বিসর্জনে বিধি-নিষেধ পরিবেশ আদালতের

পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে প্লাস্টার অব প্যারিস এবং সিন্থেটিক রং দিয়ে প্রতিমা তৈরি নিষিদ্ধ করল জাতীয় পরিবেশ আদালত।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৫৮
Share:

পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে প্লাস্টার অব প্যারিস এবং সিন্থেটিক রং দিয়ে প্রতিমা তৈরি নিষিদ্ধ করল জাতীয় পরিবেশ আদালত। গত ৬ অক্টোবর কলকাতায় ন্যাশনাল গ্রিন ট্র্যাইব্যুনাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এ বার থেকে পুজো উদ্যোক্তাদের হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে যে তাঁদের প্রতিমায় প্লাস্টার অব প্যারিস এবং সিন্থেটিক রং ব্যবহার করা হচ্ছে না। নিয়ম ভাঙলে
জরিমানা করার নির্দেশও দিয়েছে পরিবেশ আদালত।

Advertisement

এ বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে বিধি তৈরি করে রাজ্যগুলিকে আদালতে পেশ করতেও বলা হয়েছে। রায়ে জৈব-পচনশীল বস্তু ব্যবহার ও বর্জ্য পুনর্ব্যবহার নিয়েও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

নদী-পুকুরে বিসর্জনে জল দূষিত হয়। তাতে জলজ জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে পরিবেশকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই সরব। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করেন দমদমের বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় জ্বালানি গবেষণা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত। তাঁর দাবি ছিল, নদী বা জলাশয়ে বিসর্জন বন্ধ করে ডাঙাতেই হোস পাইপ দিয়ে মূর্তি গলিয়ে দেওয়া হোক।

Advertisement

পরিবেশকর্মীদের একাংশ বলছেন, সিন্থেটিক রঙে সিসা, ক্রোমিয়াম, পারদের মতো ক্ষতিকারক ধাতু থাকে। সেই সব রং জলে মিশে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদদের ক্ষতি করে। এ কথা মাথায় রেখে পুজোর আগে পরিবেশবান্ধব রং বিতরণ করা হলেও তা কিন্তু শহরের একাংশেই কার্যত সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে।

অম্বরনাথবাবুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির বক্তব্য জানতে চেয়েছিল পরিবেশ আদালত। তারা প্রায় সকলেই জানিয়েছে, প্লাস্টার অব প্যারিস ব্যবহার করা হয় না এবং কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা মেনেই বিসর্জন হয়। এ রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছিল, জলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমা তুলে নিলে প্লাস্টার অব প্যারিসে ক্ষতি হয় না। যদিও অনেকেই বলছেন, কলকাতাতেই শুধু প্রতিমা তোলা হয়। কিন্তু গঙ্গার দু’পারে বিস্তীর্ণ এলাকায় কোথায় আর নিয়ম মেনে বিসর্জন হয়?

জাতীয় পরিবেশ আদালত তার নির্দেশে জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিসর্জন বিধি জারি থাকবে। তার সঙ্গে আদালতের নির্দেশগুলি জুড়ে যাবে। নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, বিসর্জনের আগে জৈব-পচনশীল জিনিসপত্র প্রতিমা থেকে খুলে নিতে হবে এবং তা স্থানীয় প্রশাসনকে ‘কম্পোস্টিং’-এর (পচিয়ে সার তৈরি) জন্য দিতে হবে। নদী বা ব়়ড় জলাশয়ের পাশে থাকা মন্দিরগুলিকে বলা হয়েছে, নিত্যদিনের ব্যবহৃত ফুল, ফল, নারকেল, পাতা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে নষ্ট করতে হবে। ওই সব বর্জ্য জলে ফেললে মন্দির কমিটিকে জরিমানা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন