সকালেই ভিড় জমল শিলচরের পেট্রোল পাম্পে। বুধবার স্বপন রায়ের তোলা ছবি।
খবরটা গত রাতেই ছড়িয়ে পড়েছিল বরাক উপত্যকার গ্রাম-গ্রামান্তরে। ৫০০-১ হাজার টাকার নোট অচল হয়ে গেল!
প্রথমে হতবাক হয়ে পড়েন সবাই। পরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আচমকা এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েন অনেকে। কেউ আবার খুব খুশি, কালোবাজারিদের এ বার শায়েস্তা হবে। তারই মধ্যে নিজেদের কাছে থাকা ৫০০ টাকা, ১ হাজারের নোট দ্রুত চালাতে কেউ কেউ আজ সাতসকালে বাজারে ছোটেন। অনেকে যান পেট্রোল পাম্পে। যত তাড়াতাড়ি নোটগুলি চালিয়ে দিলেই যেন স্বস্তি।
কিন্তু যাঁরা বাজারে গিয়ে আগেভাগে ৫০০, ১ হাজার টাকার নোটগুলি চালিয়ে দিতে চাইলেন, তাঁদের ভুল ভাঙে। সবজি ব্যবসায়ী কি পাড়ার মোড়ের ছোট দোকানি, দেশের খবর রাখেন তাঁরাও। মাছের বাজারে অবশ্য এ দিন সকালেও ব্যবসায়ীরা সেগুলি রেখেছেন। তাঁদের বক্তব্য, নোট বাছাবাছি করলে মাছ পচে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে তাঁদের বড় নোট নিতে হয়েছে। তবে এমন যে আগামী কাল থেকে আর হবে না, বার বার জানিয়ে দিয়েছেন। কয়েক জন আবার কম দামে পাঁচশো টাকার নোট রাখার ব্যবসায় মেতেছেন। কাউকে ৪০০ টাকা, কাউকে দেওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা। ৫০০ টাকা হাতে অসহায় অবস্থায় বহু মানুষকে ছুটোছুটি করতে দেখা গিয়েছে। তাঁরাই বেশি পরিমাণে ওই সব দালালের খপ্পড়ে পড়েন।
তবে সমস্যা হয়েছে রোগীর আত্মীয়দের। কয়েকটি ওষুধের দোকান ওই টাকা নেবে না বলে সোজাসুজি জানিয়ে দিচ্ছে। কেউ শর্ত জুড়ছে, খুচরো দেওয়া সম্ভব নয়। ৫০০ টাকার উপরে ওষুধেই একটি ৫০০ টাকার নোট দেওয়া গিয়েছে। এ নিয়ে বেশি বিতর্ক বেঁধেছে পেট্রোল পাম্পে। মানুষ গাড়ি, মোটরসাইকেল নিয়ে লাইন দেয় তেলের ডিপোগুলিতে। কিন্তু সমস্ত পাম্পের এক বক্তব্য, খুচরো দেওয়া যাবে না। যত টাকার নোট তত টাকার তেল নিতে হবে। এতে মুশকিলে পড়তে হয় অনেককে। বচসাও বাঁধে কিছু জায়গায়।
শিলচরের এক পেট্রোল পাম্পে যেমন এক পুলিশকর্মী তেল ভরাতে গিয়ে দেখেন, তাঁর মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্ক ৩৫০ টাকার তেলেই ভর্তি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পাম্পকর্মী কিছুতেই ১৫০ টাকা ফিরিয়ে দেবেন না। পরে সকলের মধ্যস্থতায় বিবাদ মেটে। সকাল থেকে তেলের অতিরিক্ত চাহিদার দরুন বহু পাম্পে বেলা বাড়তেই মজুত ফুরিয়ে যায়। ৫০০, ১ হাজার টাকার নোট অচল হয়ে যাওয়ায় এ দিন বরাকের সামগ্রিক বেচা-কেনা, লেনদেনও অনেক কমে গিয়েছে। প্রায় প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অন্য দিনের তুলনায় ব্যবসা হয়েছে অনেক কম।
মাথায় হাত পড়েছে জমিক্রেতা এবং হুন্ডি, হাওলা, সুদে-লগ্নির ব্যবসায় জড়িতদের। প্রান্তিক শহর করিমগঞ্জে হাওলার মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদানের ব্যবসা বহু পুরনো। তাঁরা কী করে টাকাগুলো বৈধ করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।
এ দিকে, অন্যান্য দিনের মতো আজও করিমগঞ্জ থেকে মেঘালয়ে কয়লা আনতে গিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ৫০০, ১ হাজার টাকার নোট রাখেননি মেঘালয়ের কয়লা বিক্রেতারা। ফলে মেঘালয়ে খালি অবস্থায় আটকে আছে করিমগঞ্জের বহু ট্রাক।
ব্যাঙ্ক বন্ধ বলেও অনেককে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। দু’দিন বাদেই আবার দ্বিতীয় শনিবার ও রবিবার। এটিএম নিয়েও দুশ্চিন্তায় অনেকে। গত রাতে যে দীর্ঘ লাইন দেখা গিয়েছে, কবে নাগাদ এই সেবা স্বাভাবিক হবে, তাও ভাবাচ্ছে তাঁদের।