India-China

এত দিন পরে শি চিনফিংয়ের পথবদল ভাবাচ্ছে দিল্লিকে

কূটনীতিকেরা অবশ্য মনে করেন, মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্কের বার্তা দিতে শুরু করেছিলেন চিনফিং।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২০ ০৪:৩১
Share:

ব্রিকস সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী ও শি চিনফিং।—ছবি এপি

চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং সাত বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে বলে গিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে ‘আরও ভাল’ এবং ‘অন্য রকম’ সম্পর্ক গড়তে চান তিনি। দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে ‘নতুন অধ্যায়’ গড়ার কথাও বলেছেন বহু বার। তবে কূটনীতিকেরা এখন মনে করছেন, লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ১৫ জুন রাতের রক্তপাত সেই মোহ থেকে মুক্ত করে ভারত-চিন সম্পর্ককে বাস্তবের জমিতে আছড়ে ফেলেছে।

Advertisement

দু’টি সম্ভাবনাকে পাশাপাশি রেখে শি-র বক্তব্যকে বিচার করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, প্রাথমিক ভাবে চিনা প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা ছিল ভারতের সঙ্গে কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে এশিয়ায় একটি শক্তিশালী ব্লক তৈরি করা। পরে তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন। অথবা গোড়া থেকেই সম্মোহিত করার জন্য জাল বিছানো হয়েছিল, যে ফাঁদে পা দিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারও বারবার রেড কার্পেট পেতেছে চিনফিংয়ের জন্য।

চিনে নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম বাম্বাওয়ালের কথায়, “আমরা আশা করেছিলাম, দু’দেশের মধ্যে শান্তির পরিবেশ তৈরি হবে। যার প্রতিফলন পড়বে সীমান্তে। আর সীমান্ত ঠান্ডা থাকলে বাণিজ্য, পর্যটন সবই বাড়বে।’’ নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিকের যুক্তি, চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ভারতের জন্য বিরাট ভাবে লাভজনক। তাই বারবার আছাড় খেয়েও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে দিল্লি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদী প্রথম যে বিদেশী রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, তিনি শি চিনফিং। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শি ভারতে থাকাকালীনই লাদাখে দুই সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। মোদীর কাছে চিনফিং দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন, সেনার কিছু ‘পচা অংশ’ তাঁর সফরকে ভেস্তে দিতে এ কাজ করেছে। তিনি দেশে ফেরার পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘সে রাতে আটক চিন সেনারাও’! ভি কে সিংহের বক্তব্যে অনেক প্রশ্ন

সে দিন শি-র সৌজন্যে মুগ্ধ হয়েছিল সাউথ ব্লক। পরে পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ঢোকার প্রশ্নে নয়াদিল্লিকে আটকে কিংবা প্রতিবেশী দেশগুলিতে প্রভাব খাটিয়ে ভারতের উপর চাপ বাড়িয়েছে চিন। শি কিন্তু বলেই গিয়েছেন, সম্পর্কের উন্নতিই তাঁর লক্ষ্য। মোদীর সঙ্গে তিনি অন্তত এক ডজন বৈঠক করেছিলেন।

কূটনীতিকেরা অবশ্য মনে করেন, মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্কের বার্তা দিতে শুরু করেছিলেন চিনফিং। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনের সময়ে তিনি আলাদা ভাবে বৈঠক করেন মনমোহনের সঙ্গে। পরের বছর মোদী ক্ষমতায় আসার পরে বেজিংয়ে নিযুক্ত হতে চলা ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অশোক কান্তাকে ডেকে শি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি তাঁর কাছে ঐতিহাসিক মিশন। কান্তার কথায়, “সেই সময় থেকেই ব্যক্তিগত ভাবে ভারতনীতি নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন শি। যা চিনের রাজনীতিতে অভিনব।’’ সে সময় চিনের বিদেশমন্ত্রী ভারত সফরে এলে তাঁকে শি-র বিশেষ দূত হিসেবেই তুলে ধরেছিল বেজিং।

আরও পড়ুন: গালওয়ানের পর এ বার দেপসাংয় ভ্যালি টার্গেট চিনের?

নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের একাংশ অবশ্য মনে করছে, ভারতের প্রতি প্রেসিডেন্টের এই ‘অতি মুগ্ধতা’ ভাল ভাবে নেয়নি চিনের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগ। কারণ, ভারত-বিরোধিতা লালফৌজের ডিএনএ-তে। ওবর প্রকল্পে আপত্তি, আমেরিকার সঙ্গে সখ্য, কোয়াড বা চিন-বিরোধী চতুর্দেশীয় অক্ষ তৈরিতে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তগুলিকে সামনে এনে ভারত বিরোধিতার ঠান্ডা কৌশল তৈরি হয় চিনা কমিউনিস্ট পার্টিতে— শেষ পর্যন্ত যাতে সামিল হন প্রেসিডেন্টও।

তবে আপাতত একটি বিষয় স্পষ্ট। দীর্ঘ দিন ধরে চলা নরম-গরম নীতি এবং উহানের নৌকাবিহার থেকে শুরু করে মমল্লপুরমের দীর্ঘ সংলাপের মতো দু’দেশের সম্পর্কের নানা পরীক্ষানিরীক্ষা দু’তরফ থেকেই আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে ১৫ জুনের অভিশপ্ত রাত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন