সরতাজের কাশ্মীর-বোমায় প্রশ্নে পাক-নীতি

ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথে ফের কাঁটা ছড়িয়ে দিল ইসলামাবাদ! এবং সেই কাশ্মীরকে সামনে রেখেই! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বৈঠকের তিন দিন পর আজ কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ। তাঁর সাফ কথা, আলোচ্যসূচিতে কাশ্মীর না থাকলে ভারতের সঙ্গে কোনও কথাই এগোবে না।

Advertisement

অগ্নি রায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:০১
Share:

সোমবার ইসলামাবাদে সরতাজ আজিজ। ছবি: এএফপি।

ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথে ফের কাঁটা ছড়িয়ে দিল ইসলামাবাদ! এবং সেই কাশ্মীরকে সামনে রেখেই! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বৈঠকের তিন দিন পর আজ কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ। তাঁর সাফ কথা, আলোচ্যসূচিতে কাশ্মীর না থাকলে ভারতের সঙ্গে কোনও কথাই এগোবে না। ইসলামাবাদে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানানোর পাশাপাশি সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের প্রসঙ্গও টেনে দিল্লির উপর চাপ বাড়াতে চেয়েছেন আজিজ। তাঁর দাবি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ওই ঘটনা সম্পর্কে বিশদ তথ্য চেয়েছেন নওয়াজ। একই সঙ্গে আজিজ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর রয়েছে যে, বালুচিস্তানের কিছু অংশে ঘটে চলা নাশকতায় মদত আসছে সীমান্তের ওপার থেকে।’’

Advertisement

পাকিস্তান যখন সাউথ ব্লকের দিকে অভিযোগের তর্জনী নির্দেশ করছে, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রক্তচাপ বাড়িয়ে বিএসএফ একটি অগ্নিগর্ভ রিপোর্ট পাঠিয়েছে নয়াদিল্লিতে। যার মোদ্দা কথা, বর্ষার সুযোগ নিয়ে সীমান্ত প্রবল ভাবে সক্রিয় হচ্ছে পাক মদতপুষ্ট বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী। সেই উদ্দেশ্য পূরণে চলছে লাগাতার পাক গোলাবর্ষণও। ভারত-পাক জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে ঈদ মিলনের দিন হুরিয়ত নেতাদের দিল্লি আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের প্রতি নৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন পাকিস্তানের রয়েছে।’’ এই হুরিয়ত নেতাদের দিল্লিতে আমন্ত্রণের জেরেই বাতিল হয়েছিল ভারত-পাক শান্তি আলোচনা।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এখন মধ্য এশিয়া সফরে। আগামিকাল তাঁর দেশে পৌঁছনোর কথা। এখনও পর্যন্ত তাঁর বা তাঁর সঙ্গে সফররত বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের সরকারি কোনও মন্তব্য পৌঁছয়নি দিল্লিতে। তবে রাজনৈতিক শিবিরের মতে, সব মিলিয়ে উফা বৈঠকের শান্তি উদ্যোগ প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়ল তো বটেই, আসন্ন সংসদীয় অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখেও পড়তে হবে মোদীকে। কারণ মোদীর সাম্প্রতিক পাক-নীতিতে একের পর এক কাঁটা ধরা পড়ছে। মোদী-নওয়াজ বৈঠকের আগে এবং পরেও সীমান্তে হিংসার ঘটনা থামেনি। দুই শীর্ষনেতা যে যৌথবিবৃতি পেশ করেছেন, তাতে মুম্বই হামলার মূল চক্রী লকভির কণ্ঠস্বরের নমুনা আদানপ্রদানের ব্যাপারে স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও পাক কৌঁসুলি বাগড়া দিয়ে জানিয়েছেন, কন্ঠস্বরের নমুনা দেওয়ার কোনও আইন সে দেশে নেই। প্রশ্ন উঠছে যদি আইন না-ই থাকে, তা হলে তা কি পাক প্রধানমন্ত্রী জানতেন না? এ প্রশ্নও উঠছে যে, ওই যৌথ বিবৃতিটি কি তৈরি হয়েছিল শুধু মাত্র উফা-বৈঠকে রাশিয়া-চিনকে খুশি করে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনে (এসসিও) অন্তর্ভুক্তির জন্য? এটা ঘটনা যে, মধ্য এশিয়ার এই ‘সিকিওরিটি ব্লক’-টিতে ঢুকতে দিল্লি এবং ইসলামাবাদ উভয়েই দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিল। এ বারে সেই সুযোগ হাতে আসাতে চিত্রনাট্য অনুযায়ী বন্ধুত্বের ছবি তুলে ধরলেন মোদী এবং শরিফ?

Advertisement

কূটনৈতিক শিবিরের একাংশের মত, সরতাজ আজিজ আজ যা বলেছেন, তা ঘরোয়া চাপের জন্যেই। এটা ঘটনা যে, অন্যান্য বারের মতো ভারত-পাক যৌথ বিবৃতিতে কাশ্মীর শব্দটির কোনও উল্লেখই রাখা হয়নি এ বারে। সন্ত্রাস সম্পর্কে যা রাখা হয়েছে, তা মূলত ভারতের উদ্বেগ। ফলে বৈঠক শেষে ঘরে ফিরে সে দেশের সেনা, মোল্লাতন্ত্রের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে নওয়াজকে। আর সেই ক্ষত মেরামতির জন্যই সরতাজকে একাধিক বার সাংবাদিক বৈঠক করে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে আনতে হয়েছে।

উফার বৈঠকে দু’পক্ষ আলোচনায় বসে শান্তি আলোচনা শুরুর বার্তা দিলেও ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে কিন্তু পরিস্থিতি অন্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, জঙ্গি হামলা চালিয়ে অমরনাথ যাত্রা ভন্ডুল করতে সক্রিয় হয়েছে একাধিক জঙ্গি সংগঠন। বরাবরের মতো যাদের পিছন থেকে মদত দিচ্ছে পাক সেনা ও আইএসআই। সম্প্রতি বিএসএফের তরফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে পাঠানো একটি রিপোর্টে ওই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ধসের কারণে ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে থাকা কাঁটাতারের বেড়া একাধিক স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধসের কারণে এক-একটি জায়গায় প্রায় একশো মিটারের মতো বেড়া ভেসে গিয়েছে বা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে জঙ্গিরা ওই এলাকা দিয়ে অনায়াসে ঢুকতে পারে বলে রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএসএফ। এরই মধ্যে ১৭ জলাই জম্মু সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সফরের আগেও বড় মাপের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে কেন্দ্র।

বৃষ্টি ও ধসের ফলে বেশ কিছু বিএসএফের চৌকি নষ্ট হওয়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। এর মধ্যে সাম্বা জেলার রামগড়ের কাছে সীমান্তে থাকা একটি বিএফএফ চৌকিতে প্রবল বৃষ্টির কারণে আটকে পড়েন ২৮ জন জওয়ান। পরে তাঁদের উদ্ধার করতে উদ্ধারকারী দল পাঠাতে হয় বিএএসএফকে। একই ভাবে সীমান্ত সংলগ্ন বেশ কিছু চৌকি বন্যার কারণে বাতিল করতে হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীকে।

এই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত চৌকি ও কাঁটাতারের বেড়া মেরামতির নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রক। কিন্তু বর্ষা না থামা পর্যন্ত ওই কাজ সম্পূর্ণ ভাবে করা যে অসম্ভব, তা-ও বুঝতে পারছেন মন্ত্রক কর্তারা। তাই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি দিয়ে অনুপ্রবেশ রুখতে আরও বেশি জওয়ান মোতায়েন করার পরার্মশ দিয়েছে মন্ত্রক। একই সঙ্গে সীমান্তে চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি রাখতে রাতে নাইট ভিশন ক্যামেরার ব্যবহার নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিএসএফকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন