সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধী। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
ফের ভোট চুরির অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হলেন রাহুল গান্ধী। তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনামাফিক নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার অবৈধ ভাবে ভোটারদের নাম ঢোকানো হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে কর্নাটকের অলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রের উদাহরণ দেন তিনি। ওই কেন্দ্রে অন্তত ৬০১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে দাবি করেন রাহুল। লোকসভার বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, মূলত কংগ্রেস যে বুথগুলিতে শক্তিশালী, সেখানেই পরিকল্পনা করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
সাংবাদিক বৈঠকে রাহুলের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সফ্টঅয়্যারের
মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “কর্নাটকের
একটি লোকসভা কেন্দ্র অলন্দ। কেউ কেউ ৬০১৮টি ভোট মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আমরা জানি না
২০২৩ সালের ভোটে (কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচন) ঠিক কত জনের নাম বাদ গিয়েছে।
কিন্তু সংখ্যাটা অবশ্যই ৬০১৮-র বেশি হবে।” মঞ্চের পিছনে থাকা স্ক্রিনে কয়েকটি ফোন নম্বর তুলে ধরে রাহুল দাবি করেন, বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফর্ম পূরণ করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে ওই নম্বরগুলি থেকে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) দেওয়া সম্ভব হল, সেই প্রশ্ন তোলেন রাহুল। মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকা
তুলে ধরে রাহুলের দাবি, সেখানে অনলাইনে ৬৮৫০ জন ভোটারের নাম অবৈধ ভাবে অন্তর্ভুক্ত
করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যেই ভোটার তালিকায় এই সংযোজন-বিয়োজন চলছে বলে দাবি
রাহুলের।
এই অভিযোগের সূত্রেই তিনি আক্রমণ করেন নির্বাচন কমিশন এবং দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে। রাহুল বলেন, “দেশে স্বচ্ছ এবং অবাধ নির্বাচনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করার বদলে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে নির্বাচন কমিশন। যাঁরা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খর্ব করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” একই সঙ্গে রাহুলের সংযোজন, “জ্ঞানেশ কুমারজি ভোট চুরিকে রক্ষা করছেন। এটা নিয়ে এখন আর কোনও সংশয় নেই।”
রাহুলের অভিযোগ, বিচ্ছিন্ন উপায়ে নয়, কেন্দ্রীয় ভাবে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। মূলত দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু এবং অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায় (ওবিসি)-এর ভোটারদের নাম বাদ যাচ্ছে বলে দাবি করেন রায়বরেলীর কংগ্রেস সাংসদ। জনৈক গোদাবাইয়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে রাহুলের দাবি, ভোটারদের অজান্তেই তাদের নাম করে আবেদনপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে, যাতে অন্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া যায়। সূর্যকান্ত বলে এক জনের নাম উল্লেখ করে রাহুলের অভিযোগ, ওই ব্যক্তির নামে ১৪ মিনিটে ১২ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তি মঞ্চে উঠে দাবি করেন, তিনি এই সব কিছুই জানেন না।
একই সঙ্গে রাহুল দাবি করেছেন, ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে নির্বাচন কমিশনকে ১৮ বার চিঠি দিয়েছিলেন কর্নাটকের সিআইডি। কিন্তু উল্টো দিক থেকে কোনও জবাব আসেনি। রাহুলের বক্তব্য, তাঁর কাছে প্রতিটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১০০ শতাংশ তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এর আগে গত ৭ অগস্ট রাহুল কর্নাটকের মহাদেবপুরা লোকসভা কেন্দ্রে ভোট-কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই সময় রাহুল দাবি করেন, কেবল কর্নাটক নয়, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানাতেও ‘ভোট চুরি’ হয়েছে।