই সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারলেন না নরেন্দ্র মোদী। প্রয়োজনের থেকে মাত্র সাতটি আসন বেশি পেয়ে ৯৯-তেই আটকে গেল তাঁর দল। দু’দশকে গুজরাতে সব থেকে কম আসন পেল বিজেপি।

Advertisement

সৌজন্যে রাহুল গাঁধী। যাঁর দল মোদীর জন্মস্থানেও হারিয়ে দিয়েছে বিজেপিকে! বিড়ম্বনা ঢাকতে সন্ধ্যায় বিজেপি দফতরে এসে তাই মোদী ফিরলেন উন্নয়নের স্লোগানে। দলকে চাঙ্গা করতে আসন কমার দায় চাপালেন রাহুল গাঁধীদের ‘জাতিবাদের বিষ’ ছড়ানোর রাজনীতির উপর। সিলমোহর বসালেন জিএসটি সিদ্ধান্তে। বললেন, ‘‘সংস্কারের জন্য তৈরি দেশ।’’ আর গুজরাতবাসীদের সতর্ক করলেন বিরোধীদের ‘ষড়যন্ত্র’ ও ‘চালাকির’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। দলের নেতারা কবুল করছেন, ১৯ রাজ্যে সরকার গড়েও ’১৯ সালের আগে এখন এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিজেপি। অমিত শাহকে তাই এখন থেকেই সামনের বছর কর্নাটক, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরার ভোটে ‘জয়ে’র কথা শোনাতে হল!

আরও পড়ুন: অস্বস্তি ঢাকতে চড়া সুরে মোদী, মুখরক্ষার জয় বলে কটাক্ষ মমতার

Advertisement

দু’টি রাজ্য জিতেও যে স্বস্তিতে নেই মোদী, ভোটের ফলেই তা স্পষ্ট। গুজরাতে ম্যাজিক নম্বর ৯২-এর থেকে মাত্র সাতটি আসন বেশি পেয়ে সরকার গড়লেও কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি দশটি আসনে এক হাজার এবং ১৬টি আসনে তিন হাজারেরও কম ভোটে জিতেছে। কংগ্রেসের অনেকেই বলছেন, মণিশঙ্কর আইয়ার, কপিল সিব্বলদের বেফাঁস কথায় দ্বিতীয় দফায় মেরুকরণের ফায়দা তোলার সুযোগ না পেলে রাজ্যটি বিজেপির হাতছাড়াও হতে পারত।

বিজেপির পাল্টা দাবি, তারাও ১০টি আসনে এক হাজারের কম ভোটে হেরেছে। না হলে সহজেই ‘শতরান’ হয়ে যেত! অসন্তোষের হাওয়া ছিলই। রাহুল তিন তরুণ নেতাকে নিয়ে ভরপুর চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু বিরোধী হাওয়াকে একজোট করতে পারেননি। তার উপর ‘ব্র্যান্ড মোদী’র ঝোড়ো প্রচার আর অমিত শাহের ‘মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট’ই শেষরক্ষা করেছে। অমিত শাহের দেড়শো আসনের ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেনি বিজেপি। অমিতের সাফাই, ‘‘আগে জানতাম না, কংগ্রেস এ ভাবে নিচু স্তরের প্রচার আর জাতিবাদের রাজনীতি করবে।’’

কংগ্রেসের বক্তব্য, মেরুকরণের রাজনীতি তো বিজেপিই করেছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় হিন্দু তাস খেলেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ‘গুজরাতের সন্তান’ বলে ভোট টানতে হয়েছে। গোটা প্রচারে রাহুলের অনুন্নয়নের প্রশ্নের একটিরও জবাব দেননি মোদী, আর আজ ভোট মেটার পরে উন্নয়নের বুলি আওড়াচ্ছেন! পরিস্থিতি এমন যে, গুজরাতে ছ’জন মন্ত্রী থেকে শুরু করে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হেরে গিয়েছেন। সৌরাষ্ট্র-কচ্ছ ও পাতিদার এলাকাতেও ধস নেমেছে বিজেপির। গ্রামে মাত করে দিয়েছে কংগ্রেস। শহর দিয়ে ক্ষত মেটাতে হয়েছে মোদীর দলকে। হিমাচলের ফল জানাই ছিল, তার উপর রাহুল সেখানে সে ভাবে প্রচার না করার ফায়দাও তুলেছে বিজেপি।

আজ সকালে ভোটবাক্স খোলার পরে কংগ্রেসই হু-হু করে জিতে যাচ্ছিল। বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরাও রাহুলকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছিলেন। বিজেপি দফতরে মিষ্টি বিলি, বাজি ফাটানোও বন্ধ রাখা হয়েছিল। বেলা গড়াতে ছবি পাল্টাতে শুরু করে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন বিজেপি নেতারা। স্মৃতি ইরানি বলেন, ‘‘যো জিতা ওহি সিকন্দর।’’ মোদী বলছেন, ‘‘দু’বার জিতলেই যেখানে বড় ব্যাপার ধরা হয়, টানা ছ’বার জেতা কি কম কথা? আমি গুজরাত ছাড়ার পরেও এই জয়ে দ্বিগুণ খুশি।’’

দু’রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, এ বার তা নিয়েই চর্চা জোরকদমে। দলের অনেকে গুজরাতে এক পাতিদারকে মুখ্যমন্ত্রী করার পক্ষপাতী। নিতিন পটেল, মনসুখ মান্ডাভিয়াদের নাম ঘুরছে। আবার হিমাচলে প্রেমকুমার ধুমলের হারের পরে ভাবতে হবে নতুন নাম নিয়ে। জগৎপ্রকাশ নড্ডার পাশাপাশি সঙ্ঘের অজয় জামালের মতো নাম নিয়েও চর্চায়। আপাতত দুই রাজ্যে দলের ‘পর্যবেক্ষক’ পাঠিয়ে সময় কিনছে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন