বন্দুক হাতে ওরা কে, আতঙ্ক মহারাষ্ট্রে

আট বছরের মাথায় ফিরে এল সেই আতঙ্ক! বেশ কয়েকটা লোক। মুখ ঢাকা। পরনে কালো পাঠান স্যুটের মতো পোশাক। কাঁধে ব্যাকপ্যাক। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। কথাবার্তা শুনে বোঝা যাচ্ছে না, কী ভাষা বলছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০১
Share:

আট বছরের মাথায় ফিরে এল সেই আতঙ্ক! বেশ কয়েকটা লোক। মুখ ঢাকা। পরনে কালো পাঠান স্যুটের মতো পোশাক। কাঁধে ব্যাকপ্যাক। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। কথাবার্তা শুনে বোঝা যাচ্ছে না, কী ভাষা বলছে। মুম্বইয়ের অদূরে রায়গড় জেলার উরনে আজ সকালে এমন কয়েক জন সন্দেহভাজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেছে দুই স্কুলপড়ুয়া। আর তার পরেই ছড়িয়েছে সন্ত্রাসের আতঙ্ক। বাণিজ্যনগরীতে ফিরে এসেছে ২৬/১১-র দগদগে স্মৃতি।

Advertisement

যার জেরে মুম্বই উপকূল বরাবর সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা জারি করেছে নৌসেনা। মুম্বই থেকে উরন পর্যন্ত গোটা এলাকা জুড়ে পুলিশের সঙ্গে একযোগে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে তারা। যারা সন্দেহভাজনদের দেখেছে, উরন এডুকেশন সোসাইটি-র সেই দুই পড়ুয়াকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাদের এক জন প্রথমে জানিয়েছিল, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে দেখতে পেয়েছে সে। কিন্তু অন্য জনের দাবি, সকাল সাতটা নাগাদ রায়গড়ে উরন নৌ ঘাঁটির কাছাকাছি (যেখানে নৌবাহিনীর অস্ত্রসম্ভার রয়েছে) পাঁচ সন্দেহভাজনকে ঘুরতে দেখেছে সে। অচেনা ভাষায় কিছু বলছিল তারা। তবে একটি সূত্রের বক্তব্য, ওই দুই পড়ুয়াই দাবি করেছে, সন্দেহভাজনদের মুখে ‘ওএনজিসি’ এবং ‘স্কুল’— এই দু’টি শব্দ শুনতে পেয়েছে তারা। যা শুনে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। সতর্কতা জারি হয় সব মহলে। তৎপর হয় সন্ত্রাসদমন শাখা।

মুম্বই থেকে সড়ক পথে উরনের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। কিন্তু জলপথে এখান থেকে মুম্বই যাওয়া অনেকটাই সহজ এবং সময়ও লাগে কম। ২৬/১১-র সন্ত্রাসের পরে মুম্বই জানে, কী ভাবে জলপথ ব্যবহার করে গোটা শহরে সেঁধিয়ে গিয়েছিল লস্কর ই তইবার দশ জঙ্গি। তার পরে লিওপোল্ড কাফে থেকে শুরু করে ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস, তাজমহল প্যালেস হোটেল, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, কামা হাসপাতাল, নরিম্যান হাউস— পর পর তছনছ। ১৬৪ জনের প্রাণ নিয়েছিল জঙ্গিরা।

Advertisement

তাই বৃহস্পতিবার কোনও ঝুঁকি নেয়নি প্রশাসন। মুম্বই, নবি মুম্বই, ঠাণে, রায়গড় উপকূল বরাবর চলছে তল্লাশি। কাল বন্ধ রাখা হচ্ছে উরনের ওই স্কুলটি। গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া, রাজ ভবন, বম্বে হাইকোর্ট-সহ সমুদ্রের কাছাকাছি আরও অনেক জায়গাতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

উরনে ওএনজিসির একটি প্রশাসনিক দফতর রয়েছে। রয়েছে নৌসেনার ঘাঁটিও। রয়েছে জওহরলাল নেহরু বন্দর এলাকা। উরনের পাশে নবি মুম্বই থেকে একটু দূরেই ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার। উরন বা তার সংলগ্ন এলাকাও তাই চিন্তায় ফেলেছে পুলিশ ও নৌসেনাকে। যদিও আতঙ্ক যাতে না ছড়ায় তার জন্য প্রথম থেকে পুলিশ-প্রশাসন আশ্বাস দিয়ে এসেছে, সব রকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য তারা তৈরি। বেলা যত গড়িয়েছে, মুম্বই উপকূলে তল্লাশি অভিযানে যোগ দিয়েছে এনএসজি, এটিএস, মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চ, উপকূলরক্ষী বাহিনীও। ভারতের বিভিন্ন বন্দরমুখী জলপথেও জারি হয়েছে সতর্কতা। কোলাবা পুলিশ সতর্ক করেছে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের। মুম্বই উপকূলে অপরিচিত কোনও নৌকো ঢুকতে দেখলে বা সন্দেহভাজন কোনও ব্যক্তির খবর পেলেই জানাতে বলা হয়েছে।

কারণ আট বছর আগে ভারতীয় জলসীমায় ‘বহিরাগত’ একটা যন্ত্রচালিত নৌকো পাল্টে দিয়েছিল অনেক কিছু। ২০০৮-র ২১ নভেম্বর পাকিস্তানের করাচি থেকে দশ লস্কর জঙ্গিকে নিয়ে রওনা দিয়েছিল নৌকোটি। ৩৮ ঘণ্টা জলপথে পাড়ি দিলেও কিচ্ছুটি টের পায়নি ভারতীয় নৌসেনা। ২৩ নভেম্বর ওই জঙ্গিরা ‘কুবের’ নামে একটি ভারতীয় ট্রলার ছিনতাই করে চালককে ঢুকতে বাধ্য করে মুম্বই উপকূলে। ২৬ নভেম্বর সন্ধেবেলা মুম্বইয়ের কাছাকাছি এসে মেরে ফেলা হয় ট্রলার চালককেও। তার পরে জাপানি ইঞ্জিন লাগানো রবারের স্পিডবোটে জঙ্গিরা ঢুকে পড়ে কোলাবা জেটিতে। কাফ প্যারাডের কাছে মচ্ছিমার নগরের তীরে ভেড়ে সেই বোট। তার পরের ঘটনা ভুলতে পারেনি কেউই।

তবে এ দিন স্কুলপড়ুয়াদের বর্ণনায় যে সন্দেহভাজনদের কথা জানা গিয়েছে, রাত পর্যন্ত কোনও এলাকা থেকেই তেমন কারও খোঁজ মেলেনি। রাত যত বেড়েছে, তল্লাশির মাত্রাও বেড়েছে। গুজরাত উপকূলেও জারি হয়েছে সতর্কতা। মুম্বইয়ের তিন জায়গায় মোতায়েন করা হয় এনএসজি কম্যান্ডোদের। দিল্লির বিমানবন্দরের কাছে এনএসজি ঘাঁটিতে মজুত রাখা হয়েছে আরও একটি দলকে। যাতে প্রয়োজন পড়লে দ্রুত তারা মুম্বই উড়ে আসতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন