দায় আমার, সলমন মামলায় দাবি চালকের

বারো বছরের দীর্ঘ সলমন খানের গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা মামলায় নয়া মোড়। জনপ্রিয় এই বলিউড অভিনেতার সুরেই তাঁর গাড়ির চালক আজ আদালতে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার দিন স্টিয়ারিং ছিল তাঁর হাতে। সলমন বসেছিলেন তাঁর পাশের আসনে। ফলে এত দিন ধরে ভুয়ো একটি মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাঁর মালিককে। গত শুক্রবার মুম্বইয়ের দায়রা আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে একই কথা বলেছিলেন সলমন। জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। এমনকী মদ্যপ অবস্থাতেও ছিলেন না।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৪:০১
Share:

আদালতের পথে অশোক। ছবি: পিটিআই।

বারো বছরের দীর্ঘ সলমন খানের গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা মামলায় নয়া মোড়। জনপ্রিয় এই বলিউড অভিনেতার সুরেই তাঁর গাড়ির চালক আজ আদালতে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার দিন স্টিয়ারিং ছিল তাঁর হাতে। সলমন বসেছিলেন তাঁর পাশের আসনে। ফলে এত দিন ধরে ভুয়ো একটি মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাঁর মালিককে।

Advertisement

গত শুক্রবার মুম্বইয়ের দায়রা আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে একই কথা বলেছিলেন সলমন। জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। এমনকী মদ্যপ অবস্থাতেও ছিলেন না। আজ আদালতকে সেই একই কথা বলেছেন তাঁর গাড়ির চালক অশোক সিংহ। বছর বিয়াল্লিশের অশোক আজ আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে পরিষ্কার জানিয়েছেন, তাঁর জন্যই সে দিন মৃত্যু হয়েছিল এক ফুটপাথবাসীর। আর জখম হয়েছিলেন চার জন। কারণ, ঘটনার দিন সলমন নন, গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনিই।

২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুম্বইয়ের শহরতলি বান্দ্রার একটি বেকারির দোকানের সামনে দুর্ঘটনায় পড়েছিল সলমনের বিদেশি এসইউভি। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয় দোকানের সামনে শুয়ে থাকা এক ফুটপাথবাসীর। জখম হন চার জন। সেই ঘটনার পরে প্রথমে পুলিশে যে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল সলমনই সে দিন গাড়ি চালাচ্ছিলেন। কারণ প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, দুর্ঘটনার পর সে দিন চালকের আসন থেকে সলমনকেই নামতে দেখা গিয়েছিল। তাই পুলিশ প্রথমে অবহেলায় মৃত্যুর মামলা দায়ের করে। পরে অবশ্য আদালতের নির্দেশেই অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের হয় সলমনের বিরুদ্ধে। যাতে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল হতে পারে সলমনের।

Advertisement

ঘটনার চার বছর পরে, ২০০৬ সালে মামলাটি প্রথম আদালতে উঠেছিল। তার পর থেকে নানা মোড় নিয়েছে হাই প্রোফাইল এই মামলা। আদালতে বারবার নিজের হাজিরা পিছিয়েছেন সলমন। কখনও নিজের আইনজীবী শ্রীকান্ত শিভাড়েকে কখনও বা পরিবারের লোককে আদালতে পাঠিয়েছেন তিনি। শেষমেশ বিচারকের ধমক খেয়ে গত কয়েক মাসে দু’বার আদালতে যান সলমন। শেষ বার মানে গত শুক্রবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সকলকে প্রায় অবাক করে সলমন জানান, ঘটনার দিন তিনি আদৌ চালকের আসনে ছিলেন না। এমনকী কোনও ভাবেই সে দিন মদ্যপও ছিলেন না তিনি। সলমন স্বীকার করেছেন, ভাই সোহেলের সঙ্গে দেখা করতে একটি বারে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জল ছাড়া কিছুই খাননি। বারের যে বিলটি তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি ভুয়ো বলেও দাবি করেন সলমন।

এখন প্রশ্ন, তা হলে সে দিন গাড়ি চালাচ্ছিলেন কে? সলমন জানিয়েছিলেন, অশোক সিংহ সে দিন চালকের আসনে ছিলেন। এর পর তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তা হলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁকে চালকের দরজা থেকে বেরোতে দেখেছিলেন কেন? সলমনের জবাব ছিল, দুর্ঘটনার ফলে তাঁর আসনের পাশের দরজাটি আটকে যাওয়ায় তিনি ডান দিকের, অর্থাৎ চালকের আসনের দরজা দিয়ে বেরিয়েছিলেন।

আজ সলমনের জবানবন্দিরই পুনরাবৃত্তি করেছেন অশোক। অশোক জানিয়েছেন, গাড়ির টায়ার ফেটে যাওয়ায় তিনি সে দিন নিয়ন্ত্রণ হারান। তিনি বুঝতে পারছিলেন তাঁর গা়ড়ির তলায় মানুষ চাপা পড়ে আছে, তবু দুর্ঘটনা এড়াতে পারেননি। অশোক আদালতকে জানিয়েছেন, আলতাফ নামে সলমনের অপর এক চালক প্রথমে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি অসুস্থ বোধ করায় অশোককে ডাকা হয়। অটো চেপে মুম্বইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে পৌঁছন অশোক। সলমনকে সেখান থেকে তুলে ফিরছিলেন তাঁরা। পথে এই দুর্ঘটনা। আদালতকে তিনি জানিয়েছেন, সলমনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা যখন থানায় পৌঁছন, পুলিশ তাঁর কোনও বয়ানই রেকর্ড করেনি। এর পরই নাকি তিনি সলমনকে জানিয়েছিলেন, কিছু গোলমাল হতে চলেছে। আর হয়েওছিল তাই। সব কিছুর দায় ঘাড়ে নিয়ে সলমনকেই হাতকড়া পরতে হয়। সরকারি আইনজীবী প্রদীপ ঘারাট এর পর অশোককে প্রশ্ন করেছিলেন, এত দিন পরে অশোক এ সব কথা বলছেন কেন? তিনি যদি নিজেই সে দিন গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তা হলে সেটা আদালতকে জানাতে ১২ বছর সময় লাগল কেন? উত্তরে অশোক জানিয়েছেন, আইনি জটিলতা তিনি কিছু বোঝেন না। সেলিম খানের পরামর্শেই শেষমেশ আদালতকে সব জানাতে এসেছেন তিনি।

পনেরো বছর ধরে সলমনদের বাড়ির গাড়ি চালাচ্ছেন অশোক। সেলিম খানের হাত ধরেই খান পরিবারের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তা হলে সলমনদের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গিয়েই কি এখন নিজের ঘা়ড়ে সব দায় নিচ্ছেন অশোক? নাকি সলমন প্রচুর টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করেছেন তাঁর? সরকারি কৌঁসুলির এই সব প্রশ্নের উত্তরে অশোক জানিয়েছেন, কোনও রকম চাপ তাঁর উপর নেই। যা সত্যি, আদালতকে তা-ই বলেছেন তিনি।

তবে অশোক যা-ই বলুন, তাঁর আজকের এই জবানবন্দি নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যে টায়ার ফাটার কথা তিনি আজ আদালতে জানিয়েছেন, সেটা হতে পারে একমাত্র গাড়ি ১০০ থেকে ১৪০ কিলেমিটার বেগে চালানো হলে।

গাড়ি কি তা হলে সে দিন অতটাই জোরে চলছিল? এই প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি। পরশু মামলার ফের শুনানি। অশোকের বয়ান সলমনের জন্য আদৌ কোনও সুখবর আনে কি না, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকটা দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন