গৃহশিক্ষকের ভরসায় ভাল ফল করিমগঞ্জের পড়ুয়াদের

জেলার বেশির ভাগ স্কুলেই নেই বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক। পড়ুয়াদের একাংশের ভরসা গৃহশিক্ষকই। আর এমনই পরিস্থিতির মধ্যে করিমগঞ্জের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অনেকেই পেলেন ‘লেটার’ বা ‘স্টার: নম্বর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

জেলার বেশির ভাগ স্কুলেই নেই বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক। পড়ুয়াদের একাংশের ভরসা গৃহশিক্ষকই। আর এমনই পরিস্থিতির মধ্যে করিমগঞ্জের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অনেকেই পেলেন ‘লেটার’ বা ‘স্টার: নম্বর।

Advertisement

মেধা তালিকায় জেলার কারও নাম না থাকলেও, এতেও খুশি শিক্ষকদের একাংশ। খুশি অভিভাবক, পরীক্ষার্থীরাও। অভিভাবকদের কেউ কেউ বলছেন— জেলায় কয়েকটি সরকারি স্কুল কার্যত শিক্ষকহীন। কিন্তু তার মধ্যেও ছাত্রছাত্রীরা ভাল নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় করিমগঞ্জের তিন পড়ুয়া মেধা তালিকায় জায়গা পেয়েছিল। আজ ঘোষিত উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে অবশ্য জেলার কারও নাম ছিল না। এ জন্য জেলার বাসিন্দাদের একাংশ আঙুল তুলছেন সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার দিকেই। তাঁরা বলছেন, করিমগঞ্জ শহরের অধিকাংশ সরকারি স্কুলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই। কিন্তু তা-ও সে সব স্কুলের পড়ুয়ারা ভাল নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। এ জন্য অবশ্য অনেকটা কৃতিত্ব পান তাদের গৃহশিক্ষকরাও।

Advertisement

করিমগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয়ের ৬৪ জন পড়ুয়া এ বার কলা শাখায় পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেখানে পাশ করেছেন ৪৬ জন। প্রথম বিভাগে ৫ জন, দ্বিতীয় বিভাগে ১৩ এবং তৃতীয় বিভাগে ২৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। প্রধান শিক্ষক শৈবালকান্তি দাস বলেন, ‘‘এই স্কুলে বাংলা, ঐচ্ছিক বাংলা পড়ানোর শিক্ষক নেই। কিন্তু কেউ কেউ বাংলাতে লেটারও পেয়েছে। ঐচ্ছিক বাংলায় স্টার পেয়েছে এক জন।’’ শৈবালবাবু জানান, ইংরেজি বিভাগেও একটি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞান পড়ানোর এক জনও শিক্ষক নেই। কিন্তু ওই সব বিষয়েও ছাত্ররা ভাল নম্বর পেয়েছে। পাবলিক উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছবিটাও এক। সেখানে নেই বাংলা, ইতিহাস এবং গণিতের শিক্ষক। প্রধান শিক্ষিকা শিবানী রায় জানান, বাংলায় ভাল নম্বর পেয়েছে তাঁর ছাত্ররা।

করিমগঞ্জের বিপিন পাল উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা, ঐচ্ছিক বাংলা, তর্কবিদ্যার শিক্ষক নেই। নীলমণি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই অর্থনীতির শিক্ষক। কিন্তু ছাত্ররা ভাল নম্বর পেয়েছে বলে জানায় প্রধান শিক্ষক রণবীর নাথ সিংহ। মদনমোহন মাধবচরণ উচ্চতর বালিকা বিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে শিক্ষক নেই ২০১৩ সাল থেকে। শিক্ষক নেই অর্থনীতি বিভাগেও।

করিমগঞ্জ জেলার মানুষ বলছেন, এ পরিস্থিতিতেও সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যে ভাল নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন, তাতে আনন্দিত হওয়ারই কথা।

পাশের হারে খুশি হাইলাকান্দি। কাটলিছড়ার প্রিয়া পাল আর হাইলাকান্দির অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য— উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় জেলার কোনও পড়ুয়ার নাম না থাকলেও, এই দু’জনের সাফল্যে খুশি হাইলাকান্দি।

অল্পের জন্য মেধা তালিকা থেকে ছিটকে গিয়েছেন হাইলাকান্দি এস এস কলেজের অনিরুদ্ধ। বিজ্ঞান বিভাগে তিনি পেয়েছেন ৪৫৯ নম্বর। তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের হার ৯২.০৮ শতাংশ।

কাটলিছড়ার এস কে রায় জুনিয়র কলেজের ছাত্রী প্রিয়া ‘অ্যাডভান্সড’ বাংলায় ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। মেয়ের সাফল্যে খুশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সুধাংশু পাল। তাঁর কৃতিত্বে গর্বিত কাটলিছড়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষও। প্রিয়াদেবী ৩৬৬ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

অসম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, হাইলাকান্দি জেলায় এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৩ হাজার ৯২৪ জন পড়ুয়া। পাশ করেছেন ৩ হাজার ১১৩ জন। তাঁদের মধ্যে প্রথম বিভাগ পেয়েছেন ৪৩৭ জন। দ্বিতীয় বিভাগে ৯২৯, তৃতীয় বিভাগে ১ হাজার ৭৪৭ জন পাশ করেছেন। পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৩ হাজার ২৯৭ জন। তার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২ হাজার ৫৪৪ জন পরীক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিলেন ৪১২ জন। পাশ করেছেন ৩৭৪ জন। বাণিজ্য বিভাগে জেলায় ২১৫ জন পরীক্ষায় বসেছিলেন। পাশ করেছেন ১৯৫ জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন