National News

সমীক্ষাকে ছাপিয়ে যাবেন, নিশ্চিত হিমাচলের ‘ভাবী মুখ্যমন্ত্রী’

মিনিট দশেকের মধ্যেই গুজরাতে দ্বিতীয় দফার ভোট শেষ হয়ে যায়। আর তার ঠিক আধ ঘণ্টার মধ্যেই টিভির পর্দায় আছড়ে পড়ল ‘বুথ ফেরত সমীক্ষা’। গুজরাতের পাশাপাশি সেই সমীক্ষায় উঠে এল হিমাচলেও কংগ্রেসের ভরাডুবির ইঙ্গিত।

Advertisement

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ২০:০৬
Share:

শেষ হাসি কে হাসবেন? বীরভদ্র সিংহ না কি প্রেমকুমার ধুমল? বুথ ফেরত সমীক্ষা আপাতত এগিয়ে রাখছে প্রেমকুমারকেই। ছবি: সংগৃহীত।

তখনও ৫টা বাজেনি। মিনিট দশেক বাকি। দিল্লি থেকে আসা ফোনের ও পারে তখন টিকেন্দর সিংহ পাঁওয়া। হিমাচল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য টিকেন্দর গভীর প্রত্যয়ে উচ্চারণ করছিলেন সেই শব্দগুলো, যা মাসখানেক আগেও তিনি শুনিয়েছিলেন। রাজ্যে কংগ্রেসই থাকছে। বিজেপি-র ‘বন্ধু’রা ক্ষমতার ‘কেক’টা হিমাচলে আর কেটে উঠতে পারবেন না। যুক্তিগুলোও প্রায় আগের মতোই ছিল টিকেন্দরের।

Advertisement

মিনিট দশেকের মধ্যেই গুজরাতে দ্বিতীয় দফার ভোট শেষ হয়ে যায়। আর তার ঠিক আধ ঘণ্টার মধ্যেই টিভির পর্দায় আছড়ে পড়ল ‘বুথ ফেরত সমীক্ষা’। গুজরাতের পাশাপাশি সেই সমীক্ষায় উঠে এল হিমাচলেও কংগ্রেসের ভরাডুবির ইঙ্গিত। ৬৮ আসনের হিমাচল প্রদেশ বিধানসভায় ৫৫টাই নাকি বিজেপি-র দখলে থাকবে। আর কংগ্রেসের ঝুলিতে যাবে ১৩টি। ‘টুডেজ চাণক্য’র এই হিসেবের ধারেকাছেই রয়েছে অন্য সংস্থাগুলির সমীক্ষা। টাইমস্‌ নাও-ভিএমআর যেমন বিজেপিকে ৫১টি আর কংগ্রেসকে ১৭টি আসন দিয়েছে। ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিসের সমীক্ষাতেও বিজেপিকে ৪৭ থেকে ৫৫টি আসন দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসকে দেওয়া হয়েছে ১৩ থেকে ২০টি আসন। ভোটপ্রাপ্তির শতাংশের হিসেবেও বিজেপি কয়েক যোজন এগিয়ে কংগ্রেসের থেকে। চাণক্যের হিসেব বলছে, বিজেপি প্রায় ৫১ শতাংশ ভোট পাবে।

পৌনে ৬টা নাগাদ হিমাচলের হামিরপুরে ফোনে ধরা গেল প্রেমকুমার ধুমলকে। বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়েছেন। একেবারে শেষ মুহূর্তে দল তাঁর নামে সিলমোহর দিয়েছিল। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল টিভিতে দেখে আপ্লুত তিনি। ফোনেও ঝরে পড়ছে তাঁর খুশির ঝলক। ভিন্‌ রাজ্যের সাংবাদিককে জানালেন, ‘‘আপনাকে কী বলেছিলাম! আমরা ৫০-এর উপরে আসন পাব। আজ দেখলেন তো, বাকিরাও আমার সঙ্গে এক মত। যদিও ১৮ তারিখ এর থেকে বেশি আসনই আমরা পাব।’’ ৫৫-র বেশি আসন কি বাড়াবাড়ি নয়? সজোরে হেসে ধুমল বললেন, ‘‘বাড়াবাড়ি নয় মোটেই। মোদীজির নেতৃত্বে এ দেশে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।’’ বুথ ফেরত সমীক্ষা যদিও শেষ কথা নয়। অতীতে বহু বার দেখা গিয়েছে, এই সমীক্ষার সঙ্গে প্রকৃত ফলাফলের কোনও মিল নেই। আগামী ১৮ ডিসেম্বর সোমবার গুজরাত এবং হিমাচলে ভোটগণনা। সেই চূড়ান্ত ফলের সঙ্গে এ দিনের সমীক্ষা মিলবে কি না, তা সময়ই বলবে।

Advertisement

আরও পড়ুন
গুজরাত, হিমাচলে বিজেপি-কেই এগিয়ে রাখছে বুথ ফেরত সমীক্ষা

কিন্তু হিমাচল কংগ্রেস তো গত ৯ নভেম্বর নির্বাচনের পর দাবি করেছিল, তারা ৫০-এর বেশি আসন পাবে। এ দিনের বুথ ফেরত সমীক্ষা তো সে কথা বলছে না! শিমলার বাংলোয় এ দিন সন্ধ্যায় বারে বারেই ফোন বেজে গেল বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর বীরভদ্র সিংহের। তাই ধরা গেল রাজ্য কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখপাত্র তথা এআইসিসি-র সদস্য কুলদীপ রাঠৌরকে। এ দিন শিমলা থেকে তিনি বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, ১৮ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। কারণ, বুথ ফেরত সমীক্ষা বেদ নয়। যাঁরা এই সমীক্ষা করেন, তাঁরাও ঈশ্বর নন।’’ কিন্তু, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ তো ইদানীং দাবি করেন, বুথ ফেরত সমীক্ষার প্রক্রিয়া আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। সমীক্ষা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টাও করছেন পেশাদাররা। কুলদীপের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সব বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় কি? আমি বলছি, হয় না। তাই এ ধরনের সমীক্ষা বেশির ভাগ সময়েই ত্রুটিমুক্ত হয় না।’’

আরও পড়ুন
দেশের ভিতরেই ‘বর্ডার’! এক দিকে হিন্দু, অন্য দিকে মুসলমান

ফের ফোনে ধরা গেল টিকেন্দরকে। জানানো গেল, বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল। শুনে হেসে উঠলেন তিনি। বললেন, ‘‘আমি এখনও একই কথা বলছি। বিজেপি হিমাচলে ক্ষমতায় আসবে না।’’ এ ভাবে উড়িয়ে দিচ্ছেন কী ভাবে? টিকেন্দরের দাবি, ‘‘দেখুন অতীতেও দেখেছি, এ সব সমীক্ষার সঙ্গে বাস্তবের বেশি একটা মিল থাকে না। পুরো উল্টো ফল এসেছে, তেমনটার সাক্ষীও থেকেছি। আর রাজ্যবাসীকে আমি হাতের তালুর মতো চিনি। বিজেপি আর যা-ই হোক এ বার ক্ষমতায় আসছে না।’’

হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন

টিকেন্দরের যুক্তি, কুলদীপ এবং প্রেমকুমারের আশা, বুথ ফেরত সমীক্ষার দাবি— এ সব কতটা সত্যি, কতটা বাস্তব, আর কতটাই বা ঘটমান ভবিষ্যৎ, তার জবাব দেবে ১৮ ডিসেম্বর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন