ডিসেম্বরেই রাম মন্দির তৈরির কাজ শুরু করতে হবে, হুঙ্কার সাধুদের

আগামী ৬ ডিসেম্বরেই অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের স্থলে শুরু করে দিতে হবে রাম মন্দির তৈরির কাজ। দু’দিনের সম্মেলন শেষে সাধুরা আগামিকাল রাম মন্দির নিয়ে তাঁদের চূড়ান্ত অবস্থান জানাবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৫
Share:

মন্দির চাই, বলছে সন্ত সমিতি।

সভাস্থল জুড়ে ক্ষণে ক্ষণে ধ্বনি উঠছে। জয় শ্রীরাম। অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির জন্য চাপ দিতে আজ দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে দু’দিনের সাধু সমাবেশ শুরু হয়েছে। এসেছেন হাজার দুই সাধু। বাংলা থেকেও এসেছেন অনেকে। দেখার মতো তাঁদের উৎসাহ। সকলেরই এক দাবি, আগামী ৬ ডিসেম্বরেই অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের স্থলে শুরু করে দিতে হবে রাম মন্দির তৈরির কাজ। দু’দিনের সম্মেলন শেষে সাধুরা আগামিকাল রাম মন্দির নিয়ে তাঁদের চূড়ান্ত অবস্থান জানাবেন।

Advertisement

অর্থবহ ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখেও আজ উঠে আসে রামনাম। দলের কর্মীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে আলাপচারিতার শুরুতেই মোদী বলেন, ‘‘চার দিন পরেই দীপাবলি। মর্যাদা পুরুষোত্তম রামের লঙ্কাবিজয় উৎসব। এ বার পরশুরাম, লক্ষ্মণ, ভগবান রাম, নিষাদরাজ, সুগ্রীব-হনুমান, মা সীতা, লঙ্কাপতি রাবণ, শঙ্কর-পার্বতীর কথা নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়েছে দেশে। এটাই আমাদের সংস্কৃতি, সংস্কার।’’ দীপাবলির দিনই কেদারনাথ দর্শনে যেতে চাইছেন মোদী। ভোটের আগে হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারও রামের বিশাল মূর্তি স্থাপনের কথা ঘোষণা করতে চাইছে।

কংগ্রেস বলছে, ‘‘ভোটের আগে রাফালের মোকাবিলায় রাম মন্দিরই মোদীর টিকে থাকার একমাত্র অস্ত্র। গত সাড়ে চার বছরে তাঁর বাকি সব হাতিয়ারই ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। এটিও তা-ই হবে।’’

Advertisement

অযোধ্যার জমি নিয়ে মামলার শুনানি কবে হবে, তা স্থির হবে আগামী বছর জানুয়ারিতে। সুপ্রিম কোর্টে সিদ্ধান্তের পরে আরএসএস গত কাল হুঁশিয়ারি দেয়, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার আগে যেমনটি হয়েছিল, এ বার অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির জন্যও সেই রকম তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আজকের এই সাধু সমাবেশ যেন তারই ভিত তৈরির চেষ্টা।

আরও পড়ুন: ‘বিরোধী দলের নেতা তো মিথ্যা বলার কল’ রাফাল নিয়ে রাহুলকে পাল্টা খোঁচা

আরএসএস থেকে বিজেপিতে আসা নেতা রাম মাধব আজ এ নিয়ে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে শুনানি পিছনোয় সমর্থকেরা উদ্বিগ্ন। আরএসএস সে কথাই তুলে ধরেছে।’’ তালকাটোরা স্টেডিয়ামের সমাবেশে অনেকেই জোর গলায় বললেন, দেশের মানুষ চাইছেন রাম মন্দির। অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। অথচ সুপ্রিম কোর্ট কী করে মাত্র তিন মিনিটের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, অযোধ্যা মামলার দ্রুত শুনানির প্রয়োজন নেই? তাঁরা এই হুঁশিয়ারিও দেন যে, সাধুরা এখনও শান্তি বজায় রেখেছেন। কিন্তু প্রয়োজনে বলিদানেও প্রস্তুত তাঁরা।

রামজন্মভূমি ন্যাসের সভাপতি রামবিলাস বেদান্তি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরেই রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হবে। মসজিদ হবে লখনউয়ে। এর জন্য কোনও অধ্যাদেশেরও প্রয়োজন নেই। পারস্পরিক বোঝাপড়াতেই এই কাজ হবে।’’ বিতর্কিত নেত্রী সাধ্বী প্রাচী বলেন, ‘‘৬ ডিসেম্বরই ধুমধাম করে রামমন্দিরের শিলান্যাস হবে। অযোধ্যায় পুরো ‘হিন্দুস্থানের’ হিন্দুদের জড়ো করে মন্দিরের ঘোষণা করা হোক। রামমন্দির হয়ে যাবে।’’

মন্দির নিয়ে বিলম্বে সাধুদের রোষ থাকলেও যে ‘অখিল ভারতীয় সন্ত সমিতি’র অধীনে এই সমাবেশ তথা ‘ধর্মাদেশ’ চলছে, তাদের তরফে জানানো হয়েছে, আইনের মাধ্যমেই সরকারকে মন্দির নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। স্বামী হংসদেবাচার্য, যোগগুরু রামদেবও আইনের পথে মন্দির তৈরির কথা বলেছেন।

কিন্তু প্রশ্ন হল, সুপ্রিম কোর্টে যখন মামলা চলছে, তখন সরকারের পক্ষে এমন আইন প্রণয়ন কি সম্ভব। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি চেলমেশ্বরের অভিমত, ‘‘শীর্ষ আদালতে মামলা বকেয়া থাকলেও সরকার আইন আনতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন