এইমসের ধাঁচে চিকিৎসকদের বেতন-ভাতার ভাবনা হিমন্তর

ভয় দেখিয়ে বা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না। দু’দফায় স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নিয়ে সে কথা বুঝেছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এখন তাঁর পরিকল্পনা, বেতন-ভাতা বাড়িয়ে তাঁদের বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়া রুখবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

সদ্যোজাত শিশু ও মায়েদের জন্য শিলচর হাসপাতালে নতুন বিভাগের উদ্বোধন করলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। উপস্থিত ছিলেন দিলীপ কুমার পাল, পরিমল শুক্লবৈদ্য, কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। মঙ্গলবার। ছবি: স্বপন রায়।

ভয় দেখিয়ে বা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না। দু’দফায় স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নিয়ে সে কথা বুঝেছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এখন তাঁর পরিকল্পনা, বেতন-ভাতা বাড়িয়ে তাঁদের বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়া রুখবেন।

Advertisement

এক দিনের শিলচর সফরে এসে আজ রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রী হিমন্ত জানিয়েছেন— এইমস-এর মতো বেতন-ভাতা অসমের মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সে জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা এইমস-এর চিকিৎসকদের বেতন, ভাতা ও অন্য সুযোগ-সুবিধা খতিয়ে দেখবেন। অসমেও মেডিক্যালের চিকিৎসকদের ওই হারে বেতন দেওয়া সম্ভব কি না, তা তাঁরা ভেবে দেখবেন।

মন্ত্রী অবশ্য জানান, শুধু চিকিৎসকদের বেতন-ভাতা নয়, রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে এইমস-এর আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে ২ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ শুরু করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এইমসের মতো চিকিৎসা চাইলেই রাতারাতি দেওয়া সম্ভব নয়। সে জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামোর প্রয়োজন। ওই কাজই সরকার করে চলেছে। এর পর আসবে চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপার। তাঁদের বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করতে সরকার বেশি করে বেতন দেওয়ার কথা ভাবছে। বাড়ানো হবে স্নাতকোত্তর স্তরের ডাক্তারি পড়ুয়াদের ভাতাও। মন্ত্রী বলেন, ‘‘মেডিক্যালের চিকিৎসকদের শুধু মেডিক্যালেই চিকিৎসা করতে হবে। তা হলেই পরিকাঠামো কাজে আসবে, মানুষ সেবা পাবেন।’’

Advertisement

তাই বলে মেডিক্যালের চিকিৎসকদের হুমকি দেওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন, তা বলা যায় না। সরাসরি নাম না করেও শিলচর মেডিক্যাল কলেজের হৃদরোগ বিভাগের সদ্য প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক পি সি শর্মাকে তিনি সতর্ক করে দেন। প্রসঙ্গ তুলেছিলেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল। তিনি জানিয়েছেন, বিনা খরচে পেসমেকার পেয়েও ২ বছরে কেউ মেডিক্যালে যাননি। অথচ বেসরকারি হাসপাতালে ওই চিকিৎসকেরই তত্ত্বাবধানে শতাধিক রোগী মোটা টাকা খরচ করে পেসমেকার বসিয়েছেন। পরে মন্ত্রী সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসককে বরপেটায় বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এখন ছুটি নিয়ে শিলচরে এসে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখছেন।’’ সাবধান করে দিয়ে তিনি পাশে বসা কমিশনার-সচিব সমীরকুমার সিংহকে তাঁর ছুটির ব্যাপারে লিখিত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ওই চিকিৎসককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।

হিমন্ত আজ শিলচর মেডিক্যাল কলেজে ‘চাইল্ড অ্যান্ড মাদার কেয়ার হসপিটালের’ উদ্বোধন করেন। ২০০৯ সালে তার শিলান্যাস হয়েছিল। ২০০ শয্যার ইউনিট তৈরিতে ৮ বছর সময় লাগায় তিনি ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ইউনিট তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে ৫ কোটি টাকা নির্মাণকার্যে, বাকি ৩ কোটি টাকায় চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।

শিশুমৃত্যুর হার অন্যান্য জায়গা থেকে বেশি বলেও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আগামী দুই বছরে একে কমানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন। দোষারোপের পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগের প্রশংসা করতেও কার্পণ্য করেননি মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, গত ১ বছরে এখানে ১০ হাজার ২৩৬টি শিশুর জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজারের বেশি সিজারিয়ান। এই সংখ্যা দেশের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ থেকে অনেক বেশি।

শিলচরের উপর থেকে রোগীর চাপ কমাতে করিমগঞ্জেও একটি মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথা সরকার ভাবছে বলে জানান হিমন্ত বিশ্ব। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই সময়ে একটি পরিচালন সমিতি রয়েছে। মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য তার সভাপতি। হিমন্তবাবুর কথায়, ‘‘এর বাইরেও একটি নাগরিক কমিটি তিনি তৈরি করে দেবেন। সেই কমিটি মাসে একবার মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করবেন। সরাসরি তাঁর কাছে তাঁরা রিপোর্ট পাঠাবেন। একই ব্যবস্থা রাজ্যের অন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতেও করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। হিমন্তবাবু সোসাইটি পরিচালিত কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালকে ‘লিনিয়ার এক্সেলেটর’ কেনার জন্য ১০ কোটি টাকার চেক প্রদান করেন। ক্যানসার হাসপাতালের ডিরেক্টর রবি কান্নান জানিয়েছেন, যন্ত্রটি কিনতে ১০ কোটি টাকা প্রয়োজন। সঙ্গে দরকার বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি দালানবাড়ি। রেডিওথেরাপির ওই যন্ত্র সাধারণ দালানে বসানো যায় না। সে জন্য আরও ২ কোটি টাকা লাগবে। তবে তিনি আশাবাদী, বরাক উপত্যকার ১৫ বিধায়কের কাছ থেকে ওই অর্থ তাঁরা পেয়ে যাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন