Ceasefire Violation

লাগামছাড়া হিংসা, কাশ্মীরে শেষ সাত দিনে ৬০ বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করল পাক সেনা

সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা প্রথম নজরে আসে ২০১৭ সালে। ২০১৬ সালে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল ৪৪৯টি। ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা প্রায় দু’গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭১। আর ২০১৮ সালে সংঘর্ষবিরতি  লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৯৩৬, যা গত ১৫ পনেরো বছরে সর্বোচ্চ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ১৫:৪৮
Share:

পাক গোলাগুলিতে বিধ্বস্ত কাশ্মীরি গ্রাম। ফাইল চিত্র।

পুলওয়ামা নাশকতার পর গত এক সপ্তাহে জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়্ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতকে লক্ষ্য করে হামলার তীব্রতা আরও বাড়াল পাক সেনা। শেষ সাত দিনেই ৬০ বার সংঘর্ষবিরতির ঘটনা ঘটেছে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর। শুধু সেনা ঘাঁটি নয়, এই আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কাশ্মীরের সাধারণ গ্রামবাসীরাও। শুক্রবার কাশ্মীরি গ্রাম কৃষ্ণাঘাটিতে পাক গোলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে একটি বাড়ি। ঘুমিয়ে থাকা অবস্থাতেই মৃত্যু হয়েছে ২৪ বছরের এক কাশ্মীরি গৃহবধূ ও তাঁর দুই নাবালক সন্তানের।

Advertisement

জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, বেছে বেছে ভারতীয় গ্রাম লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে পাক সেনা। শুধু গুলি নয়, ছোড়া হচ্ছে মর্টার বোমা এবং হাউইতজার ১০৫ মিমি গোলাও। নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে সালোত্রি গ্রামে পাক আক্রমণের তীব্রতা ছিল সব থেকে বেশি। শুক্রবার পুঞ্চের মানকোটে এলাকায় গুলি বিনিময়ের মধ্যে পড়ে গুরুতর জখম হন এক স্থানীয় মহিলা। মানকোটে এবং সালোত্রি ছাড়াও পাক হামলা চলছে কৃষ্ণঘাটি এবং বালাকোটের দিকে লক্ষ্য করে। গত সাত দিন ধরেই অবাধে গোলাবর্ষণ চলছে বলে জানিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে পুঞ্চ ও রাজৌরিতে নিয়্ন্ত্রণরেখার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরতে নিষেধ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

Advertisement

এই গ্রামগুলিকে তাক করেই লাগাতার গোলাবর্ষণ করছে পাক সেনা।

পুলওয়ামা কাণ্ডের পর পাক সেনার তরফে আগ্রাসন চরমে পৌঁছলেও তার আগেও সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় খুব একটা পিছিয়ে ছিল না পাক সেনা, কিছু দিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে মিলছে এই তথ্য। দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮, এই তিন বছরে জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাক সেনার তরফে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ছ’গুণ। শুধু ২০১৮ সালেই প্রায় ৩০০০ বার বিভিন্ন ভারতীয় গ্রাম ও সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছুড়েছে পাক সেনা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সেনা এবং সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও। গত মাসেই সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন এই তথ্য সামনে আনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরে সময়ের সঙ্গে কী ভাবে বেড়ে চলেছে পাক আগ্রাসনের ঘটনা। নিয়ন্ত্রণরেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত, দুই রেখা জুড়েই বাড়ছে পাক তাণ্ডবের ঘটনা, এমনটাই জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

আরও পড়ুন: মুখে শান্তির কথা বললেও কাশ্মীর সীমান্তে রাতভর গোলা ছুড়ল পাকিস্তান, নিহত এক মহিলা, দুই শিশু

পুলওয়ামা কাণ্ডের বেশ কিছু দিন আগে থেকেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখার ও পারে বাড়াবাড়ি রকমের তৎপর হয়ে উঠেছে পাক সেনা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক প্রকাশিত তথ্য থেকে উঠে আসছে এই বক্তব্যই।

সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা প্রথম নজরে আসে ২০১৭ সালে। ২০১৬ সালে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল ৪৪৯টি। ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা প্রায় দু’গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭১। আর ২০১৮ সালে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৯৩৬, যা গত ১৫ বছরে সর্বোচ্চ।

পাক সেনার আক্রমণের লক্ষ্য সাধারণত সেনাঘাঁটি থাকলেও গত কয়েক বছরে পাক গোলাগুলি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কাশ্মীরিরাও। পুলওয়ামা কাণ্ডের পরও প্রতিদিনই আসছে পাক গোলায় মৃত্যুর খবর। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষী এবং ভারতীয় সেনার জওয়ান, সাধারণ মানুষ, গত কয়েক বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রেই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

২০১৫ থেকে ২০১৮, এই চার বছরে পাক হামলায় ভারতীয় জওয়।নদের মৃত্যুর সংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮। অন্য দিকে সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর সংখ্যাও এই চার বছরে ১৬ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২। জম্মু, কাঠুয়া, পুঞ্চ, রাজৌরি, সাম্বা, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এই অঞ্চলেই বেশি তৎপর পাক সেনা , এমনটাই জানাচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া এই নথির মধ্যে অবশ্য পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি, বা কাশ্মীরি সন্ত্রাসবাদী দ্বারা পরিচালিত নাশকতার ঘটনাগুলি রাখা হয়নি। এই তথ্য শুধুই পাক সেনার হামলার প্রেক্ষিতে। তাই পুলওয়ামা সন্ত্রাসের মতো তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ পাকিস্তানের সামনে নেই। এই ঘটনাগুলিতে ঘুরপথে নয়, সরাসরি অভিযুক্ত পাক সেনা। এখানেই উঠছে প্রশ্ন, কারণ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের উদ্দেশে একটাই বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শান্তি আর ভারতের সঙ্গে আলোচনাই সেই বার্তার মূল সুর। বায়ুসেনার আটক কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় প্রশংসিত হয়েছেন ইমরান। কিন্তু পাক প্রধানমন্ত্রীর কথা আর পাক সরকারের কাজে কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি পাক প্রধানমন্ত্রীর মুখে শান্তির বাণী আর পাক সেনার হাতে বন্দুক, এটাই নয়া পাক কৌশল? নাকি পাকিস্তানের ট্রাডিশন মাফিক ইমরানও আসলে পাক সেনার হাতের পুতুল, উঠছে সেই প্রশ্ন।

আরও পড়ুন: রাজনীতির ছকে নয়, ক্রিকেটীয় স্টাইলে চক্রব্যূহ থেকে বেরোলেন ইমরান

তথ্যসূত্র: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন