শ্রীনগর বিমানবন্দরে অবতরণের সময়ে ‘নাক’ ভেঙে যায় ইন্ডিগোর সেই বিমানের। ছবি: রয়টার্স।
ইন্ডিগোর দিল্লি থেকে শ্রীনগরগামী বিমানটি গত বুধবার পঠানকোটের কাছে ঝোড়ো আবহাওয়ার সম্মুখীন হওয়ার পর প্রথমে ভারতীয় বায়ুসেনার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল। কেন বিপন্ন সেই বিমানকে পথ পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি? কী ভাবে ওই পরিস্থিতিতে বিমানটিকে সাহায্য করা হয়েছিল? এ বার সে প্রসঙ্গে ভারতীয় বায়ুসেনার ব্যাখ্যাও প্রকাশ্যে এল। সংবাদ সংস্থা এএনআই বায়ুসেনার সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, ইন্ডিগোর বিমান বায়ুসেনার নর্দার্ন কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে প্রথমেই তাঁদের পাকিস্তানের নিষেধাজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিকল্প বন্দোবস্ত হিসাবে যোগাযোগ করা হয়েছিল দিল্লির সঙ্গেও।
ভারতের অসামরিক বিমান চলাচল নিয়ামক সংস্থা ডিজিসিএ শুক্রবার একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ইন্ডিগোর বিমান বায়ুসেনার সঙ্গে যোগাযোগ করে পথ বদলের অনুমতি চেয়েছিল। বাঁ দিকে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে বিমানটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। তা না-পেয়ে লাহৌর এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। সেখান থেকেও তাদের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়। এর পর বাধ্য হয়েই বজ্রগর্ভ মেঘের মধ্যে প্রবেশ করতে হয় বিমানটিকে। তাতে ২০০-র বেশি যাত্রী ছিলেন। নিরাপদে শ্রীনগর বিমানবন্দরে ওই বিমানটিকে নামানো হয়েছিল। তবে তার সামনের দিকে ‘নাকের অংশ’ ভেঙে গিয়েছিল। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ইন্ডিগোর পাইলট যোগাযোগ করলে তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া হয় পাকিস্তানের নিষেধাজ্ঞার কথা। পহেলগাঁও কাণ্ডের পরবর্তী সময়ে ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে রেখেছে পাকিস্তান। তাই যাত্রীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই সে দিকে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বায়ুসেনার তরফে এর পর অবিলম্বে যোগাযোগ করা হয়েছিল দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সে দিকে বিমানটিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায় কি না, সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হয়। এর পর বায়ুসেনাই লাহৌরের সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দেয় ইন্ডিগোর পাইলটকে। তবে লাহৌর কর্তৃপক্ষ তাদের আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেননি। বাধ্য হয়ে শ্রীনগরের দিকেই এগিয়ে যান পাইলট। অত্যন্ত দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে পাইলট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে দাবি বায়ুসেনা সূত্রে। ইন্ডিগোর বিমানের এই নির্দিষ্ট ঘটনাটির তদন্ত করছে ডিজিসিএ। সূত্রের খবর, তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত সেই ৬ই২১৪২ বিমানের দু’জন পাইলটকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে দিনের পরিস্থিতিতে তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।
কেন্দ্রের অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু ইন্ডিগোর দুই পাইলটের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পাইলট এবং বিমানকর্মীরা যে ভাবে পরিস্থিতি সামলেছেন, যে ভাবে ওই আবহাওয়ার মধ্যেও বিমানটিকে নিরাপদে নামানো হয়েছে, তাতে তাঁদের কুর্নিশ জানাচ্ছি। কারও কিছু হয়নি, সকলে নিরাপদে আছেন, এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তবে কী ঘটেছিল, বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন।’’