অভিনন্দন বর্তমান। ফাইল চিত্র।
দেশে ফিরছেন অভিনন্দন বর্তমান। ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার। ওয়াঘা সীমান্তে সাজ সাজ রব। গিয়েছেন তাঁর বাবা-মা। ফিরে আসছেন অভিনন্দন।
ভাইয়ের জন্য লিখেছেন বোন অদিতি, এমনটা জানিয়ে একটি কবিতা পোস্ট হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। পোস্ট হতেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, বরুণ রাম আয়ার নামে অন্য এক ব্যক্তি লিখেছেন ওই কবিতা। ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, এটা তাঁরই লেখা। কিন্তু অভিনন্দনের বোনের নামেই ঘুরছে কবিতাটি।
আসলে অভিনন্দনকে পাক সেনা গ্রেফতার করায় ভেঙে পড়েছিলেন বরুণ। তাই লিখেছিলেন কবিতাটি। বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত অফিসার বাবা আর যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় কাজ করে যাওয়া সাহসী মা। ওঁদের ছেলে যে সুখোই-৩০ বা মিগ-২১ নিয়ে আকাশে উড়বে, তাতে আশ্চর্য কী!
বরুণের লেখা কবিতাটির ভাবানুবাদ
‘রক্ত ঝরছিল আমার সেই ভাইয়ের নাক-মুখ থেকে, দেশকে বাঁচাতে নিয়্ন্ত্রণরেখা পেরিয়েছে ও।
ও এক নির্ভীক অফিসার।
ভাইকে ধরে ফেলল ওরা, থেঁতলে দিল ওর মুখ, তার পর এক দল সেনা এল অন্য দেশের, কোথায় যেন নিয়ে গেল ওকে।
জিজ্ঞেস করল, ‘কে তুমি?’ ও বলল, ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট।
দেশপ্রেমের দৃঢ় চাহনি ওর হার না মানা মুখে,
সেই মুখ দেখতেই জড়ো হচ্ছিল অনেকে।
যুদ্ধের দামামা বাজছে চারদিকে, নির্বোধ কিন্তু ভয়ানক সেই দামামার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
রক্ত ঝরছে আমার ভাইয়ের নাক-মুখ থেকে, তবুও একচিলতে হাসি মুখে নিয়ে ও দাঁড়িয়ে রয়েছে দৃপ্ত ভঙ্গিতে।
সাহস কি অনলাইনে কেনা যায়? অ্যামাজন প্রাইমে একরাতেই মেলে নাকি এমন দৃঢ়তা? সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম তৈরি বা ইজিচেয়ারে বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময় কি আজ সত্যিই রয়েছে?
আমার ভাইয়ের নাক-মুখ থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে সমানে।
অভিনন্দন, তোমাকে কি সাহসের ধন্যবাদ দেব? তুমি তোমার জাত চিনিয়ে দিয়েছ জানো, আরও একটু বেশি কিছু বোধহয় তোমার পাওনা ছিল।
আসলে আমাদের সত্যিই ধারণা নেই শত্রুর ডেরায় প্যারাশুট নিয়ে নেমে পড়া, যুদ্ধ করার মানেটা আসলে কী?
চোখমুখে রক্ত লেগে তোমার, সেই তুমি আচ্ছাসে একটা শিক্ষা দিলে বটে আমাদের।
এ রকম ঝড়ের গতিতে বিমান চালালে, একটুও কাঁপলে না তুমি?
মৃত্যু কি সামনেই? গোঁফের ফাঁকে উঁকি মারা একফালি হাসি তা একবারও বুঝতে দিল না।
আসলে মানুষের মতোই আচরণ করেছ তুমি,
বোধ বলে কিছু বেঁচে থাকলে একটা মানুষের কেমন হওয়া উচিত তা আমরা বুঝতে পারব হয়তো।
এ ভাবেই মাথাটা উঁচু করে রাখ তুমি, রক্তমাখা সেই মুখে চারপাশে দেখ আরও একবার।
তোমাকে স্যালুট, সারা জীবন তোমাকে মনে রাখব। মনে রাখবে মানুষ।
আর একটু অপেক্ষা কর, আমরা আসছি, খুব তাড়াতাড়ি আসছি তোমায় বরণ করে ফিরিয়ে নিতে।
সূর্যের বোধহয় খুব কাছেই ছিলে তুমি, যখন হাতে ছিল মিগ বাইসনের ভার।
এই কবিতা তুমি আর তোমার মতোই আর পাঁচ জনের প্রতি, যারা বুলেটে বুক পাতে আমাদের জন্য।
দিন শুরুর নতুন সূর্য আলো দেয় যেমন। তেমনটাই আলোকোজ্জ্বল তোমার সাহসের ছটা।
বরুণের পোস্ট।
আরও পড়ুুন : আকাশযুদ্ধে ঠিক কী ভাবে বুড়ো মিগ হারিয়ে দিল এফ ১৬-কে? দেখে নেওয়া যাক