বৃষ্টির জলে আধডোবা বাসের ছাদ দিয়ে বার করে আনা হচ্ছে যাত্রীদের। বুধবার দিল্লির জাকিরা আন্ডারপাসে। ছবি: পিটিআই।
একের পর এক তির্যক মন্তব্যে ভাসল সোশ্যাল মিডিয়া। যেমন, ‘দিল্লিতে রোজকার যাতায়াতের জন্য আমেরিকার থেকে কয়েকটি বোট কিনে ফেলুক ভারত!’ অথবা ‘মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি ভারতে থাকার ফায়দা নিয়ে এখনই দু’চারটে সাবমেরিন আনিয়ে নেওয়া হোক!’ কারও বা মন্তব্য, ‘নরক বলে যদি কিছু থাকে, তা আছে দিল্লিতেই।’
বুধবার দিল্লি আইআইটি-তে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির সঙ্গে পড়ুয়াদের কথোপকথন অনুষ্ঠানের পর এমনটাই হল। সকালে দু’-আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টি। আর তাতেই রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা কার্যত নদীর চেহারা নিল।
সোশ্যাল মিডিয়ার আগে অবশ্য বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন খোদ কেরিই। যানজটের কারণে অনুষ্ঠানটিতে পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়ে যায় তাঁর। তার পরে টাউনহলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার দেখে কেরি মজা করে বলেন, ‘‘তোমরা যে এখানে আসতে পেরেছ, তার জন্য তোমাদের পুরস্কৃত করা উচিত। তোমরা নিশ্চয় বোটে করে এসেছ!’’ জল ঠেলে কোনও মতে আইআইটি পৌঁছে দেওয়া হয় কেরিকে। কিন্তু রাস্তায় আধ-মানুষ জল ও প্রবল যানজটের কারণে তাঁর জামা মসজিদ বা শীসগঞ্জের গুরুদ্বার সফর বাতিল করতে বাধ্য হয় দিল্লি পুলিশ।
আসলে দিল্লি বা গুড়গাঁও, এক মাস আগের ভুল থেকে কোনও শহরই যে শিক্ষা নেয়নি, তা আজ বেআব্রু হয়ে গেল দু’ঘন্টার মুষলধারে। অন্য বারের মতোই কার্যত জলবন্দি হয়ে গেল দেশের রাজধানী-সহ আইটি হাব গুড়গাঁও ও নয়ডা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্তব্ধ থাকল গোটা ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওন। রাস্তায় ঢেউ জাগিয়ে বাস বা গাড়ি চললেও গতি ছিল মন্থর। প্রবল বৃষ্টি ও জলের কারণে বিকল হয়ে যায় একাধিক ট্র্যাফিক সিগন্যাল। আটকে পড়েন বহু মানুষ।
সব চেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল এইএমস-এর আশপাশে। ফ্লাইওভারের কারণে রাস্তা নিচু হওয়ায় গোটা রাস্তায় কোমর-জল দাঁড়িয়ে যায়। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বাস, গাড়ি, ট্যাক্সি। এর জেরে দিল্লির অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা রিং রোডে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লম্বা যানজট হয় বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। আর জল থইথই এই রিং রোডকে হারিয়ে যাওয়া সরস্বতী নদী বলে সঙ্ঘের উদ্দেশ্যে কটাক্ষও জুটেছে টুইটারে। এই জল জমা অসহ্য, মন্তব্য করেছে দিল্লি হাইকোর্টও।
এ দিন সুন্দরনগরের কাছে একটি আন্ডারপাসে একটি বাসের অর্ধেক অংশ জলের তলায় ডুবে যাওয়ায়, ছাদ দিয়ে যাত্রীদের বার করে আনা হয়। আইটিও, লোদী কলোনি, দিল্লি-নয়ডা রোড, গুড়গাঁওমুখী জাতীয় সড়ক— ডুবে ছিল সব জায়গাই। দিল্লি পুলিশ দফায় দফায় টুইট করে পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য দিলেও, তাতে অবশ্য যানজট এড়ানো যায়নি। দিল্লির সব চেয়ে কাছের স্মার্টসিটি ইন্দিরাপুরম কার্যত দ্বীপের চেহারা নেয়। ঘরবন্দি হয়ে পড়েন স্থানীয় মানুষ। তবে বেলা বারোটার পর বৃষ্টি ধরতেই জল নামতে শুরু করে। বিকেলের পর থেকে পরিস্থিতি বদলায়। বৃষ্টির কারণে গাড়ি কম বার হওয়ায় রাতের দিকে যানজট ছিল একটু কম।
এই জল জমাকে কেন্দ্র করে চিরাচরিত তরজায় নেমে পড়ে বিজেপি পরিচালিত পুরসভা ও অরবিন্দ কেজরীবালের সরকার। উভয় পক্ষেরই দাবি, অন্য পক্ষ কাজ না-করায় এই ভোগান্তি। আপ শিবিরের অভিযোগ, দিল্লি পুরসভা ঠিকমতো নালা সাফ না করাতেই এই অবস্থা। আবার পুরসভার পাল্টা দাবি, দিল্লি সরকার সাফাই কর্মীদের সময়ে বেতন দিচ্ছেন না বলেই সমস্যা। এরই মধ্যে কেজরীবালকে কটাক্ষ করে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর। তাঁর টুইট, ‘‘এ বার সম্ভবত দিল্লির জন্য জোড়-বিজোড় সংখ্যার নৌকা কিনতে হবে!’’
তবে পরিস্থিতি যে খুব একটা বদলাবে, সে আশা দেখা যাচ্ছে না। কারণ গোটা সপ্তাহ ধরেই বৃষ্টি পড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তাই আগামী কয়েক দিনেও একই যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে, আশঙ্কায় ।