শাহ ফয়জল।
কাশ্মীর থেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম শীর্ষ স্থান দখল করে নজরে এসেছিলেন শাহ ফয়জ়ল। ‘কাশ্মীরিদের হত্যা’ ও ‘হিন্দুত্ববাদীদের হাতে মুসলিমদের কোণঠাসা হওয়ার’ প্রতিবাদে আজ সিভিল সার্ভিস থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। উপত্যকার রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ন্যাশনাল কনফারেন্সে যোগ দেবেন ফয়জ়ল। তাঁকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ওমর আবদুল্লা।
আদতে কুপওয়ারার সোগাম লোলাব এলাকার বাসিন্দা ফয়জ়ল সম্প্রতি আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ফিরেছেন। এখন পোস্টিংয়ের অপেক্ষায় ছিলেন এই তরুণ আইএএস। কিন্তু আমেরিকায় থাকাকালীনই সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্টের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিল জম্মু-কাশ্মীর সরকার। দেশে ধর্ষণের একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘জনসংখ্যা, পিতৃতন্ত্র, অশিক্ষা, মদ, পর্নোগ্রাফি, প্রযুক্তি ও অরাজকতার ফলে দেশ রেপিস্তান হয়ে গিয়েছে।’’ এরপরে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৫এ ধারাকে ভারত ও ওই রাজ্যের মধ্যে ‘বিয়ের দলিল’-এর সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।
আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে ফয়জ়ল লিখেছেন, ‘‘কাশ্মীরিদের হত্যা থামাতে সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের বিশেষ মর্যাদার উপরেও আঘাত হানার চেষ্টা হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীদের চাপে দেশের ২০ কোটি মুসলিম কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছেন। এর প্রতিবাদে সিভিল সার্ভিস থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ নরেন্দ্র মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন ফয়জল। তাঁর কথায়, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই, এনআইএ-র মতো প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ এ দেশের সাংবিধানিক কাঠামোকে নষ্ট করে দিতে পারে। আমি ফের জানাতে চাই, দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে বেশি দিন চুপ করিয়ে রাখা যাবে না।’’
এর পরেই ফয়জ়লের রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফয়়জ়লের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ওমর আবদুল্লা লেখেন, ‘‘আমলাতন্ত্রের ক্ষতি হলেও রাজনীতির লাভ হল। রাজনীতিতে স্বাগত।’’
সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করে, ফয়জ়ল ন্যাশনাল কনফারেন্সে যোগ দিয়েছেন। পরে ওমর একটি পোস্টে লেখেন, ‘‘আমি ফয়জ়লকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছি। ওঁর রাজনৈতিক পরিকল্পনার কথা উনিই জানাবেন।’’ ফয়জ়ল জানান, শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাবেন তিনি। হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুক টুইটারে লেখেন, ‘‘কাশ্মীরিদের হত্যার প্রতিবাদে ইস্তফা দেওয়াকে স্বাগত জানাই। আশা করি, হত্যার প্রতিবাদ জানাতে ফয়জ়ল উপযুক্ত রাজনৈতিক মঞ্চই বেছে নেবেন।’’ ন্যাশনাল কনফারেন্স সূত্রে খবর, লোকসভা ভোটে বারামুলা কেন্দ্র থেকে ফয়জ়লকে প্রার্থী করতে পারে ওমরের দল।
আজ কাশ্মীরে আলোচনা শুরু নিয়ে ফের মোদী সরকারকে আক্রমণ করেন ওমর ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। এ দিনই আফগানিস্তানে তালিবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার পক্ষে সওয়াল করেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত। ওমর-মেহবুবার প্রশ্ন, তা হলে কাশ্মীরে আলোচনা শুরু করতে বাধা কোথায়?