কোটলা নিয়ে ক্ষুব্ধ আদালত

রবিবার দূষণের পরিমাণ এতটাই বেড়েছিল যে, সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয় খেলা। শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়েরা মাস্ক পরে ফিল্ডিং করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

ধোঁয়াশায় ভরা ফিরোজ শাহ কোটলায় এ ভাবেই চলল ভারত-শ্রীলঙ্কার খেলা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

ঘূর্ণিঝড় অক্ষি তছনছ করল তামিলনাড়ু আর কেরলকে, তার জেরে ভুগল রাজধানী দিল্লিও!

Advertisement

হঠাৎ করে দিল্লিতে বায়ু দূষণ বাড়ায় পরিবেশ বিজ্ঞানীরা দায় চাপাচ্ছেন দক্ষিণ ভারতের ঘূর্ণিঝড় অক্ষিকেই। গত দু’দিন ধরে দিল্লিতে মাথার কাছে নেমে এসেছে ধূসর কুয়াশা। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ফিরোজ শাহ কোটলায় ভারত শ্রীলঙ্কার তৃতীয় টেস্টেও।

রবিবার দূষণের পরিমাণ এতটাই বেড়েছিল যে, সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয় খেলা। শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়েরা মাস্ক পরে ফিল্ডিং করেন। সোমবার ম্যাচ রেফারির অনুমতি নিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানেরা ইনহেলারও ব্যবহার করেন খেলার সময়ে।

Advertisement

ফের হঠাৎ করে কেন এ ভাবে দিল্লিকে গ্রাস করল বিষ বাতাস? কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বায়ু গবেষণা বিভাগের প্রধান দীপঙ্কর সাহার ব্যাখ্যা, দক্ষিণে নিম্নচাপের ফলে উত্তর থেকে দক্ষিণে বায়ু চলাচল কার্যত বন্ধ। ফলে বাতাসে থাকা ক্ষতিকর কণা এক জায়গায় জমা হয়ে রয়েছে। মূলত যানবাহন, শিল্পের দূষণ, সড়কের ধুলো, নির্মান কাজের ধুলো বাতাসে মিশে তা ভারী হয়ে গিয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের আশা, জম্মু-কাশ্মীর থেকে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্য আগামী কাল, বুধবার দিল্লিতে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে দূষিত কণা অনেকটাই থিতিয়ে পড়বে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন: দূষণ কমেনি, বরং বেড়ে থাকতে পারে, দাবি শ্রীলঙ্কার

পরিবেশবিদেরা বলছেন, ফিরোজ শাহ কোটলার অবস্থান যেখানে, সেই এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। তাই সেখানে দূষণের মাত্রাও তুলনামূলক ভাবে বেশি। ওই মাঠ সংলগ্ন আইটিও মোড়ে সোমবার সকালে বাতাসে ভাসমান শ্বাসযোগ্য ক্ষুদ্র কণা (পিএম ২.৫)-র সর্ব্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ১৮৩। বাতাসে এই কণার মাত্রা ১৫০–র উপরে উঠলেই তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। তবে তাঁদের মতে, নভেম্বরের তুলনায় এই দূষণ অনেকটাই কম। দিল্লিতে নভেম্বরে এই মাত্রা উঠেছিল ৬০০-র কোঠায়!

দূষণের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ করানোয় খেলার উদ্যোক্তা ও দিল্লি সরকারের সমালোচনায় সরব হয় জাতীয় পরিবেশ আদালত।

এ দিন আদালতের প্রশ্ন, এই সপ্তাহে দিল্লির পরিবেশ আগে থেকেই খারাপ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? পাশাপাশি রাজধানীর দূষণ রুখতে অরবিন্দ কেজরীবালের সরকার কেন এখনও সার্বিক পরিকল্পনা জমা দেয়নি, তা নিয়েও সরব হয় আদালত। আগামী দু’দিনের মধ্যে বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে রাজ্য সরকারকে।

দিল্লির দূষণ নিয়ে এ দিন খোঁচা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নবান্নে তিনি বলেন, ‘‘এখন দেখছেন তো দিল্লির মতো জায়গায়, ভারতের রাজধানী, সেখানে শ্রীলঙ্কার মতো টিম মাস্ক লাগিয়ে খেলেছে। দূষণ এত বেড়ে যাচ্ছে, এটা দিল্লির নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। সবাই মিলে বসে একটা কিছু করা উচিত।’’ তাঁর মতে, দেশের পক্ষেও এটা মঙ্গলজনক নয়। দেশের বদনাম হতে দেওয়া উচিত নয় কখনও। মমতা বলেন, ‘‘একটা আন্তর্জাতিক খেলায় যদি মাস্ক লাগিয়ে খেলতে হয়, সেটা দেখতেও খারাপ লাগে। আমি খুব লজ্জিত বোধ করছি বলে বললাম কথাটা, না হলে বলতাম না। এটা কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটা বাস্তব সমস্যা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন