সংসদে অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই।
জিএসটি-র পথে কেউই বাধা হয়ে দাঁড়ালেন না। কিন্তু প্রশ্নটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সকলেই তুললেন। তা হল, এ বার কি রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে ভিক্ষার পাত্র নিয়ে দাঁড়াতে হবে!
জিএসটি চালু হলে রাজ্য সরকারের হাতে কর বসানোর ক্ষমতাই থাকবে না। রাজ্যে যে সব কর প্রযোজ্য হবে, সেখানেও করের হার বাড়ানো বা কমানোর অধিকার থাকবে না রাজ্যের হাতে। যার অর্থ, কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যই বদলে যাবে।
আজ পণ্য পরিষেবা কর বা জিএসটি বিল নিয়ে বিতর্কে জয়ললিতার এডিএমকে ছাড়া সব আঞ্চলিক দলই জিএসটি-তে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু এর ফল কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সকলেই। বাম, সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি থেকে শুরু করে ডিএমকে-র মতো সব আঞ্চলিক দলই উদ্বেগ জানিয়েছে, এর ফলে কর বসানোর ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে গেল।
কেন এই আশঙ্কা? এত দিন রাজ্যগুলি বিক্রয় কর থেকে শুরু করে প্রবেশ কর, সারচার্জের মতো বিভিন্ন ধরনের কর বসিয়ে রাজস্ব আদায় করতে পারত। জিএসটি ব্যবস্থায় সব কর উঠে গিয়ে অভিন্ন কর চালু হবে। সেই করের হার ঠিক করবে কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে তৈরি জিএসটি পরিষদ। সেখানে রাজ্যের মতামত থাকলেও কোনও রাজ্য পৃথক ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘কেরলে বাম সরকার ফাস্ট ফুডের উপর কর বসিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার সারদা কেলেঙ্কারিতে সর্বস্বান্তদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সিগারেটে কর বসিয়েছে। তাতে আমাদের আপত্তি থাকলেও রাজ্যের হাতে এই সব ক্ষমতা থাকবে না। কেন্দ্রের দ্বারস্থ হতে হবে।’’ সমাজবাদী পার্টির নরেশ অগ্রবাল বলেন, ‘‘রাজ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় অতিরিক্ত অর্থের জন্য কেন্দ্রের কাছে ভিক্ষার পাত্র নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’’
রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ নিয়ে বরাবরই সব থেকে বেশি সরব জয়ললিতা। এর আগে তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্য সরকারগুলিকে পুরসভায় স্তরে নামিয়ে আনা হচ্ছে। আজও এডিএমকে-র নবনীত কৃষ্ণন অভিযোগ তুলেছেন, জিএসটি পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে। এখানে রাজ্যের বিধানসভার
থেকে সব অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেসই প্রথম জিএসটি বিলের ভাবনা নিয়ে এসেছিল। কংগ্রেস তাই এতে আপত্তি তোলেনি। তবে আঞ্চলিক দলগুলিকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেননি কংগ্রেসের নেতারা।
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, জিএসটি ব্যবস্থা একে অন্যের হাতে ক্ষমতা তুলে দিচ্ছে না। বরঞ্চ একসঙ্গে ক্ষমতার প্রয়োগ করছে। রাজ্যের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাচ্ছে না। তার বদলে কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষমতা জুড়ছে। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি একসঙ্গে বসে, অভিন্ন কর ব্যবস্থা চালু করে করের কাঠামো ঠিক করছে। সংবিধান অনুযায়ী, ভারত হল ‘ইউনিয়ন অফ স্টেটস’। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যকে শক্তিশালী হতেই হবে। কিন্তু রাজ্যগুলির ‘ইউনিয়ন’ থাকতেই হবে। কেন্দ্রের কর কাঠামোয় কোনও ভূমিকা থাকবে না, তা হয় না।
তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনের অভিযোগ, যে সব ব্যবসার পরিমাণ বছরে দেড় কোটি টাকার কম, সেখানেও কেন্দ্র নাক গলাতে চাইছে। তা রাজ্যগুলি মানবে না। তবে দেড় কোটির বেশি পরিমাণের ব্যবসায় কর সংগ্রহে কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যকেও অধিকার দিতে হবে। জেটলির আশ্বাস, এই সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে।
সপা-নেতা নরেশ অগ্রবাল অভিযোগ তোলেন, জিএসটি পরিষদে ঐকমত্যের মাধ্যমে কর কাঠামো ঠিক করার কথা বলা হলেও আসলে সেখানেও কেন্দ্রের হাতে ভেটো বা শেষ কথা বলার অধিকার থাকছে। কারণ এমন ভাবে নিয়ম তৈরি হয়েছে যাতে কেন্দ্রকে বাদ দিয়ে শুধু রাজ্যগুলির পক্ষে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে কোনও রাজ্য সাহায্য চাইতে এলে কেন্দ্র নিজের দলের রাজ্যগুলিকে সাহায্য করবে কিন্তু বাকিদের বঞ্চিত করবে। জেটলির পাল্টা যুক্তি, কেন্দ্রের হাতে ভেটো নেই। রাজ্যের হাতেও নেই। কেন্দ্র ও রাজ্য দু’জনের হাতেই ভেটো রয়েছে। দু’পক্ষই বাধ্য একে অন্যের সঙ্গে সহমতে পৌঁছতে। যে সব দল বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বা ভবিষ্যতে থাকবে, অর্থমন্ত্রীদের মাধ্যমে তাদের সকলেরই জিএসটি পরিষদে প্রতিনিধিত্ব থাকছে।
জিএসটি চালু হলে পুরসভাগুলির হাতেও কর বসানোর ক্ষমতা থাকবে না। তা নিয়েও আজ প্রফুল্ল পটেলের মতো মহারাষ্ট্রের নেতারা অভিযোগ তুলে জানান, মুম্বইয়ের পুরসভা প্রবেশ করের মাধ্যমে অনেক রাজ্যের থেকে বেশি রাজস্ব আয় করে। যা পরিকাঠামোয় খরচ হয়। এই টাকা এখন কোথা থেকে আসবে? জেটলি বলেন, রাজ্য নিজস্ব জিএসটি আইনে পুরসভাগুলিকে অর্থ দিতে পারে।
আঞ্চলিক দলগুলি বিলকে সমর্থন করে যুক্তি দিয়েছেন যে তাঁরা সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চান না। বিএসপি নেতা সতীশচন্দ্র মিশ্রর বক্তব্য, ‘‘এখন জিএসটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কী ভাবে ধাক্কা দেয়, সেটা দেখাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’’