Harsimrat Kaur Badal

কৃষি সংস্কার নিয়ে মনকষাকষি, চাপের মুখে পদত্যাগ হরসিমরতের

পঞ্জাবের চাষিরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, কৃষি ক্ষেত্রের সংস্কারে সমর্থন জানালে সাংসদদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১৪
Share:

হরসিমরত কউর বাদল।—ছবি পিটিআই।

পঞ্জাবের চাষিরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যে সাংসদরা কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের আইনকে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যে ফিরবেন, তাঁদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন অকালি দলের মন্ত্রী কৃষিতে সংস্কারের বিরোধিতা করে মোদী সরকার থেকে পদত্যাগ করছেন না!

Advertisement

সমবেত এই চাপের মুখে অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কউর বাদল আজ মোদীর মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন। এবং পরে দাবি করলেন, বোন হিসেবে চাষিভাইদের পাশে দাঁড়াতে পেরে তিনি গর্বিত। অকালি দলের সভাপতি সুখবীর সিংহ বাদলের স্ত্রী হরসিমরত কেন্দ্রের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রীর পদে ছিলেন। অকালি দল এনডিএ-তে বিজেপির সবথেকে পুরনো শরিক। মোদী জমানায় এই প্রথম কোনও শরিক দলের মন্ত্রী সরাসরি সরকারি নীতির বিরোধিতা করে পদত্যাগ করলেন। এর আগে শিবসেনার মন্ত্রী মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু সেটা মহারাষ্ট্রে বিজেপির সঙ্গে উদ্ধব ঠাকরের জোট ভেঙে যাওয়ার পরে।

সুখবীর, হরসিমরত দু’জনই এখন অকালি দলের লোকসভার সাংসদ। বৃহস্পতিবার কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের দু’টি বিল নিয়ে বিতর্কের সময় সুখবীরও বিলের বিরোধিতা করেন। একই সঙ্গে হরসিমরত পদত্যাগ করছেন বলে ঘোষণা করে দেন। তবে তাঁরা বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন করবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: আশঙ্কা সত্যি করে সুরক্ষার আগল ভাঙল তর্পণের ভিড়

কিন্তু কংগ্রেস-সহ বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ, সরকার জুন মাসে তিনটি কৃষক-বিরোধী অধ্যাদেশ জারি করেছিল। সেখানে কৃষকদের স্বার্থ না দেখে শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা হয়েছে। এত দিন অকালি দল তার সমর্থন করছিল। এখন পঞ্জাব-হরিয়ানা থেকে বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। পঞ্জাবে কৃষক সংগঠনগুলি ২৫ সেপ্টেম্বর বন্‌ধের ডাক দিয়েছে। সেই কারণেই অকালি দল কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করছে। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘চাষিদের স্বার্থ নিয়ে এত চিন্তা থাকলে অকালি দল এখনও এনডিএ-তে রয়েছে কেন?’’ সুখবীরের অবশ্য দাবি, অধ্যাদেশের আগে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে হরসিমরত চাষিদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন।

হরসিমরতের পদত্যাগে অবশ্য বিল পাশ হওয়া আটকায়নি। বিরোধীদের স্লোগান আর ওয়াকআউটের মধ্যেই লোকসভায় দু’টি বিল পাশ হয়ে যায়। রাজ্যসভায় পাশ করানোর আগে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবিও সরকার সর্বদলীয় বৈঠকে খারিজ করে দিয়েছে। রাতে প্রধানমন্ত্রী নিজে টুইট করে বলেন, এই ঐতিহাসিক বিল কৃষিক্ষেত্রে ফড়েদের রাজত্ব দূর করবে। চাষিরা ভাল দাম পাবেন। সরকারি খরিদ এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্যও (এমসিপি) বহাল থাকবে।

লকডাউনের মধ্যেই গত জুন মাসে কৃষি ক্ষেত্রে তিনটি অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। এক, অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন করে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ যত ইচ্ছে মজুত করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। দুই, কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ী, রফতানিকারী ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলি যাতে চুক্তির ভিত্তিতে চাষ করিয়ে সরাসরি চাষিদের থেকে ফসল কিনতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়। তিন, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায় ফসলের দাম নিশ্চিত করতে ও চাষিদের স্বার্থরক্ষায় অধ্যাদেশ জারি হয়।

সংসদের বাদল অধিবেশনে এই অধ্যাদেশগুলিকেই আইনের চেহারা দিতে বিল এনেছে সরকার। অত্যাবশ্যক পণ্য আইন সংশোধনের বিল আগেই পাশ হয়ে গিয়েছে। ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ অধ্যাদেশ ও ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ সংক্রান্ত বিল আজ লোকসভায় পাশ হল। তার আগে কংগ্রেসের সাংসদরা সংসদ চত্বরেই বিলের কপি পোড়ান। তাঁদের অভিযোগ, অম্বানী, আদানিদের মতো ‘বন্ধু’ শিল্পপতিদের সুবিধা দিতেই সরকার এই সব পদক্ষেপ করেছে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি-র ব্যবস্থাও তুলে দেওয়া হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর অবশ্য লোকসভায় দাবি করেন, এমএসপি চালু থাকবে। রাতে মোদীও সে কথা মনে করিয়ে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন