আমলা থেকে বিধায়ক,আশাবাদী পাহাড়

ছিলেন মন্ত্রী-পুত্র। হলেন রাজ্য সরকারের বড় আমলা। এখন ফের বিধায়ক হলেন বীরভদ্র হাগজার। বাবা জয়ভদ্র হাগজার ছিলেন মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রী। বীরভদ্রবাবু রাজনীতি করবেন বলে ২০১০ সালে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নেন।

Advertisement

বিপ্লব দেব

হাফলং শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫৮
Share:

ছিলেন মন্ত্রী-পুত্র। হলেন রাজ্য সরকারের বড় আমলা। এখন ফের বিধায়ক হলেন বীরভদ্র হাগজার।

Advertisement

বাবা জয়ভদ্র হাগজার ছিলেন মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রী। বীরভদ্রবাবু রাজনীতি করবেন বলে ২০১০ সালে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নেন। সেই সময় তিনি ছিলেন রাজ্য বন বিভাগের কমিশনার। প্রথমে নাম লেখান কংগ্রেসে। পরে দল বদলে বিজেপিতে যোগ দেন। অবসরপ্রাপ্ত আইএএস-কে দলে পেয়ে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে ডিমা হাসাও জেলার দলীয় সভাপতির পদে বসান। তারপর হাগজারকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৬ সালের ভোটে জেলার একমাত্র বিধানসভা আসন, হাফলঙে বিজেপির প্রার্থী হন। জিতে বিধায়ক।

স্বাধীনতার পর হাফলং আসন বেশির ভাগ সময়ই কংগ্রেসের দখলে ছিল। বিজেপি এবারই প্রথম বীরভদ্রবাবুর হাত ধরে পাহাড়ে খাতা খুলতে সক্ষম হল। কিন্তু মানুষের প্রত্যাশা কতটা মিটবে, এ নিয়ে পাহাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে এখনই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন মত।

Advertisement

আগের জমানার মতো এখন বিধায়কের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে কোনও কড়াকড়ি নেই। তাঁর বাড়িতে নেই প্রহরাও। ২৪ ঘণ্টাই বিধায়ক নিবাসের সদর দরজা সবার জন্য খোলা। দেখা করার সুযোগ পান সবাই। প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন বীরভদ্রবাবু। তাই মন্ত্রিত্ব পাননি বলে আক্ষেপ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘বিধায়ক থেকেও অনেক কাজ করা যায়। আমি সেটাই করে দেখাতে চাই।’’ ভোটের সময় পাহাড়ের উন্নয়নে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই বিজেপি নেতা। মানুষ স্বেচ্ছা-অবসর নেওয়া আইএএস-এর কথায় আস্থা রেখেই এবার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ভোটদাতাদের একাংশের অভিযোগ, রাজ্যে বিজেপি সরকারের চারমাস পার হতে চলল। পার্বত্য জেলার মানুষ কিন্তু এখনও কোনও পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারছেন না।

বিধায়কের কথায়, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে পাহাড়ি জেলাটি কংগ্রেস শাসনেই ছিল। উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন লাগেনি। আমার লক্ষ্য, জেলার সার্বিক বিকাশ। কিন্তু কয়েক দশক পিছিয়ে থাকা পার্বত্য জেলাকে রাতারাতি বদল করা তো সম্ভব নয়।’’ বীরভদ্রবাবু বলেন, ‘‘নতুন মন্ত্রিসভার বাজেট অধিবেশন শেষ হয়েছে। সরকারি নিয়ম মেনে এখন অর্থ মঞ্জুর হবে। এরপরই উন্নয়নের আসল কাজ শুরু হবে।’’ তিনি অবশ্য পাঁচ মাস, সাত মাস বা বছর হিসেবে কাজের লক্ষ্য-সূচি প্রকাশের পক্ষপাতী নন। তাঁর কথায়, গণতান্ত্রিক নিয়ম মেনেই পাঁচ বছরের কার্যকাল দেখে কাজের বিশ্লেষণ করতে হবে।

উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে হাগজারের বক্তব্য, ডিমা হাসাও জেলার গ্রামীণ রাস্তাগুলির সংস্কার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও পানীয়জলের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান তিনি। বিশেষ করে, পার্বত্য জেলায় পানীয় জলের সমস্যা তীব্র। এই সমস্যা মেটাতে তিনি জোরাই ও দিহাম্বলাই এলাকায় বৃহৎ জলপ্রকল্প গড়ে তুলতে চান। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে তাঁর একপ্রস্থ আলোচনাও হয়েছে। বীরভদ্রবাবু বলেন, ‘‘ডিমা হাসাওকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সে জন্য বাড়তি অর্থ মঞ্জুরির প্রয়োজন।’’ তাঁর আশা, রাজ্য সরকার নিজেই ডিমা হাসাও জেলার পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও তাঁর পর্যটন বিকাশ পরিকল্পনা ডিমা হাসাও জেলা থেকে শুরু করতে চাইছেন। বীরভদ্রবাবু জানান, হাফলং শহরের জঞ্জাল সাফাইয়ে একটি প্রকল্প নেওয়ারও চিন্তাভাবনা রয়েছে তাঁর।

এরই পাশাপাশি, দলের সাংগঠনিক নির্বাচন ও হাফলং টাউন কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে বিধায়কের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ এ নিয়ে দলের বাইরেও বীরভদ্রবাবুর সমালোচনা করছেন। বিধায়ক হওয়ার পর তিনি দলের নেতা-কর্মীদের তেমন গুরুত্ব দেন না বলে আক্ষেপ অনেকের। তাঁদের অভিযোগ, কিছু ঘনিষ্ঠ লোককেই সব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেন তিনি। এ বিষয়ে বীরভদ্রবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমার দরজা সবার জন্য খোলা রয়েছে। আমি উন্নয়নেই বেশি অগ্রাধিকার দিই। উন্নয়নের স্বার্থে দলের সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে যেতে চাই।’’

দলীয় কর্মীদের পরিশ্রমেই যে বিধানসভা নির্বাচনে জিততে পেরেছেন, সে কথা বীরভদ্রবাবু বারবার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘টাউন কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে আমি আগেও বলেছি। আজও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, চেয়ারম্যান নিয়োগে আমার কোনও হাত নেই। কারণ টাউন কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ করার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে পরিষদের সিইএমের উপরেই নির্ভর করে।’’

সমালোচনা? তার তোয়াক্কা করেন না হাফলঙের নতুন বিধায়ক তথা প্রাক্তন আমলা। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিধায়ক হওয়ার পিছনে জেলার প্রতিটি মানুষের অবদান রয়েছে। সকলের শুভেচ্ছাকে সঙ্গী করেই আমি উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন