রেহাই পায়নি দমকলের রেহাই পায়নি দমকলের গাড়িও। পঞ্চকুলায়। ছবি: পিটিআই।
তটস্থ ছিল দুই রাজ্যের প্রশাসন। সতর্ক ছিল কেন্দ্রও। তৈরি ছিল আধাসেনাও। তবু এড়ানো যায়নি মৃত্যু। এবং হাঙ্গামা-ভাঙুচর-আগুন। এই পরিস্থিতিতে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট আজ নির্দেশ দিয়েছে, এই ক্ষয়ক্ষতির পুরো খরচ আদায় করতে হবে ডেরা সচ্চা সৌদার কাছ থেকে। পুলিশ-প্রশাসনের যে সব অফিসার পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন, তাঁদের কাজে কোনও রাজনৈতিক নেতা, এমনকী মন্ত্রীরাও নাক গলাতে পারবেন না। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কোনও রকম প্ররোচনামূলক বিবৃতি দিলে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে। পঞ্জাব ও হরিয়ানায় ডেরা সচ্চা সৌদার ভক্তদের তাণ্ডবের জেরে আজ এই নির্দেশ জারি করেছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
উচ্চ আদালত আজ আরও নির্দেশ দিয়েছে, পঞ্জাব, হরিয়ানা ও কেন্দ্র-শাসিত চণ্ডীগড়ে যে কোনও মূল্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। দরকারে বলপ্রয়োগ করে হলেও। সরাসরি গুলি চালানোর কথা না বললেও সশস্ত্র মোকাবিলারই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পঞ্চকুলার সিবিআই আদালতে ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলায় যখন রায় বেরোবে, তার পুরো ভিডিও তুলে রাখারও নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। যাতে আগুন লাগানো বা নাশকতার কোনও ঘটনা ঘটলে মূল দোষীদের চিহ্নিত করা যায়। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে।
আদালত প্রশাসনকে কঠোর হতে বললেও ঠেকানো যায়নি গুরমিতের ‘শো-ডাউন’। ২০০ গাড়ির কনভয় নিয়ে তিনি হাজির হন কোর্টে। সরকারি হেলিকপ্টার আর ড্রোন শুধু নজর রেখে গিয়েছে। নিম্ন আদালতের রায়ে তাঁদের গুরুদেব ধর্ষণে অভিযুক্ত হতেই ভক্তদের তাণ্ডব যে ভাবে আছড়ে পড়ে দুই রাজ্যে, এমনকী রাজধানীতেও তার প্রাথমিক ধাক্কায় কার্যত দিশেহারাই দেখাচ্ছিল পুলিশকে।
গুরমিত রাম রহিম অবশ্য গত কাল মাঝ রাতে অনুগামীদের উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছিলেন, ‘আপনারা ফিরে যান।’ তাঁর ওই আর্জি আদৌ কতটা আন্তরিক, আর কতটা নিয়মরক্ষার তাগিদে লোক দেখানো— তা নিয়ে সন্দেহ ছিল প্রশাসনের। এমন খবরও ছিল যে, ভিতরে-ভিতরে অন্য প্রস্তুতি চালাচ্ছে গুরমিতের নিজস্ব বাহিনী। ধর্ষণে অভিযুক্ত ‘বাবা’র দর্শন না করে ভক্তকুল ফিরতে রাজি হননি। যাঁকে এত মানেন, তাঁর কথাই মানবেন না? সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে মিলেছে অদ্ভুত জবাব— ‘আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে উপেক্ষা করব ওই নির্দেশ!’ শুক্রবার সেই ‘উপেক্ষা’র আসল চেহারাটা দেখা গেল পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান এমনকী, খাস রাজধানীতেও।
এমন কিছু যে ঘটতে চলেছে, তাঁর আঁচ মিলছিল ক’দিন ধরেই। হাজারে-হাজারে ভক্তরা জড়ো হচ্ছিলেন পঞ্চকুলায়। আজ স্থানীয় আদালতে ধর্ষণ মামলায় রায় ঘোষণার দিনে তাঁদের সংখ্যাটা পৌঁছয় দেড় লক্ষে। ধর্ষণে অভিযুক্ত এক ব্যক্তি তাঁর জনসমর্থনের জোরে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে আইনের শাসনকে, আর প্রশাসন সেটা হতে দিচ্ছে! এই নিয়েই কাল পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট কাঠগড়ায় তুলেছিল দুই রাজ্যের প্রশাসনকে। ১৪৪ ধারা কার্যকর না করা ও পঞ্চকুলায় এত বড় জমায়েত হতে দেওয়াটাই বড়সড় ব্যর্থতা, স্পষ্ট জানিয়েছিল উচ্চ আদালত।
কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল সত্যপাল জৈন আজ জানান, আগামিকাল হাইকোর্টে ফের শুনানি হবে এ নিয়ে। জনস্বার্থের এই মামলাটি করেছেন পঞ্চকুলার এক বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ ছিল, নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সেখানে দেড় লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছে। বিপন্ন আইন-শৃঙ্খলা। বাস্তবে যা আজ সত্য প্রমাণ করে ছেড়েছেন ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত রকস্টার গুরুদেবের অনুগামীরা।