মুখ বদলে কি বদলাবে রেল

সততার জন্য প্রভুকে প্রধানমন্ত্রী পছন্দ করতেন। কিন্তু রেলের যে কোনও জিনিস কেনা থেকে স্ক্র্যাপ বিক্রি, নিয়োগ অনলাইনে শুরু করায় দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের চক্ষুশূল হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০২
Share:

লাইনবদল: সুরেশ প্রভুর থেকে দায়িত্ব বুঝে নিলেন নয়া মন্ত্রী পীযুষ গয়াল। সোমবার রেলভবনে। ছবি: পিটিআই।

পরিবর্তন হওয়ার ছিল। প্রত্যাশিত ভাবেই গতকাল তা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় রেলমন্ত্রীর ঘরে এসে পীযূষ গয়ালের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন বিদায়ী রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। কিন্তু রেল ভবনের অলিন্দের গুঞ্জন, মুখ তো পরিবর্তন হল। সমস্যা নেই নীতি নিয়েও। কিন্তু দিশা কি আদৌ বদলাবে? নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ গয়ালের হাত ধরে গা-ঝাড়া দিয়ে কি উঠতে পারবে রেল? না কি তলিয়ে যাবে আরও অন্ধকারে?

Advertisement

আরও পড়ুন: সংগঠনেও বদলের প্রস্তুতি অমিতের

রেলমন্ত্রী হিসেবে সুরেশ প্রভু শুরুটা খারাপ করেননি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাঙ্ক আর দেশীয় বাজারে এলআইসি থেকে বিপুল অর্থের ঋণের ব্যবস্থা করে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে হাত দেন। কিন্তু মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। এক রেলকর্তার কথায়, ‘‘গত দেড়-দু’বছর ধরে হঠাৎ করে প্রভু সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর হয়ে পড়েন। রেল চালাচ্ছিলেন টুইটার দিয়ে।’’ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পরিবর্তে জোর দেন নেহাতই ‘রূপচর্চায়।’ রেলের বাহ্যিক কিছু গুরুত্বহীন কাজেই মেতে থাকেন তিনি। হাত থেকে চলে যায় রেল বাজেটও। অভিযোগ, গত দু-আড়াই বছরে আম জনতার সমস্যা শুনতে রেলে চড়া তো দূরে থাক, রেল দুর্ঘটনাগুলিতে নিজে না গিয়ে প্রতিমন্ত্রীদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দিতেন তিনি। প্রভু সম্বন্ধে আমলাদের অভিযোগ হল, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা। যে কোনও ফাইল সুরেশ প্রভুর দফতরে গেলে তা নিয়ে ছাড়পত্র পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত। তুলনায় গয়াল অনেক বেশি দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন বলেই আমলারা মনে করেন।

Advertisement

সততার জন্য প্রভুকে প্রধানমন্ত্রী পছন্দ করতেন। কিন্তু রেলের যে কোনও জিনিস কেনা থেকে স্ক্র্যাপ বিক্রি, নিয়োগ অনলাইনে শুরু করায় দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের চক্ষুশূল হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বাবুতন্ত্রের মৌচাকে ঢিল মারলেও আমলাদের শাসন করার মতো ব্যক্তিত্বের অভাব ছিল সদা হাস্যময় প্রভুর। তুলনায় গয়াল অনেক বেশি একগুঁয়ে। কী ভাবে আমলাতন্ত্রকে বাগ মানিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয় সেই বিদ্যা আয়ত্তে রয়েছে পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট গয়ালের। এ দিকে সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানি। তিনিও কড়া ধাতের অফিসার। ফলে আবার দ্রুত মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানের মধ্যে ব্যক্তিত্বের ঠোকাঠুকির আশঙ্কা করছে রেলভবন।

আজ দায়িত্ব গ্রহণের পরেই প্রথমে লোহানিকে ডেকে নেন গয়াল। তারপরে গোটা রেল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। সূত্রের খবর, আজকের বৈঠকে মূলত দু’টি বিষয়ে উপরে জোর দিয়েছেন গয়াল। প্রথমত, সুরক্ষা। রেলে কী ভাবে দুর্ঘটনা কমানো যায় তার জন্য রেলকর্তাদের মতামত চান গয়াল। বৈঠকে সুরক্ষা প্রশ্নে কেন্দ্রের কাছ থেকে অর্থ সাহায্যের জন্য দরবার করেন আমলারা। যদিও গয়াল আপাতত টিকিটে ‘সুরক্ষা সেস’ বসিয়ে ওই টাকা তোলা যায় কি না তা খতিয়ে দেখার প্রস্তাব দিয়েছেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হল রেলের আর্থিক অবস্থা। বর্তমানে যাত্রী ভাড়ায় রেলকে বছরে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কারমুখী পথে চলা গয়াল এ ক্ষেত্রেও রেল কী ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে তা খুঁজে দেখার জন্য রিপোর্ট বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন