India-China

লকডাউনের জন্য ঘরে ফেরা হল না সন্তোষের

ভদ্র ব্যবহার, অল্প কথার মানুষ হিসেবেই সহকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন ৩৭ বছরের এই নিহত কর্নেল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৬:০৪
Share:

বি সন্তোষ বাবু

বদলির নির্দেশ হয়ে গিয়েছিল আগেই। কিন্তু লকডাউনের কারণে আর নিজের রাজ্যে ফেরা হল না লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল বি সন্তোষ বাবুর। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, নিজের রাজ্য তেলঙ্গানায় পরিবারের সঙ্গে থেকে চাকরি করতে পারবেন ভেবে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত ছিলেন এই সেনা অফিসার। পরিবারের কাছে তিনি ফিরলেন ঠিকই, তবে কফিনবন্দি হয়ে।

Advertisement

গত ডিসেম্বরে লাদাখে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন সন্তোষ। যোগ্যতার সঙ্গেই সেই দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। ভদ্র ব্যবহার, অল্প কথার মানুষ হিসেবেই সহকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন ৩৭ বছরের এই নিহত কর্নেল। সেনাবাহিনীর আর এক কর্নেল এস শ্রীনিবাস রাও জানিয়েছেন, সন্তোষকে দু’বছরের জন্য তাঁর নিজের রাজ্যের সেকেন্দরাবাদে বদলি করা হয়েছিল। মাঝে মধ্যেই এ নিয়ে তাঁদের কথা হত। নিহত কর্নেল বলতেন, ‘এ বার পরিবারের সঙ্গে থেকে নিজের রাজ্যকে সেবা করার সুযোগ পাব।’ কিন্তু লকডাউন হওয়ায় ফিরতে পারেননি। সন্তোষের স্ত্রী বি সন্তোষী ৮ বছরের মেয়ে ও ৪ বছরের ছেলেকে নিয়ে দিল্লিতে থাকতেন। শ্রীনিবাস বলেন, ‘‘নিজের রাজ্যে কাজ করা যে কোনও সেনা অফিসারের কাছে অত্যন্ত সম্মানের। সেকেন্দরাবাদে কী কী ভাল স্কুল রয়েছে, সে সম্পর্কে আমাদের কাছে সন্তোষ খোঁজখবর করত।’’ নিহত কর্নেলের পরিজনের আক্ষেপ, লকডাউন না-হলে আজ হয়তো সন্তোষ তাঁদের সঙ্গেই থাকতেন।

তেলঙ্গানার সূর্যপেটের বিদ্যানগর মহল্লায় সন্তোষের বেড়ে ওঠা। সেনা অফিসারের পাঠ নেন কোরুকোন্ডা সৈনিক স্কুলে। তাঁর মৃত্যুসংবাদে ওই স্কুলেও শোকের ছায়া। ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল কর্নেল অরুণ কুলকার্নি জানিয়েছেন, ভাল ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিল সন্তোষ। স্কুল ছাড়ার পরেও নিয়মিত স্কুলের সঙ্গে তাঁর যোগযোগ ছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: লাদাখে সেনা বাড়াচ্ছে দুই দেশই || আমরা জবাব দিতে তৈরি: মোদী

আরও পড়ুন: উত্তর চান বিরোধীরা, কাল সর্বদল প্রধানমন্ত্রীর

সন্তোষের মতোই আর বাড়ি ফেরা হল না ঝাড়খণ্ডের জওয়ান বছর ছাব্বিশের কুন্দনকুমার ওঝার। মাত্র ১৭ দিন আগে তিনি কন্যাসন্তানের পিতা হন। কুন্দন তাঁর স্ত্রী নেহার কাছে ফোনে সেই সুখবর পান। স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, মেয়েকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু লাদাখে পরিস্থিতি খুব অশান্ত। দেশ জুড়ে লকডাউন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তিনি ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবেন।

মেয়ের মুখ দেখা হল না কুন্দনের। বাড়ি ফিরছেন কাফিনবন্দি হয়ে। সাহেবগঞ্জ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কুন্দনের গ্রামের নাম ডিহারি। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, গ্রামের ছেলের জন্য তাঁরা গর্বিত।

চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে কুন্দন দ্বিতীয়। শেষ বার বাড়ি এসেছিলেন গত জানুয়ারিতে। এক মাস থেকে ফিরে যান। কুন্দনের স্ত্রী নেহা সংবাদমাধ্যমকে জানান, শেষ বার তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিল ১৫ দিন আগে। কুন্দনের বাবা রবিশঙ্কর ওঝা ও মা ভবানী দেবী ছেলের খবর শোনেন মঙ্গলবার দুপুরে। কুন্দনের এক ভাইকে ফোন করে মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়। গ্রামবাসীরা জানান, কুন্দনের দেহ গ্রামে পৌঁছতে বৃহস্পতিবার দুপুর হয়ে যাবে বলে তারা জানতে পেরেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন