ডিজিটাল ভারত, নয়া মন্ত্রে ঝাঁপাতে চান মোদী

এখন আছি ই-গভর্ন্যান্সে। এর পর পৌঁছতে হবে এম-গভর্ন্যান্সে। এম-গভর্ন্যান্স? বক্তা নিজেই এ বার মুচকি হেসে রসিকতা করলেন, ‘‘এই ‘এম’ কিন্তু মোদী নয়, মোবাইল!’’ ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র মঞ্চে বুধবার এমনই দুরন্ত মেজাজে ছিলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০৩:২১
Share:

ডিজিটাল সপ্তাহের সূচনায় নরেন্দ্র মোদী। বুধবার দিল্লিতে।

এখন আছি ই-গভর্ন্যান্সে। এর পর পৌঁছতে হবে এম-গভর্ন্যান্সে। এম-গভর্ন্যান্স? বক্তা নিজেই এ বার মুচকি হেসে রসিকতা করলেন, ‘‘এই ‘এম’ কিন্তু মোদী নয়, মোবাইল!’’

Advertisement

‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র মঞ্চে বুধবার এমনই দুরন্ত মেজাজে ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এক দিকে তথ্যপ্রযুক্তির মানচিত্রে আগামী ভারতের পথ বেঁধে দিচ্ছিলেন, অন্য দিকে চলছিল স্বভাবসিদ্ধ রসিকতা। আর সেই সময়ে কে ছিলেন না শ্রোতাদের মধ্যে! মুকেশ অম্বানী, আজিম প্রেমজি থেকে সাইরাস মিস্ত্রি— নতুন ভারতের খোঁজে মোদীর প্রয়াসে সাড়া দিয়েছেন সকলেই। মিলেছে বিপুল বিনিয়োগের আশ্বাসও।

মোদী বুঝিয়ে দিয়েছেন, দেশের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এবং পঞ্চায়েতগুলি নিয়ে যে ত্রিস্তরীয় শাসন ব্যবস্থা, তার ভোল পাল্টে দিতে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। খুব সোজা ভাষায় বলতে গেলে, দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে যাবতীয় সরকারি কাজকর্মকে ডিজিটাল পরিকাঠামোয় জুড়ে দেওয়াই এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। সহজ হয়ে যাবে শিল্প-বাণিজ্যের রাস্তাটাও। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে প্রত্যন্ত গ্রামের পঞ্চায়েতও ডিজিটাল যোগসূত্রে সম্পর্ক গড়ে তুলবে বাকি পৃথিবীর সঙ্গে। ২০১৯-এর মধ্যে আড়াই লক্ষ গ্রাম যুক্ত হবে টেলি-যোগাযোগ আর ইন্টারনেটে।

Advertisement

এমন পরিকল্পনার প্রাযুক্তিক ও বাণিজ্যিক ভিতটাও হতে হবে শক্ত। সে কথা মাথায় রেখেই আজ থেকে দেশে ডিজিটাল সপ্তাহের সূচনা করলেন মোদী। লক্ষ্য— ডিজিটাল জগতে বিনিয়োগের পথ খোঁজা। তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, ২০২০ সালের মধ্যে এই ক্ষেত্রে প্রযুক্তি আমদানিকারক দেশের তকমাটা অর্জন করতে হবে ভারতকে। তাই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’য় যে ভাবে জোর দিয়েছেন মোদী, সেই একই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছেন ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র কর্মকাণ্ডে।

এ দিন ইন্দিরা গাঁধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে নতুন ভারত নিয়ে তাঁর ভাবনা ও স্বপ্নকে তুলে ধরেছেন মোদী। বলেছেন, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সরকারি কাজ হবে স্বচ্ছ। হাইস্পিড ডিজিটাল হাইওয়ে জুড়বে গোটা দেশকে। তথ্য-প্রযুক্তি ও এই ক্ষেত্রের কর্মীরা আর বিদেশ থেকে আসবেন না— ভারতকেই পুরোপুরি স্বাবলম্বী হতে হবে। ব্যাঙ্কগুলি হয়ে উঠবে কাগজহীন। আর ই-পরিষেবা পৌঁছে যাবে দেশের দরিদ্র মানুষের কাছেও।

স্বপ্নের ডানা ভাসিয়ে দিলেও বাস্তব পরিস্থিতিটা কিন্তু ঘোরালো। সে কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের অন্য দেশগুলির নিরিখে ইন্টারনেটের স্পিডে এই মুহূর্তে ১১৫তম স্থান ভারতের। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে, নতুন দিন আনতে তাই শিল্পপতিদের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের শিল্পমহল বিপুল সাড়াও দিয়েছে। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রি জানিয়েছে, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কর্মসূচিতে আড়াই লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তারা। মুকেশ অম্বানীর মন্তব্য, ‘‘সাধারণ ভাবে কাজের ক্ষেত্রে শিল্প মহল সরকারের থেকে এগিয়ে থাকে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই যে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারই অনেক এগিয়ে যাচ্ছে।’’ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পরিকল্পনার সমর্থনে এগিয়ে এসেছে মাইক্রোসফট। কুমারমঙ্গলম বিড়লা জানিয়েছেন আগামী পাঁচ বছরে সাতশো কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চলেছেন তাঁরা। উইপ্রো চেয়ারম্যান আজিম প্রেমজি, টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি, এয়ারটেলের সুনীল ভারতী মিত্তল, রিলায়্যান্সের অনিল অম্বানীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এখানেই মোদীর দাবি, ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে, চাকরি হবে ১৮ লক্ষ মানুষের।

আগামী ভারতের কথা বোঝাতে আজকের শিশুদের কথা টেনে আনেন মোদী। তাঁর মন্তব্য, চশমা কিংবা কলম হাতে দিন, এখনকার বাচ্চারা ছুঁয়েও দেখবে না। ওরা আগ্রহী আপনার মোবাইলটা নিতে। তা হলেই দেখুন, শিশুরাও এখন বুঝছে ডিজিটালের শক্তি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন