নীতিতে বদল।
এত দিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরাই অঞ্চলের মদেশীয় ও থারু সম্প্রদায়ের হয়েই নেপাল সরকারের কাছে সওয়াল করে এসেছে নয়াদিল্লি। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, প্রচণ্ড সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার পথে চলতে বার্তা দেওয়া হবে ওই সম্প্রদায়কে। কারণ, তা না হলে নেপালকে ভারত-বিরোধী করে তোলার বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে বেজিং।
গত মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের ভারত সফরের সময়ে তাঁকে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর আসন্ন নেপাল সফরে (২-৪ নভেম্বর) মদেশীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে এই বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন। সরকারি সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি কাঠমান্ডুর ছাড়া যেতে পারেন মদেশীয় অধ্যুষিত জনকপুরেও। কূটনীতিকদের মতে, নয়াদিল্লি এই প্রথম মদেশীয়দের কিছুটা নরম অবস্থান নিতে অনুরোধ করবে।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, নেপাল নীতির প্রশ্নে এই বদল পুরোটাই চিনের দিকে লক্ষ রেখে। নেপালের মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে ভারত-বিরোধী মনোভাবের ঢালাও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে চিন। অন্য দিকে সার্কের দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তানকে একঘরে করে আঞ্চলিক সমন্বয়ে নেতৃত্ব দিতে চাইছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ায় মহাজোট তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। এই অবস্থায় ইসলামাবাদের মিত্র বেজিং যদি নেপালকে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত ভাবে কাজে লাগাতে শুরু করে তা হলে নয়াদিল্লির বিপদ বাড়বে বই কমবে না। উরি কাণ্ডের পরে সার্ক সম্মেলনের চেয়ার হিসেবে নেপাল বিবৃতি দিয়ে পাক সন্ত্রাসের নিন্দা করেছে। বয়কট করেছে সার্ক সম্মেলনও। নয়াদিল্লি এ কথাও জানে যে কূটনীতি রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিনিময়ের খেলা। প্রচণ্ড মোদীকে এ কথাও জানান যে আঞ্চলিক সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে তাঁরা ভারতের পাশে রয়েছেন। কিন্তু তাঁর দাবি, পরিবর্তে ভারতকেও নেপালের স্বার্থ দেখতে হবে।
এটা ঘটনা যে কয়েক মাস আগে নয়া সংবিধান ঘিরে মদেশীয়দের বিক্ষোভের জেরে ভারত থেকে পেট্রোলিয়াম-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। নয়াদিল্লি যুক্তি দেয়, নিরাপত্তার কারণে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা নেপাল সীমান্তপথে মাল সরবরাহ করার ঝুঁকি নিচ্ছেন না। কিন্তু নেপালের রাজনৈতিক শিবিরে রটে যায়, মদেশীয়দের মাধ্যমে কাঠমান্ডুকে চাপে রাখার জন্যই ভারত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। এটাও রটে যায় যে পেট্রোলিয়াম-সহ বিভিন্ন দ্রব্য আমদানির জন্য চিনের দ্বারস্থ হবে কাঠমান্ডু। চিনও এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়ে কিছু বাড়তি পণ্য রফতানি করতে শুরু করে।
ভারত সীমান্তে ‘অবরোধ’-এ বিপন্ন নেপালে পণ্য সরবরাহের বিকল্প পথ খোলার সঙ্গে সঙ্গে পরিকাঠামো গড়তেও উদ্যোগী হয়েছে বেজিং। সূত্রের খবর, চিন এই তাস খেলার পর কূটনৈতিক সক্রিয়তা বাড়িয়ে দেয় বিদেশ মন্ত্রক। তার জন্যই মদেশীয়দের বোঝানোর এই সিদ্ধান্ত।
মদেশীয়দের দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে— তরাইয়ে দু’টি স্বয়ংশাসিত জেলা গঠন, তরাইয়ে ৮৩টি সংসদীয় আসন, প্রশাসনিক, নিরাপত্তা, কূটনৈতিক এবং বিচারবিভাগীয় ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ভিত্তিতে মদেশীয় এবং থারু সম্প্রদায়ের জন্য কাজের সংরক্ষণ, সাংবিধানিক ক্ষেত্রগুলিতে মদেশীয়দের আরও বেশি প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে তাঁদের রাজনৈতিক ভাবে এটাই বোঝানো হবে যে এক লপ্তে সমস্ত দাবিদাওয়া মিটে যাবে এমনটা ভাবা ভুল। ভারত কাঠমান্ডুর নতুন সরকারের উপর চাপ তৈরি করে রেখেছে। প্রচণ্ডও মোদীকে পাশে নিয়ে নয়াদিল্লিতে এসে কথা দিয়ে গিয়েছেন যে ‘‘আমার সরকার সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবাইকে নিয়ে চলতে চায়।’’
নেপালে গত বছর সংবিধান তৈরির পর বিক্ষোভের জেরে তা পাশ করা যায়নি। সে দেশের সরকার জানিয়েছে যে বেশ কিছু সংশোধনী যুক্ত করে তবেই নতুন সংবিধান পাশ করা হবে। তবে কবে এই পদক্ষেপ করা হবে তা এখনও স্থির করা হয়নি।