প্রতীকী ছবি।
চলতি বাদল অধিবেশনে বিরোধী রাজনীতিতে বিভেদরেখা স্পষ্ট।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি একত্রে জিএসটি ও জেইই-নিট নিয়ে বিরোধী শিবিরকে সক্রিয় করার চেষ্টা করেছিলেন। ফলে জাতীয় তথা রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। আজ কিন্তু সংসদে ছবিটা ছিল উল্টো। কংগ্রেস এবং তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই অভিযোগ এনে সংসদে সমন্বয়ের প্রশ্নে দূরত্ব তৈরি করল।
তৃণমূল প্রকাশ্যে জানিয়েছে, কংগ্রেস রাজ্যে বিজেপি-র ‘বি’ দলের মতো আচরণ করছে। ফলে দিল্লিতে বিরোধী রাজনীতিতে নেতৃত্বের প্রশ্নে তাদের ‘দাদাগিরি’ বরদাস্ত করা হবে না। তাদের ক্ষোভ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর থেকে অধীর চৌধুরী মমতার সরকারকে নিশানা করে কার্যত বিজেপিকে সুবিধা করে দিচ্ছেন।
উল্টো দিকে কংগ্রেসের অভিযোগ, মুখে যা-ই বলুক, আসলে মোদী সরকারকে চটাতে চান না মমতা। উদাহরণ হিসাবে কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, চিনের সঙ্গে সংঘাত নিয়ে তৃণমূল সংসদের দু’টি কক্ষেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে কার্যত ‘ওয়াকওভার’ দিয়েছে, নিঃশর্ত ভাবে সরকারকে সমর্থন করেছে।
এরই মধ্যে আজ মমতা প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন, ‘শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আগামী এক বছর সুস্থ ও সাফল্যমণ্ডিত হোক’। আগামী বছরেই বাংলায় বিধানসভা ভোট। ফলে মমতার ‘শুভেচ্ছা’ নিয়ে এই আবহে রাজধানীতে কিঞ্চিৎ চর্চা হয়েছে। প্রতি বারের মতোই মমতার তরফে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে গোলাপের তোড়াও।
এ দিকে, আজ কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই জিএসটি নিয়ে ৮টি আঞ্চলিক দল সংসদ চত্বরে ধর্না দেয়। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, কংগ্রেসকে বাইরে রেখে এসপি, শিবসেনা, আরজেডি, এনসিপি, আপ, টিআরএস এবং ডিএমকে-র মতো আঞ্চলিক দলের সঙ্গে বিরোধিতার কৌশল নিয়ে গত দু’দিন আলোচনা চালিয়েছে তৃণমূল। দিল্লির গোল মার্কেট থেকে তৃণমূলেরই কেনা থালা হাতে আজ ওই ৮টি দলের সাংসদেরা গাঁধীমূর্তির পাদদেশে জিএসটি বাবদ রাজ্যের বকেয়া অর্থের দাবিতে স্লোগান তোলেন।
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র বি টিম-এর মতো আচরণ করছে। তারা বিজেপির সঙ্গে গোপনে আঁতাঁত করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর জন্য। তারা রাজ্যে এক রকম আচরণ করবে আর দিল্লিতে বিজেপি-বিরোধিতার কৌশল রচনার ক্ষেত্রে আমাদের উপর দাদাগিরি ফলাবে, এটা আর হবে না।’’ তাঁর কথায়, “অন্য আঞ্চলিক দলগুলিও কংগ্রেস না থাকলে অনেক স্বচ্ছন্দে নিজেদের বিরোধী রাজনীতিটা করতে পারে।’’
কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈয়ের পাল্টা যুক্তি, সনিয়াই জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ নিয়ে সব মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। আর ‘বি-টিম’ কটাক্ষ প্রসঙ্গে অধীর বলেন, “সংসদের তৃণমূল দল বলেছে, পশ্চিমবঙ্গে নাকি বিজেপি ও কংগ্রেস হাত মিলিয়েছে! ‘উল্টা চোর কোতোয়াল কো ডাঁটে’, আজ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বাড়-বাড়ন্ত তৃণমূলের জন্য। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানের কারণ প্রসঙ্গে বিতর্ক হোক টিভি চ্যানেলে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে তৃণমূলের সভানেত্রী-সহ অন্য নেতাদের বিতর্কে চ্যালেঞ্জ করলাম।’’
অধীর-সহ কংগ্রেস নেতাদের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূল বিভিন্ন কারণে দিল্লিতে মোদী-অমিত শাহকে যে চটাতে চায় না তা স্পষ্ট। দু’দিন আগে লোকসভায় যখন চিন নিয়ে সরকার বিরোধীদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন প্রতিবাদে কক্ষত্যাগ করে কংগ্রেস। কিন্তু তৃণমূল সাংসদেরা বসে ছিলেন। কোনও প্রশ্ন করেননি। বৃহস্পতিবারও রাজ্যসভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর চিন নিয়ে বিবৃতির পর কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা, এ কে অ্যান্টনির মতো নেতারা ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে চিন কবে হঠবে এবং ভারত তার জন্য কী ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে কৈফিয়ত চাইলেও তৃণমূল নীরব ছিল। ডেরেক ও’ব্রায়েন শুধুমাত্র বলেন, ‘জয় হিন্দ!’
কেন সরকারকে চিন নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল না? তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “১৯৯৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দলের নীতি— প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে থাকব।’’