গোপাল মুখোপাধ্যায়
সংসদে বাজেট পেশের আগেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে গিয়ে এক বঙ্গসন্তান শুনিয়ে এসেছিলেন প্রবীণদের যন্ত্রণার কথা। বাজেট পেশের দিন থেকেই যাঁর সরকারি ভাবে শুরু হল প্রবীণ নাগরিকের জীবন।
গোপাল মুখোপাধ্যায়। রেভিনিউ সার্ভিসের এই অফিসার এত দিন অর্থ মন্ত্রকের ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডাইরেক্ট ট্যাক্স’-এর (সিবিডিটি) সদস্য ছিলেন। ৩১ জানুয়ারি অবসর নিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী জমানায় কালো টাকা উদ্ধারের মতো বিভিন্ন প্রকল্পে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু অবসরের আগে অর্থমন্ত্রীর কাছে গিয়ে শুনিয়ে এসেছিলেন প্রবীণদের দুরবস্থার কথা। স্বল্প সঞ্চয় হোক বা ব্যাঙ্কে আমানত, সব জায়গায় সুদ কমছে। অবসরের পর প্রবীণেরা চালাবেন কী করে?
গত কাল বাজেটে প্রবীণদের জন্য এক গুচ্ছ ঘোষণা করেছেন অরুণ জেটলি। বলেছেন, সুদের হার কমায় তাঁদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন সময় প্রবীণেরা তাঁকে জানিয়েছেন। গড় আয়ু যখন বাড়ছে, তখন প্রবীণরা চান সম্মানজনক ভাবে বাঁচতে। তাই বাজেটে সেই মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল বলছেন, অবসরের আগে খোদ সিবিডিটি-র সদস্যও যখন তাঁর কাছে এসে প্রবীণদের উদ্বেগের কথা জানান, তখন সে’টি বেশ নাড়া দেয় অর্থমন্ত্রীকে। আজ যোগাযোগ করা হলে সদ্য অবসর নেওয়া গোপালবাবু মেনে নেন, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এই নিয়ে কথা হয়েছে তাঁর। গোপালবাবু বলেন, ‘‘এখন আমি প্রবীণ নাগরিক। ফলে আমি নিজেও ভুক্তভোগী।’’
তবে গত কাল বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রবীণদের যে সব ছাড় দিয়েছেন, তাতে তিনি খুশি। গত কাল বাজেটে ব্যাঙ্ক, ডাকঘরে জমায় প্রবীণদের করমুক্ত সুদের সীমা বাড়ানো হয়েছে, ফিক্সড ও রেকারিং ডিপোজিটে সুদে টিডিএস থাকছে না, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের সুফল পেনশনভোগীরাও পাবেন, স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম, চিকিৎসা খরচেও ছাড় দেওয়া হয়েছে, জীবন বিমায় ৮ শতাংশ রিটার্ন, লগ্নির সীমাও বাড়ানো হয়েছে। গোপালবাবুর কথায়, ‘‘এক জন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে এই সব সিদ্ধান্তে উপকৃতই হব।’’
তবে, তিনি বলাতেই অর্থমন্ত্রী প্রবীণদের জন্য বাজেটে এত ছাড় দিয়েছেন— এ কথা মানতে রাজি নন গোপালবাবু। তাঁর মতে, বাজেট প্রকাণ্ড কর্মকাণ্ড। অনেক হিসেব-নিকেশ, অনেক দিনের প্রস্তুতি। এর পরেও যদি অর্থমন্ত্রী তাঁর কথায় সাড়া দেন, তা হলে তা নিছক কাকতালীয়।